প্রতীকী ছবি।
কত আর বয়স হবে। বনকর্মীদের দাবি, খুব বেশি হলে মাস চারেক। টানা ছুটতেও পারে না, টলমল পায়ে মাঝেমধ্যেই পড়ে যায়। সেই একরত্তি হস্তিশাবকের লেজ টেনে ধরে আছে এক দু’জন। ভয়ে শাবকটি ছুটে পালাতে চেয়েও পারছে না। ব্যাথায়, ভয়ে মুখ দিয়ে শব্দ করছে। যখন ভারসাম্য হারিয়ে শাবকটি পড়ে যাচ্ছে তখন গাছের ডাল দিয়ে মারা হচ্ছে, ঢিল ছোঁড়া হচ্ছে। গোটা দৃশ্য মোবাইলে বন্দি করছে ভিড় করে থাকা কিছু লোক। একরত্তি শাবকটির অসহায় অবস্থা দেখে হেসে লুটিয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। জলপাইগুড়ির পানবাড়ি এবং বামনডাঙায় এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে সোমবার ভোরে। অভিযোগ, দলছুট হয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়া একটি হস্তিশাবকের উপর অমানুষিক অত্যাচার চালিয়েছে একদল বাসিন্দা। দলছুট হওয়া ওই শাবকটি দিনভর গরুমারা লাগোয়া লোকালয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। সন্ধ্যা নামার আগে সেটিকে পানবাড়ির নৌকাবিহারের ঘাট লাগোয়া কদমবনে দেখা গিয়েছে। এ দিন বনকর্মীদের সামনেই হস্তিশাবকের ওপর অত্যাচার চলেছে। এক বনকর্মীর কথায়, “দলে দলে লোক আসে, আমরা বাধা দিতে গেলে আমাদের ওপরে অনেকে তেড়ে আসে। বাচ্চা হাতিটি পাল্টা হামলা চালাতে পারবে না বুঝেই লোকজন হামলে পড়ে। হাতিটির ওপর অত্যাচার দেখে চোখে জল চলে এসেছিল।”
জলপাইগুড়িতে হস্তিশাবকের ওপরে অত্যাচারের ভিডিয়ো ছবি মনে করিয়ে দিয়েছে কিছুদিন আগে কেরলে বাজি ভরা আনারস খেয়ে এক গর্ভবতী হাতির মৃত্যুর ঘটনা।
ঘটনার শুরু এ দিন ভোর পাঁচটায়। দলছুট একটি হস্তিশাবক বামনডাঙা চা বাগান এলাকায় চলে আসে। সেখানে একটি আলু খেতে ভোর থেকে একদল বাসিন্দা কাজ করছিলেন। হস্তিশাবকটি আলু খেতে চলে এলে সেটিকে ঘিরে ধরা হয় বলে অভিযোগ। কয়েকজন গিয়ে পেছন থেকে সেটির লেজ টেনে ধরে। হাতিটি ছুটে পালাতে চাইলেও লেজ ধরে থাকায় পারেনি। যন্ত্রণায় গোঙাতে থাকে। তারপরেও সেটির ওপরে অত্যাচার চলতে থাকে। কেউ এসে পেছন থেকে কান টেনে দেয়, কেই আধলা ইটের টুকরো ছুঁড়ে মারে ছোট্ট হাতিটির গায়ে। কোনমতে পালিয়ে জলঢাকা এবং ডায়না দুই নদী পার হয়ে এ দিন সকালেই পানবাড়ি চলে আসে হস্তিশাবকটি। খবর পেয়ে রামসাই স্কোয়াডের কর্মীরা যায়। হস্তিশাবককে উদ্ধারের জন্য নিয়ে আসা হয় কুনকি হাতিও। জলপাইগুড়ির বন্যপ্রাণী বিভাগের ডিএফও নিশা গোস্বামী বলেন, “অনেক লোক হস্তিশাবকটিকে ঘিরে ধরেছিল। বনকর্মীদের তখন কিছুই করার উপায় ছিল না, তবে ওরাই হস্তিশাবকটিকে সেখান থেকে বের করে দিতে পেরেছে। হস্তিশাবকটি এখনও জঙ্গলে ফেরেনি, দলেও ফিরতে পারেনি। নজর রাখা হয়েছে। যারা হস্তিশাবকটির ওপর অত্যাচার করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ হবে।”
কুনকি হাতি দিয়ে তাড়িয়েও একরত্তি শাবকটিকে জঙ্গলে ফেরানো যায়নি সোমবার সন্ধ্যে পর্যন্ত। খুদে হাতিটি কোথায় গিয়ে ফের কোন বিপদে পড়বে সেটাই চিন্তা বনকর্মীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy