প্রতীকী ছবি
লাইফ জ্যাকেট গায়ে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর স্পিড বোটে বসে রয়েছেন শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী গোলাম রব্বানি, জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য, পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, ডুবুরিরা কেমন কাজ করছেন, তা দেখতে ঘাট থেকে রওয়ানা হওয়ার আগে পাড়ে দাঁড়িয়ে সাংসদ খগেন মুর্মু চিৎকার করে উঠলেন, ‘‘মন্ত্রী সাহেব, ওই যে ওদিকটায় দহ (নদীর গর্ত) আছে। বাহিনীর কর্মীদের ওদিকটায় যেতে বলুন।’’ মন্ত্রী মাথা নাড়লেন। জেলাশাসককেও চিৎকার করে কী একটা বলতে চাইলেন। কিন্তু দু’পাশের ভিড়ের প্রবল আওয়াজে সাংসদের গলায় আক্ষেপ, ‘‘আরে ডিএম সাহেব তো কিছু শুনতেই পাচ্ছেন না!’’
তখনই কয়েক হাত দূরে প্রবল হইচই। সেখানে ছুটতেই কয়েক জন বলে উঠলেন, ওই যে, কী যেন ভেসে উঠেছে! কিছুক্ষণ বাদে ডুবুরিরা যা তুলে আনলেন, সেটা একটা সাইকেল।
নদীর দু’পাশে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। পাশের কাউকে কিছু বলতে হলে চিৎকার করে কথা বলতে হবে। ভিড়ের চাপে তৈরি হচ্ছে চরম বিশৃঙ্খলাও। ডুবুরি, এনডিআরএফকে পাড় থেকে নানা পরামর্শ ছুড়ে দেওয়া হচ্ছে ভিড় থেকে। তাতে বিভ্রান্ত হয়ে কাজে ব্যাঘাতও ঘটছে। যা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ পুলিশ।
নৌকাডুবির পরদিন চুম্বকে এটাই ছিল মালদহের চাঁচলের জগন্নাথপুর ঘাটের ছবি। বৃহস্পতিবার রাতেই উদ্ধার হয়েছিল তিন জনের দেহ। এ দিন দুপুরে উদ্ধার হয় আরও এক বালিকার দেহ। এ ছাড়া মিলেছে তিনটি মোটরবাইক, দু’টি সাইকেল। কিন্তু সারাদিন তল্লাশি চালিয়েও ডুবে যাওয়া নৌকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত চার জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও চার জন নিখোঁজ। প্রশাসনের তরফে সব রকম চেষ্টা চলছে নিখোঁজদের উদ্ধারে।’’
চাঁচলের জগন্নাথপুরঘাট থেকে ওপারে উত্তর দিনাজপুরের মুকুন্দপুরে যাওয়ার সময় বৃহস্পতিবার রাতে মাঝ মহানন্দায় উল্টে যায় যাত্রীবোঝাই নৌকা। রাতেই দুই মহিলা-সহ তিন জনের দেহ উদ্ধার হয়। খবর পেয়েই এলাকায় যান জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, মহকুমাশাসক, মন্ত্রী গোলাম রব্বানি এবং মহকুমা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। এ দিন সকালে এলাকায় যান সাংসদও। সারারাত জেগে এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ছ’জনকে উদ্ধার করা হয়। তাঁরা কোনও রকমে পাড়ে এসেছিলেন। এ ছাড়া সাঁতরে ওঠেন আরও ১২ জন যাত্রী। তাঁরা আপাতত সুস্থ আছেন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতরা হল, তামান্না পারভিন (৭), হাজেরা বিবি (৬৫), মাজেদা (৪২) ও বেঙাই (৮০)। প্রথম দু’জন চাঁচলের মল্লিকপাড়া, হাজেরা হরিশ্চন্দ্রপুরের বেজপুরা ও বেঙাই বিহারের বারসইয়ের বাসিন্দা।
সরকারিভাবে চার জন নিখোঁজ বলা হলেও তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে এলাকায়। কেন না, নৌকায় ৪০ থেকে ৫০ জন যাত্রী ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে প্রশাসনও জানতে পেরেছে। তাদের মধ্যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধার হয়েছেন ১৮ জন। আর চার জন নিখোঁজ ধরলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ২৬-এ। তা হলে বাকি যাত্রীরা কোথায়?
প্রশাসনের দাবি, নৌকায় বিহারের অনেক বাসিন্দাও ছিলেন। ফলে তাঁরা জল থেকে উঠে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন— এমনটা হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। প্রশাসনের কাছে যাঁরা পরিজনদের নিখোঁজ থাকার কথা জানিয়েছেন, তার ভিত্তিতেই ওই সংখ্যার কথা জানাচ্ছে প্রশাসন। রব্বানি বলেন, ‘‘প্রশাসনের গাফিলতি নেই। নিখোঁজদের খোঁজ চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy