গঙ্গার দিকে চেয়ে আতঙ্কেই দিন কাটে প্রভাবতীদের। নিজস্ব চিত্র।
এক দশক আগেও আড়াই বিঘা জমি ছিল তাঁদের। তার দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ হত। সঙ্গে ছিল এক ফালি আম বাগান। বাকি অংশে ঘরবাড়ি। বাড়ি বলতে টিনের চাল দেওয়া দু’টি ঘর। জমির ফসল বিক্রি করেই সংসার টেনেটুনে চলে যেত। তিন বারের ভাঙনে সেই আড়াই বিঘা জমির বেশির ভাগ অংশই গিলেছিল গঙ্গা। বাকি সামান্য অংশে স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকছিলেন মালদহের পার অনুপনগরেরপ্রভাবতী মণ্ডল।
তিন বছর আগে, বাড়ির সামনেই ‘বোল্ডার’ ফেলে ভাঙন রোধের কাজ হওয়ায় ভেবেছিলেন আর বুঝি বাড়ি সরাতে হবে না। কিন্তু গঙ্গার এমনই প্রতাপ, যে এ বারের বর্ষায় সে ‘বোল্ডার’ও গঙ্গা গিলেছে। শুধু তাই নয়, এ বারে গঙ্গা প্রভাবতীর ঘরের দোরে ঢুকে ভিটে মাটিটুকুও গিলে নিয়েছে। ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব প্রভাবতী এখন আশ্রয় নিয়েছেন কাছেই অন্যের একফালি জমিতে। সেখানে ত্রিপল টাঙিয়ে আর বাঁশের চাটাই দিয়ে কোনও রকমে একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন। এখন সপরিবারে সেখানেই বাস করছেন প্রভাবতী। স্বামী পঙ্কজকে এখন অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজে নামতে হয়েছে। এমন পরিণতির কথা ভাগ করে নিতে গিয়ে চোখ ভিজে ওঠে প্রভাবতীর।
তবে এখন অন্যের যে জমিতে রয়েছেন, সেখান থেকেও গঙ্গা দেখা যায়। শুখা মরসুম শুরু হয়ে গিয়েছে। গঙ্গার জলস্তর নেমে গিয়েছে অনেকটাই। কিন্তু এ জমিতেও আগামী বছর টিকে থাকতে পারবেন কি না, জানেন না প্রভাবতী। তাঁর আশঙ্কা, আগামী বর্ষায় এই অস্থায়ী আস্তানারও বিসর্জন হয়ে যাবে না তো!
নতুন বছরের প্রভাতে প্রভাবতীর আর্জি, সরকার বাহাদুর যেন পারদেওনাপুর-শোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাঙন কবলিত এলাকাগুলি রক্ষা করার ব্যবস্থা করে আর তাঁদের মতো ভাঙনে ভিটেমাটি-হারিয়ে নিঃস্ব পরিবারগুলির পুনর্বাসনের অন্তত ব্যবস্থা করে। যাতে, মাথা গোঁজার মতো একটা স্থায়ী আস্তানা তাঁরা পেতে পারেন।
প্রভাবতীর ভাঙা জীবনের এই করুণ সুর শুধু পার অনুপনগরেই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে না, সেখান থেকে গঙ্গার উজানে ফরাক্কা ব্যারাজ হয়ে বীরনগর থেকে শুরু করে ভুতনি এবং রতুয়ার জঞ্জালিটোলা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ মালদহ জেলার প্রায় ৬৫ কিলোমিটার ভাঙন কবলিত এলাকায় একই সুর শোনা যায়। বীরনগর ১ পঞ্চায়েতের চিনাবাজার গ্রামের ৬২ বছরের বৃদ্ধা রঙ্গিলা বেওয়া বলেন, ‘‘গঙ্গায় চারটে পাকা ঘর-সহ ভিটেমাটি হারিয়ে আমি এখন প্রতিবেশী এনামুল হকের আম বাগানের একফালি অংশে ছেঁড়া ত্রিপলের ছাউনি আর খড়ের বেড়া দেওয়া ছোট্ট একটা আস্তানায় থাকছি। বৃষ্টি হলেই ঘরের ছাউনির ছেঁড়া ত্রিপলের অংশ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়ে।’’ তাঁর আফসোস, চিনাবাজারের গঙ্গা ভাঙন দুর্গত অনেকেই পুনর্বাসন হিসেবে সরকারের থেকে বীরনগর ফুটবল ফিল্ডে জমির পাট্টা পেলেও, তাঁর এবং পরিবারের সদস্যদের কপালে একটিমাত্র ত্রিপল ছাড়া আর কিছুই জোটেনি!
তবুও নতুন বছরের শুরুতে তিনি নতুন দিন দেখার অভিলাষী। রঙ্গিলা বলেন, ‘‘নতুন বছরে যদি সরকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy