সীমান্তের গ্রামে রাতে পড়াশোনায় সাহায্য বিএসএফের। নিজস্ব চিত্র sandipabp4@gmail.com
রাত নামলেই সীমান্তের গ্রামে গ্রামে ঢুকছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) ঘন সবুজ রঙের গাড়ি। গাড়ি থেকে নামছেন অফিসার। যদিও হাতে ধরা বই, কলম। গ্রামের মাঠে ত্রিপল বিছিয়ে শুরু যায় ‘স্কুল’। আশেপাশের দু’তিনটে গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো শুরু করেছেন বিএসএফ অফিসারেরা। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বেরুবাড়ির খেকিরডাঙ্গা গ্রামে সপ্তাহে তিন-চার দিন শীতের সন্ধ্যার পরে এমন ‘স্কুল’ বসাচ্ছে বিএসএফ।
গ্রামগুলি সবই কাঁটাতারের সীমান্তের ওপারে। এক দিকে, মূল ভারত ভূখন্ড আগলে কাঁটাতারের বেড়া। অন্য দিকে, উন্মুক্ত বাংলাদেশ। মাঝে কয়েকটি ভারতীয় গ্রাম। বাংলাদেশে পরিবর্তনের পরেই জলপাইগুড়ির এই উন্মুক্ত সীমান্তে জড়ো হয়েছিল শয়ে-শয়ে বাংলাদেশি নাগরিক। সম্প্রতি উন্মুক্ত এই সীমান্ত পেরিয়ে এসেই বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা বিএসএফের উপরে হামলাও চালায়।
হঠাৎ সীমান্তের গ্রামে বিএসএফ রাতে ‘স্কুল’ শুরু করল কেন?
বিএসএফের দাবি, সীমান্ত এলাকায় পড়ুয়াদের খাতা, কলম, বই বিলি-সহ জনকল্যাণের কাজ সারা বছরই চলে। গত অগস্টে বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়। পুজোর পরে থেকে ভারত বিদ্বেষ চরমে ওঠে বাংলাদেশে। সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন শিরোনামে। সেই আবহেই সপ্তাহখানেক ধরে বিএসএফ উন্মুক্ত সীমান্তের গ্রামে রাতে গিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াতে বসাচ্ছে।
সাধারণ জওয়ানেরা নন, বিএসএফের চাণক্য সীমান্ত চৌকির দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার মনোজ কুমার নিজেই খেকিডাঙ্গা গ্রামে এবং কালিন্দী পাড়ায় গিয়ে ইংরেজি্ পড়াচ্ছেন। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়ানো হচ্ছে। কালিন্দীপাড়ার গ্রামে পড়়ুয়াদের মুখে মুখে বিএসএফের স্কুলগুলি ‘কাকার স্কুল’ নামেও পরিচিত হয়েছে।
হঠাৎ এমন উদ্যোগের পিছনে জনসংযোগ এবং উন্মুক্ত সীমান্ত পাহাড়ার কৌশলই রয়েছে বলে দাবি। সাধারণত সন্ধ্যা সাড়ে ছটার পরে কাঁটাতারের বেড়ার গেট বন্ধ হয়ে যায়। তার পরে বাংলাদেশের দিকে থাকা ভারতীয় গ্রামগুলি কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সেই সুযোগে চোরাকারবার থেকে অনুপ্রবেশ সবই চলে বলে অভিযোগ। বর্তমান পরিস্থিতিতে জঙ্গিদের ঢুকে পড়াও অসম্ভব নয় বলে মনে করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। এই পরিস্থিতিতে রাতে বিএসএফের অফিসাররা গ্রামে দীর্ঘক্ষণ থাকলে নিরাপত্তা যেমন জোরদার হবে তেমনই হবে জনসংযোগ।
খেকিরডাঙার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য সামুয়েল হক বলেন, “বিএসএফের কমান্ডার নিজেই বাচ্চাদের পড়াতে আসছেন। উনি বলেছেন, মেয়েরা আলাদা পড়তে চাইলে মহিলা বিএসএফদেরও পড়াতে পাঠাতে হবে। বাচ্চাদের ভালই হচ্ছে। প্রথমে একটা দু’টো ক্লাস হতো, এখন ক্লাসের সংখ্যা বেডেছে।”
বাংলাদেশে অস্থিরতার পরেই বিএসএফ জলপাইগুড়ির সীমান্তের গ্রামে গ্রামে সন্দেহজনক বা অচেনা ব্যক্তি দেখলে খবর দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। বিএসএফ সূত্রে দাবি, জনসংযোগ ভাল থাকলে ‘খবর’ মিলবে দ্রুত। পড়াশোনায় সহযোগিতা করলে বাবা-মায়েরাও খুশি হবে। যদিও বিএসএফের এক অফিসার বলেন, “সবচেয়ে ভাল খবর থাকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের কাছে। ওরা গ্রামে ইচ্ছেমতো ঘোরে, সব দেখে, সবার কথা শোনে। ওরা গল্পে গল্পে সব কথা বলেও দেয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy