কাঁটাতার নেই। দিনহাটায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এ ভাবেই চলে পাহারা। অন্ধকার নামলে বাড়ে পাচারের শঙ্কা। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
সন্ধে নামলেই বদলে যাচ্ছে সীমান্ত। বাংলাদেশ থেকে দল বেঁধে দুষ্কৃতীরা ঢোকার চেষ্টা করছে ভারতীয় গ্রামে। একদিকে বিএসএফকে ব্যস্ত করে অন্যপাশ দিয়ে তারা ভিতরে ঢুকে যাচ্ছেও বলে অভিযোগ।
কোচবিহারের দিনহাটা থেকে শুরু করে মাথাভাঙা, মেখলিগঞ্জের বাংলাদেশ সীমান্তে এমনই অবস্থা চলছে। শনিবার ভোররাতে শীতলখুচির লালাবাজার থেকে গরু পাচারের অভিযোগে ২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি। তার নাম আব্দুল লতিফ মিয়াঁ। ধৃতদের কাছ থেকে একটি দোনলা বন্দুক উদ্ধার করা হয়। সন্দেহ করা হচ্ছে, সীমান্ত টপকে ওই ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢোকে। সঙ্গে আরও ক’জন ছিল বলেও জেনেছে পুলিশ। ধৃতকে জেরার জন্য পাঁ চদিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বলেন, “আরও তথ্য জানা যাবে বলে আশা করছি।” বাংলাদেশে জঙ্গি হানার পরে যেভাবে নজরদারি শুরু হয়, এর পরেও কীভাবে ওই ব্যাক্তি ভারতে ঢুকতে পারল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিএসএফের এক আধিকারিক বলেন, “অনেকটা জায়গায় কাঁটাতার না থাকার সুযোগ নিয়ে এমনটা হচ্ছে।”
সীমান্তে কড়া পাহারা চললেও কী ভাবে চলছে এই আনাগোনা? বিএসএফ সূত্রের খবর, দিনহাটার গীতালদহ, নাজিরহাট, সিতাই, শীতলখুচি, মেখলিগঞ্জের একাধিক জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। রাত হলে ওই গ্রামগুলিতে কে বাংলাদেশি কে ভারতীয়, তা বোঝার উপায় নেই। ওই সব সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকতে সময় লাগতে পারে বড়জোর দশ থেকে পনেরো মিনিট। বিএসএফের হাতে যা জওয়ান থাকে তাতে গোটা এলাকা মুড়ে ফেলা সম্ভব নয়। সেই সুযোগ কাজে লাগায় দুষ্কৃতীরা। পাহারায় থাকা জওয়ানদের নানা ভাবে বিভ্রান্ত করে ভিতরে ঢুকে পড়ে দুষ্কৃতীরা। দিঘলটারির মতো কয়েক জায়গায় রাতে দল বেঁধে দুষ্কৃতীরা হামলা চালায়। বিএসএফের সঙ্গে লড়াই হয় তাঁদের। বিএসএফের এক আধিকারিক বলেন, “দুষ্কৃতীদের মূল লক্ষ্য পাচার। বিএসএফের উপরে হামলারও সুযোগ খোঁজে তারা।”
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবারও বাংলাদেশে পাচারের আগে সীমান্তে ৩৯টি গরু উদ্ধার করা হয়। ধৃতদের কাছে কাঁটাতার কাটার যন্ত্রও মিেলছে। কিছুদিন আগেই কাঁটাতার কাটার কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছিল। আবার সেই চেষ্টা হচ্ছে। বাসিন্দাদের দাবি, খোলা সীমান্তে কাঁটাতারের ব্যবস্থা না হলে দুষ্কর্ম কমানো সম্ভব নয়।
পাচার রুখতে রাতপাহারা
পাচার রুখতে মালদহের আইহো পঞ্চায়েতের গ্রামে গ্রামে বাসিন্দারা আরজি পার্টি গড়ে রাত পাহারা শুরু করেছেন। বিএসএফের জওয়ানদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাত ১০টা থেকে ভোট ৫টা পর্যন্ত তাঁরা পাহারা দিচ্ছেন। হবিবপুর ব্লকের আইহো পঞ্চায়েতের চাঁদপাড়া গ্রামে ১৪০টা পরিবারের বাস। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে মহানন্দা নদী। নদীর ওপারেই বাংলাদেশের ভোলারহাট গ্রাম। বাসিন্দারা জানালেন, এই চাঁদপাড়া গ্রামেরই আইহো বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে নদীর ঘাট দিয়েই নদী টপকে গরু পাচার করা হয়। বিএসএফের টহলদারি থাকলেও একমাস আগে পর্যন্ত এই রুটই ছিল পাচারকারীদের রমরমা। গ্রামবাসীরা সেই পাচারের বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়িয়েছেন। হবিবপুর থানার পুলিশ এবং মুচিয়া ও সুকনগর বিএসএফ ক্যাম্পের অনুমতি নিয়েই পার্টি গড়া হয়েছে। যাদবনগর, গোলারানিগঞ্জ ও পালপাড়া গ্রামেও আরজি পার্টি হয়েছে। তবে গ্রামবাসীরা বলেন, এই রুটে পাচার বন্ধ হওয়ায় টিলাসনের খোলা সীমান্ত দিয়েই পুনর্ভবা নদী পেরিয়ে দেদার গরু পাচার চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy