পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুভেন্দু অধিকারীর। —নিজস্ব চিত্র।
উত্তরকন্যা যাওয়ার পথে পুলিশি বাধায় আটকে গেলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কোচবিহারের বিধায়ক মিহির গোস্বামী এবং বিজেপির অন্যান্য সদস্যকে নিয়ে উত্তরকন্যা যাওয়ার পথে বাধা পেয়ে পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান শুভেন্দু। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন। কেন উত্তরকন্যা যেতে পারছেন না বিজেপি বিধায়কেরা, প্রশ্ন তোলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক।
শুভেন্দু অভিযোগ করেন উত্তরবঙ্গ সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি সেই ব্যবস্থা দেখতে এসেছিলেন। কিন্তু পুলিশের বাধায় আটকে গিয়েছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে বিজেপি বিধায়ক বলেন, ‘‘কী ভাষা দেখুন! বলছে, বিধায়কদের ঢুকতে দেব না। মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে বিয়েবাড়িতে এসেছিলেন। ছবি তুলতে এসেছিলেন। সচিবালয় কেমন চলছে, দেখতে এসেছিলাম। দেখলাম, মহিলা পুলিশকে নিয়ে এসে দাঁড় করিয়েছে। আমরা তাঁদের মায়ের চোখে দেখি। তাঁদের সঙ্গে যাতে ধাক্কাধাক্কি হয়, সে জন্য তাঁদের লাইন দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।’’
এখন উত্তরবঙ্গে সফরে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মঙ্গলবারই তাঁর ফেরার কথা। অন্য দিকে, মঙ্গলবারই উত্তরবঙ্গের বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা উত্তরকন্যার দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু একটু পরেই পুলিশ এসে তাঁদের আটকে দেয়। বস্তুত, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর সভা রয়েছে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে। পাশাপাশি রাজ্যের বিরোধী দলনেতারও সভার জন্য আবেদন করেছিল বিজেপি। কিন্তু সেই আবেদন পত্রপাঠ নাকচ করে দিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন। শুভেন্দু এনজেপি স্টেশন সংলগ্ন জায়গায় উত্তরবঙ্গের বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে সভা করেন। ওই সভার নাম দেওয়া হয় ‘উত্তরের উত্তরণের খোঁজ’। সভা শেষে বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে প্রতিনিধি দলটি উত্তরকন্যার সামনে পৌঁছনো মাত্র পুলিশের বাধার মুখোমুখি হন। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটি। পুলিশের তরফে জানানো হয়, ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। সেই কারণে উত্তরকন্যায় এই মুহূর্তে প্রবেশ নিষেধ। এর পরেই চলে দীর্ঘ বিতণ্ডা।
শুভেন্দু কটাক্ষ করেন রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তিনি বলেন, ‘‘সুদে-আসলে যদি এই বদলা না নিতে পারি আমার নাম শুভেন্দু নয়। আমি মমতাকে (বিধানসভা ভোটে) হারানো লোক। ওঁকে প্রাক্তন করে ছাড়ব। পৃথিবী গোল।’’ বিজেপি বিধায়ক এ-ও অভিযোগ করেন যে পুলিশকে দিয়ে নানা জায়গায় তাঁকে আটকানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর এক ভাইপোর বিয়ে উপলক্ষে উত্তরবঙ্গ এসেছিলেন। এ নিয়েও তাঁকে খোঁচা দিয়ে শুভেন্দু অভিযোগ করেন, ‘‘বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা থেকে উত্তরবঙ্গ বঞ্চিত। আর মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত।’’
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু বলেন , ‘‘পা-চাটা পুলিশ রয়েছে এখানে। বিধায়কদের (বিরোধী) ঢুকতে দেবে না। এর বিরুদ্ধে এখানকার বিধায়কদের দিয়েই যা করার করব। মমতা ব্যানার্জি বিয়েবাড়িতে এসেছিলেন ছবি তুলতে... উত্তরকন্যা থেকে কোনও পরিষেবা উত্তরবঙ্গের নয়টি জেলার মানুষ পান না। সচিবালয় কেমন চলছে তা দেখার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশ ব্যারিকেড করে মহিলা পুলিশদের লাইন করে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। এর হিসেব সুদে-আসলে না তুলতে পারলে আমার নাম শুভেন্দু অধিকারী নয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা পুলিশকে বলেছিলাম, আমাদের দু’জন লোকাল বিধায়ককে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক। কিন্তু তা-ও দিল না। মমতা ভণ্ডামি প্রকাশ হয়ে যাবে। এ জন্যই ঢুকতে দিল না।’’
শুভেন্দুদের ওই বিক্ষোভের মধ্যে উত্তরকন্যা থেকে বেরিয়ে আসেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি অজিত বর্ধন। পুলিশের সঙ্গে প্রথমে কথা বলে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করেন তিনি। পরে সামনে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী-সহ অন্যান্য বিধায়ককে উত্তরকন্যায় আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু শুভেন্দু সেখান থেকেই ফিরে যান।’’ যাওয়ার সময় অজিতের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আপনার পুলিশ আমাদের আটকেছে। প্রয়োজনে উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশ নিয়ে এসে উত্তরকন্যায় প্রবেশ করব।’’
অন্য দিকে, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি অজিত এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘ব্যারিকেডের বিষয়ে আমি জানতাম না। সেটা শুনেই দফতর থেকে বেরিয়ে এলাম। উনি আগে থেকে কিছু জানিয়েও আসেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy