কালিম্পঙে আবাস-বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছে কেন্দ্র। চলতি বছরের মার্চেই পাঠানো কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে রাজ্যকে এক প্রকার ভর্ৎসনা করা হয়েছে। সোমবার আবার কেন্দ্রের পক্ষ থেকে রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাকে কেন্দ্র করে একাধিক অসঙ্গতির কথা তুলে ধরা হয়। রাজ্য জুড়ে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ দলের সরেজমিন তদন্তে মূলত তিনটি জেলার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা এবং কালিম্পং। কালিম্পঙের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের পাঠানো রিপোর্টে যে সব ‘অসঙ্গতি’র কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, প্রধানমন্ত্রী আবাস থেকে পাওয়া বাড়িতে ‘পিএমএওয়াই-জি’ লোগো নেই। তথ্য বলছে, শুধু কালিম্পং জুড়ে ২০১৭ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত খাতায় কলমে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার প্রায় ৩,০৫০টি ঘর হয়েছে। সেই বাড়িগুলির কোনওটির সামনেই ওই বিধিসম্মত লোগো নেই।
আবাসের ঘর পাওয়াকে কেন্দ্র করে কালিম্পং পুরসভাকে একহাত নিয়েছেন জেলা বিজেপির পাহাড়ের সভাপতি কল্যাণ দেওয়ান। তাঁর অভিযোগ, ‘‘যারা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল, তাঁরা যেমন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বাড়ি পেয়েছেন, তেমনই ঘর পেয়েও কাঠের বাড়ি বানিয়ে রেখেছেন অনেকেই। আবার অনেকের ঘরের টাকা পেয়ে ব্যবসার কাজেও লাগিয়েছেন, এমন উদাহরণও আছে।’’
বিরোধীদের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন কালিম্পং পুরসভার চেয়ারম্যান রবি প্রধান। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও অনিয়ম হয়নি আবাস প্রকল্পে। আবাসের লোগো লাগানোর কথা কোথাও উল্লেখ নেই।’’ এ নিয়ে পাল্টা দার্জিলিং জেলা বিজেপির (পাহাড়) সভাপতি কল্যাণ বলেন, ‘‘কালিম্পং জেলার প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনাকে কেন্দ্র করে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। যাঁরা আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল, তাঁরাও ঘর পেয়েছেন। অনেকে ঘর পেয়ে বিক্রিও করে দিয়েছেন। আবার অনেকের ঘর আজও অসম্পূর্ণ। কেউ আবার ঘরের টাকা অন্য কোনও খাতে খরচ করেছেন।’’ তাঁর দাবি, কেন্দ্রের তদন্তকারী দল যে রিপোর্ট পেশ করেছে তা সত্য। যাঁরা ঘর পাওয়ার যোগ্য তাঁরাই ঘর পাননি। আর কোনও বাড়িতেই লোগো নেই।
কিন্তু পুরসভার দাবি, অস্বচ্ছতার অভিযোগ মিথ্যা। পুরপ্রধান বলছেন, ‘‘অভিযোগ করলেই হবে না। তা প্রমাণ করতে হবে। যাঁরা বাড়ি পাওয়ার যোগ্য তাঁরাই আবাসের ঘর পেয়েছেন।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘ধরুন, বংশপরম্পরায় পাওয়া বড় বাড়ি রয়েছে কারও। কিন্তু তাঁদের ছেলেমেয়েরা বেকার। এখন তাঁদের কোনও বাড়ি নেই। সেই রকম বহু মানুষই আবাস যোজনার ঘর পেয়েছেন। তাই এই সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আর লোগোর প্রসঙ্গ ২০১৭ সাল থেকে ছিল না। এখন হয়েছে। কাজেই যে সব ঘর তৈরি হচ্ছে, তাতে লোগো লাগাব। রাজ্যের হাউসিং ফর অলের নামের কাজ করছি আমরা। আমাদের কাছে ‘হাউস ফর অল’ সার্টিফাই করার নির্দেশ রয়েছে। এমন কোনও কেন্দ্রের নির্দেশ আমাদের কাছে নেই যে, তাদেরই লোগো লাগাতে হবে। কেন্দ্রীয় পোর্টালেও এ নিয়ে কিছু লেখা নেই।’’
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর পেয়েছেন রাজেশ ছেত্রী নামে এক জন। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে আমাদের গ্রামে প্রায় আট থেকে ১০টি বাড়ি আবাস যোজনায় হয়েছে। আমরা কেউ লোগো লাগাইনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাগিয়েও দিয়ে যায়নি। আমরা এ বিষয়ে জানিও না।’’ একই কথা জানালেন গৌরী বরাইলি। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ঘর পেয়েছি। কিন্তু লোগো লাগাতে হবে কি না, জানি না।’’
আবার আবাসের টাকা অন্য কাজে লাগিয়েছেন, এমনটা নিজেই স্বীকার করে নিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আবাস যোজনায় ঘরের জন্য টাকা পেয়েছি। কিন্তু সেই টাকা আমি ব্যবসার কাজে লাগিয়েছি। আমার বাড়ি রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy