ভোগান্তি: যন্ত্রণায় কাতর মেয়েকে নিয়ে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে আসনারা বিবি। ছবি: অভিজিৎ সাহা
পেটের অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছে একরত্তি মেয়ে। মেয়েকে সামলাতে সামলাতে বিড়বিড় করে ভগবানকে ডাকছেন অসহায় মা। চিকিৎসককে বাচ্চাটির কথা জানানো হয়েছে বলে দৌড়ে এসে তাঁকে আশ্বাস দেন দু’জন নার্স। অভিযোগ, এরপর ২৪ ঘণ্টাতেও মেয়েটির কার্যত চিকিৎসাই শুরু হয়নি। সোমবার সকালে এ নিয়ে ক্ষোভ জানালেন ইংরেজবাজারের সাতঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা আসনারা বিবি। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মেয়ের শয্যায় বসে তাঁর বিলাপ, “এখন আমাদের ভরসা আল্লাই। কারণ ডাক্তারদের ডেকে লাভ হচ্ছে না। এখনও তো চিকিৎসাই শুরু হল না।”
সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ এমনই ছবি দেখা গেল ওই হাসপাতালের ফিমেল মেডিসিন বিভাগে। রবিবার সকালে পেটে যন্ত্রণা নিয়ে দশ বছরের মেয়ে সানিয়া তানবীরকে হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে আসেন আসনারা। তিনি বলেন, “২৪ ঘণ্টায় মাত্র দু’বার চিকিৎসক রোগী দেখেছেন। তাও আবার দায়সারা ভাবে রোগী দেখেছেন। মেয়ের ব্যথার কোনও পরীক্ষানিরীক্ষা হয়নি।” তাঁদের শয্যার উল্টো দিকে চোখে জল নিয়ে স্বামীকে বকাবকি করছেন পুরাতন মালদহের শান্তিপুর গ্রামের বাসিন্দা আলো মণ্ডল। তিনিও রবিবার সকালে গলাব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁর স্বামী হেমন্ত মণ্ডল বলেন, “গলাব্যথায় কাবু হয়ে গিয়েছে স্ত্রী। অথচ চিকিৎসা হচ্ছে না হাসপাতালে। তাই আমি ওকে এই হাসপাতাল থেকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি না বলে আমাকে বকাবকি করছে। কিন্তু নার্সিংহোমে চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য নেই আমার।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে মোট ১২০টি শয্যা রয়েছে। এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা ছিল ১৪৬। কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, ২৮০ থেকে ৩০০ রোগী ভর্তি থাকেন এই ওয়ার্ডে। পরিষেবা না পেয়ে রোগীরা ছুটি নিয়ে চলে যাচ্ছেন। রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, ওয়ার্ডে চিকিৎসকদের ডেকেও পাওয়া যাচ্ছে না। আর চিকিৎসকদের রাউন্ড দেওয়ার সময়ও ঠিক নেই। এদিন দুপুরে কর্তব্যরত অবস্থায় মালদহ পুলিশ লাইনে অসুস্থ হয়ে পড়েন পল্লবী রায় নামে এক মহিলা কনস্টেবল। সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ তাঁকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে পাঠানো হয় ওয়ার্ডে। কর্তব্যরত নার্সেরা তাঁকে দুটি ইঞ্জেকশন দেন। তবে চিকিৎসক আসতে সময় গড়িয়ে যায় প্রায় এক ঘণ্টা।
বহির্বিভাগেও দুর্ভোগের নানা ছবি দেখা যায় এই হাসপাতালে। হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে বুকের যন্ত্রণা নিয়ে বহির্বিভাগে এসেছিলেন মুক্তার আলি। তিনি বলেন, “মালদহ থেকে হরিশ্চন্দ্রপুর প্রায় ৭০ কিলোমিটার। আসতেই প্রায় ২০০ টাকা খরচ। এ দিন চিকিৎসা না পেয়েই ফিরে যেতে হল। চিকিৎসক সংগঠনের তরফে এদিন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।” সেজন্য বহির্বিভাগের পরিষেবা বন্ধ ছিল হাসপাতালে বলে জানিয়েছেন সুপার তথা সহ অধ্যক্ষ অমিতকুমার দাঁ। তিনি বলেন, “অন্তঃবিভাগে চিকিৎসা পরিষেবা রোগীদের দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর অভিযোগগুলিও খতিয়ে দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy