সীমান্ত লাগোয়া স্কুলে ছেলেমেয়েরা স্কুলেই আসতে চাইছে না ভয়ে। ফাইল চিত্র
ছেলেধরা আতঙ্কে ছাত্র কমছে স্কুলে। কোনও স্কুলের কোনও শ্রেণিতে পঞ্চাশ জন ছাত্রের উপস্থিতি স্বাভাবিক ছিল, তা এখন দাঁড়িয়েছে ৭ জনে। আবার যে স্কুলের যে শ্রেণিতে শতাধিক ছাত্র হাজির থাকত, এখন সেখানে ৩০ জন থাকছে। কোনও কোনও স্কুলে অভিভাবকেরা গিয়ে বসে থাকছেন।
কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম থেকে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় পরিস্থিতি এমনই হয়ে উঠেছে। দিন কয়েক ধরে গ্রামে গুজব ছড়িয়েছে, ‘ছেলেধরা বেরিয়েছে’। তা শুনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে গ্রামে। কেউই নিজের শিশুদের চোখের আড়াল হতে দিচ্ছেন না। শুধু তাই নয়, অপরিচিত কাউকে দেখলেই ছেলেধরা সন্দেহে শুরু জিজ্ঞাসাবাদ। কয়েক জনকে মারধরও করা হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নেমেছে প্রশাসন ও পুলিশ। ইতিমধ্যেই দুই তরফেই প্রচার করা গুজবে কান না দেওয়ার জন্যে বাসিন্দাদের কাছে আবেদন রাখা হয়েছে। কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা বলেন, “ওই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রচার করা হচ্ছে।” কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানা আখতার বলেন, “গুজব নিয়ে ধারাবাহিক প্রচার চলছে।”
পুলিশ সূত্রের খবর, বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা দিনহাটা থেকে শুরু করে কোচবিহার সদর মহকুমার একাধিক জায়গায় ওই গুজব ব্যাপক আকার নিয়েছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে দিনহাটায় ৩ জন ভবঘুরেকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। দিনহাটা চেকপোস্টে তিন দিন আগে বানারহাটের এক বাসিন্দাকে মারধর করা হয়। মঙ্গলবার রাতে ছেলেধরা সন্দেহে আটিয়াবাড়ির বড়াইবাড়িতে এক যুবককে মারধর করা হয়। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, ওই যুবক মানসিক ভারসাম্যহীন।
এর আগে দিনহাটার বউবাজার, কোচবিহারের বাণেশ্বর সহ একাধিক এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে মারধরের ঘটনা ঘটেন। বাসিন্দাদের কয়েক জনের অভিযোগ, দিক কয়েক আগে গোপালনগরের স্কুলের সামনে থেকে এক ছাত্রকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়। এমন ঘটনার পর থেকে গ্রামে গ্রামে ছেলেধরা নিয়ে নানা রকম গল্প ছড়িয়ে পরে। এমনকি সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এমন গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এই অবস্থার গত চার-পাঁচদিন থেকে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমতে শুরু করে। শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, কোচবিহার সদরের চড়কের কুঠি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২১০ জন। সাধারণত ১২০ থেকে ১৩০ জন উপস্থিত থাকত। গত চার-পাঁচ দিন থেকে ওই ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ জনে।
ওই স্কুলের শিক্ষক শঙ্কর দেবনাথ, নাজমুল সাকিব খন্দকার বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে অভিভাবকদের সচেতন করার চেষ্টা করেন। শঙ্কর বলেন, “অভিভাবকেরা ছেলেধরা আতঙ্কে ভুগছেন।”
দিনহাটার ভেটাগুড়ি খারিজা বালাডাঙা সিএস প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৮২ জন। ৫০-৫২ প্রতিদিন উপস্থিত থাকত। এখন সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ থেকে ৭ জনের মধ্যে । ওই স্কুলের শিক্ষক অয়ন সরকার বলেন, “এই গ্রাম পঞ্চায়েতে আরও ৯ টি স্কুলে একই অবস্থা।” জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কারা কী উদ্দেশ্যে ওই গুজব ছড়াচ্ছে, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy