বাবা-মায়ের দেহের সামনে অবরোধে বসে তিন নাবালক সন্তান। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
গত রাতে বাবা-মা মারা গিয়েছে হাতির হানায়। সেই দুই দেহের সামনেই তখন বসে রয়েছে বিষমা, বিশেষ আর বিশুয়া। বারবার প্রশ্ন উঠছে, এক রাতের মধ্যে অনাথ হয়ে যাওয়া এই তিন নাবালকের দেখভাল কে করবে? তা হলে কি তাদের হস্টেলে পাঠানো দরকার? তিন জনেরই কিন্তু এই বিষয়ে এক রা, বাগান ছেড়ে হস্টেলে তারা কিছুতেই যাবে না।
সোমবার রাতে ময়নাগুড়ির রামশাই গ্রাম পঞ্চায়েতের যাদবপুর চা বাগানের ডিপা লাইনের চা শ্রমিক গাওনা ওরাওঁ (৩২) ও তার স্ত্রী কুয়াঁরির (২৮) মৃত্যু হয় বুনো হাতির আক্রমণে। বাগান লাগোয়া এলাকায় কালী পুজো উপলক্ষে জলসা দেখে ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা। এখন তিন ছেলেকে নিয়েই চিন্তা বাগানের লোকজনের।
বাবা-মা রাতভর বাড়ি ফেরেননি। চিন্তায় ছিল তিন ভাই। মঙ্গলবার সাতসকালেই বাড়িতে খবর আসে, বাবা-মায়ের মৃতদেহ বাগানের ২১ নম্বর সেকশনে পড়ে রয়েছে। বাড়ির লোকেদের সঙ্গে তিন ভাই সেখানে ছুটে যায়।
তিন ভাইয়ের মধ্যে সব থেকে বড় নবম শ্রেণির ছাত্র বিষমা। মেজো ভাই ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র বিশেষ। সব থেকে ছোট বিশুয়া পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। ছোট ভাই তো প্রথমে কিছুই বুঝতে পারছিল না। পরে বাবা-মায়ের দেহ থেকে কান্নাকাটি শুরু করে। তাকে থামানোই যাচ্ছিল না। দেহ নিয়ে পথ অবরোধ করার সময়ে তিন জনকে সেখানেই বসিয়ে রেখেছিলেন স্থানীয়রা। তখন বিশুয়ার চোখে জল শুকিয়ে রয়েছে। গলাও শুকিয়ে কাঠ। চেয়ে চেয়ে সে মাঝেমাঝেই জল খাচ্ছিল। বড় দুই দাদার চোখমুখে শূন্যতা। পাশেই বসেছিলেন এক আত্মীয়। তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন। সকলের কাছেই বড় প্রশ্ন, এই তিন অনাথের দায়িত্ব কে নেবে? পরিবারের লোকেরা এর মধ্যেই আলোচনা শুরু করেছেন নিজেদের মধ্যে। এই তিন ভাইয়ের কিন্তু একই কথা, ‘‘আমরা বাগান ছেড়ে হোস্টেলে যাব না। বাবা-মা না থাকলেও আমাদের পিসি আছেন। পিসির কাছেই আমরা থাকব।’’
পরিবারের সদস্য অনিতা ওরাওঁ বলেন, ‘‘ওদের এক অবিবাহিত পিসি আছেন। তিনি বাগানেই কাজ করেন। বাড়ির লোকেদের সঙ্গে এই তিন সন্তানের সম্পর্কও যথেষ্ট ভাল। এখন আমরা আলোচনা করে দেখি ওদের দায়িত্ব কী ভাবে নেওয়া যায়।’’
এ দিন এই তিন ভাইকে প্রতিবেশীরাই খাইয়ে দিয়েছেন। বিশুয়াদের বাড়িতে উনুন জ্বলেনি। কবে জ্বলবে, তাও কেউ বলতে পারছেন না। বড় দুই দাদারই চিন্তা এখন ছোট ভাই বিশুয়াকে নিয়ে। অবরোধের সময়েও দেখা গিয়েছে, বারবার দু’জনে বিশুয়ার চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছে। এ দিকে, বাবা-মায়ের দেহ হাতে পেতেও অনেক কাঠখড় পোহাতে হয় তিন জনকে। সন্ধ্যা অবধি সেই দেহ আসেনি বলে জানিয়েছেন পড়শিরাই। প্রশাসন সূত্রে খবর, দীর্ঘক্ষণ অবরোধে দেহ আটকে রাখায় ময়নাতদন্তে দেরি হয়েছে। তাই দেহ পেতেও সময় লেগে গেল বাচ্চাদের।
জলপাইগুড়ি বন বিভাগের বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী বলেন, ‘‘মৃত দম্পতির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এই তিন শিশু সন্তানের দায়িত্ব বন বিভাগের তরফে নেওয়া সম্ভব নয়। প্রশাসনের তরফে যদি কিছু করা যায় তা দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy