উত্তরবঙ্গের হাতি করিডরের বিভিন্ন জায়গায় খুঁটিতে এত দিন বসানো থাকত সেন্সর। করিডর এলাকায় বা লোকালয়ের কাছে হাতি ঢুকলে তাদের চলাচল আঁচ করে ওই সেন্সরের মাধ্যমেই ছড়াত সতর্কবার্তা। এ বার সেই ব্যবস্থায় ‘স্বয়ংক্রিয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’র (এআই) ব্যবহার শুরু করছে বন দফতর। চাপড়ামারি এলাকায় এ রকম একটি প্রকল্প সফল হওয়ার পরে উত্তরবঙ্গের আরও কয়েকটি বনাঞ্চলে তা চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণ–মানুষ সংঘাত মেটাতে ‘এআই’-এর ব্যবহার উত্তরবঙ্গে এই প্রথম।
হাতি করিডরগুলিতে প্রতি তিন–চারশো মিটার দূরত্বে উত্তরবঙ্গের একাধিক বনাঞ্চলে বসানো রয়েছে যন্ত্র। বিভিন্ন রকমের সেন্সর এত দিন হাতির চলাচলের ক্ষেত্রে নিকটবর্তী বন দফতরের অফিসগুলিতে বার্তা পাঠাত, অ্যালার্ম বাজাত। এখন থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সরাসরি তার ভিডিয়ো ফুটেজ় মিলবে। উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) ভাস্কর জেভি বলেন, ‘‘চাপড়ামারিতে প্রথম বার বসানোর পরে এ রকম কয়েকটি যন্ত্র ভাল ফল দিয়েছে। আমরা একটি সংস্থার সঙ্গে কার্শিয়াং এবং বক্সায় কিছু যন্ত্র বসাচ্ছি।’’
এলাকায় হাতি ঢুকলে সেন্সর আগের মতোই কাজ করবে। কিন্তু এ বার থেকে বাড়তি থাকবে এআই পরিচালিত ভিডিয়ো ক্যামেরা। সেন্সর থেকে পাওয়া তথ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে প্রক্রিয়াকরণ করা হবে। বন্যপ্রাণ নিয়ে কর্মরত সংস্থা ‘স্ন্যাপ’-এর তরফে ওই যন্ত্রগুলি তৈরি করা হয়েছে। সংস্থার প্রধান কৌস্তভ চৌধুরী বলেন, ‘‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে সেন্সরের তথ্য এলে, তা যাচাই করে ওই খুঁটিগুলিতে থাকা ভিডিয়ো ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয় ভাবে চালু হয়ে যাবে। হাতিগুলির ফুটেজ় রেকর্ড হবে।’’ তিনি আরও জানান, দলে কতগুলি শাবক, কতগুলি বড় হাতি রয়েছে, তা-ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে চিহ্নিত করা যাবে। ওই যন্ত্র অন্য বন্যপ্রাণী, বাইসন এবং চিতাবাঘের গতিবিধিও ধরতে পারবে বলে আশাবাদী বন দফতরের আধিকারিকেরা। তবে সেগুলি হাতি করিডর এলাকার মধ্যে ঢুকলে তবেই তা সম্ভব হবে।
ডুয়ার্সের দিকে বন দফতরের ব্যবস্থাপনা তুলনামূলক ভাল থাকলেও কার্শিয়াং, বৈকুন্ঠপুর বনাঞ্চল লাগোয়া এলাকায় বসতি বেশি বলে পশু–মানুষ সংঘাতও সেখানে বেশি। বন দফতর সূত্রে খবর, কার্শিয়াংয়ের কয়েকটি কৌশলগত অবস্থানে ওই যন্ত্র বসানো হচ্ছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)