বিমলের স্ত্রী এবং ছেলে। ছবি: বিনোদ দাস
মালদহের বামনগোলার মামণি রায় এবং ডুয়ার্সের ঢেকলাপাড়ার সুশীল ওরাওঁয়ের পরে, এ বার তরাইয়ের বন্ধ চা বাগানের বাসিন্দা বিমল তিরকে (৭০)। সময় মতো অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হল না শিলিগুড়ির নকশালবাড়ি ব্লকের ত্রিহানা চা বাগানের অবসরপ্রাপ্ত চা শ্রমিক বিমলকে, এমনই অভিযোগ পরিবারের। শেষে একটি গাড়ি জোগাড় করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষরক্ষা হয়নি। আগেই মারা যান বিমল।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন বিমল। এ দিন মৃতদেহের সামনে বসে কাঁদতে কাঁদতে স্ত্রী শুক্রি তিরকে বলেন, ‘‘চিকিৎসার অভাবেই মৃত্যু হল মানুষটার। শেষ বার হাসপাতালে নিয়ে যেতেও পারলাম না।’’ ছেলে জিতেনের অভিযোগ, ‘‘বন্ধ বাগানে শ্রমিকদের কোনও পরিষেবাই দেওয়া হচ্ছে না। অভাবে সঙ্কটে দিন কাটছে। অ্যাম্বুল্যান্সের অভাবে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারিনি।’’ ত্রিহানা চা বাগানের বাজার লাইনের ওই ঘটনায় হইচই পড়েছে। দার্জিলিঙের জেলাশাসক প্রীতি গোয়েল বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
সম্প্রতি বামনগোলার মালডাঙায় রাস্তা খারাপ বলে অ্যাম্বুল্যান্স যেতে না চাওয়ায়, পরিবারের লোকেরা অসুস্থ মামণি রায়কে খাটিয়ায় করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও, বাঁচাতে পারেননি। হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স চেয়েও না পেয়ে ঢেকলাপাড়ার সুশীল ওরাওঁকে পরিবার বাঁচাতে পারেনি বলে অভিযোগ। সে চা বাগানেই বহু দেরিতে অ্যাম্বুল্যান্স পেয়ে, তাতে প্রসব করে ফেলেন এক মহিলা। সেই বিপন্নতার ছবির সঙ্গে মিলে গেল শিলিগুড়ির চা বাগানের এই পরিবারটিও। শুক্রির অভিযোগ, ২০১৩ সালে অবসর নেওয়া বিমল পিএফ, গ্র্যাচুইটি পাচ্ছেন না। এ নিয়ে বাগডোগরা থানায় অভিযোগ দায়েরও করেছেন। টাকা পেলে সঠিক চিকিৎসা করাতে পারতেন বলে তাঁর দাবি।
পরিবার জানায়, বিমল উচ্চ রক্তচাপের রোগী ছিলেন। বুধবার রাতে অসুস্থতা বেড়ে যায়। পরিবারের তরফে বাগানের অ্যাম্বুল্যান্স চাওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, সেটি বিকল হয়ে পড়ে আছে বলে তাঁদের জানানো হয়। এর পরে, দৌড়ঝাঁপ করে ছেলে জিতেন এলাকার একটি গাড়ি ঠিক করলেও, সেটি হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই বিমলের মৃত্যু হয়। জিতেনের অভিযোগ, তাঁর বাবা অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক। অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা পেতে গেলে, তেলের এবং ড্রাইভার খরচ দিতে হয়। সেটাও তাঁদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব ছিল না। সে জন্যই হয়তো অ্যাম্বুল্যান্স বিকল বলে তাঁদের জানানো হয়েছে।
গত তিন মাস ধরে বন্ধ ত্রিহানা। কারখানার বিকল যন্ত্রাংশের গুদামের এক দিকে খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে বাগানের অ্যাম্বুল্যান্স। কারখানার ভিতরে আরও একটি অ্যাম্বুল্যান্স রাখা রয়েছে। সেটিও খারাপ। কোনও রকমে কখনও-সখনও চলে বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। বাগানের নিজস্ব স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মী হরি লাখরার দাবি, ‘‘কয়েক দিন থেকে বিমলের অসুস্থতার কথা শুনেছি। কিন্তু তাঁরা কেউই অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য জানাননি।’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসী প্রামাণিক বলেন, ‘‘চা বাগান শ্রমিকদের বিষয়টি বাগান কর্তৃপক্ষ এবং শ্রম দফতরের বিষয়। তবে কেউ হাসপাতালকে জানালে সেখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়।’’ ত্রিহানার মালিক ঘনশ্যাম কঙ্কানির বক্তব্য, ‘‘বাগান চালুর সময় সব ঠিক ছিল। বন্ধের পরে, অ্যাম্বুল্যান্স এবং অন্য গাড়িগুলি বিকল হয়ে পড়েছে। কয়েকজন শ্রমিক নেতাই সে সব দখল করে থাকেন। গাড়ির চাবি তাঁদের কাছেই থাকে।’’
এলাকায় যাওয়া শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্সের অভাবে মৃত্যু হলে প্রশাসন, বাগান কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারেন না।’’ দার্জিলিং জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি নির্জল দে-র দাবি, ‘‘শ্রমিকেরা সঙ্কটে দিন কাটাচ্ছেন। দায় বাগান কর্তৃপক্ষের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy