Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
Jalpaiguri

মা-বাবার ধান বিক্রির টাকায় ডাক্তারি পড়া শুরু উৎপলের

উৎপল ‘এসসি’ কোটায় ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছেন জলপাইগুড়ি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে। বৃহস্পতিবার সেখানেই ছেলেকে ভর্তি করাতে এসেছিলেন তাঁর মা-বাবা।

পরিবারের সঙ্গে উৎপল রায়। নিজস্ব চিত্র

পরিবারের সঙ্গে উৎপল রায়। নিজস্ব চিত্র

অর্জুন ভট্টাচার্য  
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২২ ০৭:২৪
Share: Save:

ছেলের স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়া। ছেলেকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করাতে মা-বাবাকে বিক্রি করতে হয়েছে জমির ধান। তাঁরা ময়নাগুড়ির দোমোহনির সিঙ্গিবাড়ি গ্রামের জ্যোৎস্না রায় ও প্রভাতচন্দ্র রায়। প্রভাত স্নাতক। পেশায় কৃষক। স্ত্রী জ্যোৎস্না রায় স্নায়ুরোগে আক্রান্ত। ছেলে উৎপল রায় ৬৪৯ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু। ২০২০ সালে ময়নাগুড়ি হাইস্কুল থেকে ৪৭৮ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন উৎপল। ফিজিক্স অনার্স নিয়ে জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। তবে ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন সফল করতে ‘নিট’-এ বসার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করেন। আর্থিক অভাব থাকায় প্রাইভেট টিউশন নিতে পারেননি উৎপল। নিজের চেষ্টাতেই সাফল্য পেয়েছেন ‘নিট’-এ। ৭২০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ৪৬২। সর্ব ভারতীয় স্তরে এক লক্ষ ১৫ হাজার ২১৯ র‌্যাঙ্ক তাঁর।

উৎপল ‘এসসি’ কোটায় ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছেন জলপাইগুড়ি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে। বৃহস্পতিবার সেখানেই ছেলেকে ভর্তি করাতে এসেছিলেন তাঁর মা-বাবা। উৎপলের বাবা বলেন, ‘‘আনন্দচন্দ্র কলেজ থেকে বিএ পাস করেছিলাম। তবে চেষ্টা করেও চাকরি পাইনি। বাধ্য হয়ে পারিবারিক কৃষিকাজকেই পেশা হিসেবে বেছে নিই। ছেলেমেয়েদের ছোট থেকেই শিখিয়েছি, পড়াশোনা করে মানুষ হতে হবে।’’ মেয়ে শতদীপ্তা একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। উৎপল বলেন, ‘‘ওদের পড়াশোনা করাতে গিয়ে বহু দিন অর্ধাহারেও কেটেছে। আজ ছেলেকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করাতে পেরে আমরা খুবই খুশি।’’

উৎপলের মা জ্যোৎস্না রায় বলেন, ‘‘পড়াশোনার পাশাপাশি, ছেলেকে ধান কাটা ও রোওয়ার কাজও করতে হয়েছে। আমি অসুস্থ। তাই ঘরের কাজও সামলাতে হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির জন্য ছ’হাজার ৫৫০ টাকার প্রয়োজন ছিল। তা জোগাড়ে ঘরের ধান বিক্রি করতে হয়েছে।’’

উৎপল বলেন, ‘‘এমবিবিএস করে এমডি অথবা এমএস পড়ার ইচ্ছা আছে।’’ উৎপলকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত ময়নাগুড়ি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিবব্রত রায়। তাঁর কথায়, ‘‘ইচ্ছা ও অদম্য জেদের জোরে দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে উৎপল যে ভাবে এগিয়ে চলেছে, তা তুলনাহীন।’’ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রবীরকুমারদেবের আশ্বাস, ‘‘এ ধরনের ছাত্রছাত্রীদের পাশে কলেজ কর্তৃপক্ষ সব সময় রয়েছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jalpaiguri Medical MBBS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy