কানদুনি রায়কে কোলে নিয়ে ভর্তি করতে যাচ্ছেন হালিমুদ্দিন। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
সোমবার সকাল এগারোটা। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের করিডর দিয়ে এক বৃদ্ধাকে কোলে নিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছিলেন এক ব্যক্তি। ভিড়ের মাঝ দিয়ে সোজা চলে গেলেন মেডিসিন ওয়ার্ডে। তারপর প্রয়োজনীয় নিয়মকাজ সেরে ওই ওয়ার্ডে বৃদ্ধাকে করালেন। কাজ শেষে একপাশে দাঁড়িয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। এমনভাবে ছুটছিলেন কেন? জবাব এল ‘‘ওঁর শরীর খারাপ। তাড়াতাড়ি ভর্তি করার প্রয়োজন ছিল।’’ মা হন বুঝি? মাথা নেড়ে তিনি বললেন, ‘‘না আজ চিনলাম। তবে উনি আমার বাড়ির কাছেই থাকেন। ওঁর ছেলে এসে বলল হাসপাতালে নিয়ে আসতে।’’
কথায় কথায় জানালেন নিজের নাম। মহম্মদ হালিমুদ্দিন নামে ওই ব্যক্তি ফাঁসিদেওয়ার লিউসিপাখুরির খ্যাটকাজোতের বাসিন্দা। পেশায় অটোচালক। যে বৃদ্ধাকে ভর্তি করাতে এসেছিলেন তাঁর নাম কানদুনি রায়। ওই এলাকাতেই থাকেন। হালিমুদ্দিনের বাড়ি থেকে পাঁচশো মিটার দূরেই তাঁর বাড়ি। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কাজ করেন ওই বৃদ্ধা। হালিমুদ্দিন জানালেন, রবিবার থেকেই বুকে ব্যথা, শরীর অসুস্থ ছিল তাঁর। কানদুনির বাড়িতে তাঁর ছেলে, পুত্রবধূ ও ছোট নাতনি রয়েছে। হালিমুদ্দিন জানালেন, বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য সোমবার বাজার থেকে তাঁকে অটো নিয়ে আসতে বলেছিলেন বৃদ্ধার ছেলে। হাসপাতালে আনার সময় ছেলেকে আসতে বললেও বাড়িতে বাচ্চা দেখার কথা বলে আসতে চাননি কানদুনির ছেলে। তাই শেষ পর্যন্ত একাই বৃদ্ধাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন হালিমুদ্দিন। কিন্তু অটো থেকে নামতে পারছিলেন না বৃদ্ধা। তা দেখে তাঁকে কোলে তুলে নেন হালিমুদ্দিন। কাউন্টারে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে জরুরি বিভাগে দেখান। সেখানে চিকিৎসক মেডিসিন বিভাগে ভর্তির পরামর্শ দেন। মেডিসিন বিভাগ অনেকটা দূরে। জরুরি বিভাগ থেকে হালিমুদ্দিন বৃদ্ধাকে অটোতে তুলে মেডিসিন বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে ট্রলি নেই দেখে নিরাপত্তারক্ষীর কাছে ট্রলি চান। ২৫ নম্বর ঘরে গিয়ে ট্রলি আনতে বলা হয় তাঁকে। কোথায় ২৫ নম্বর ঘর খুঁজে না পেয়ে কানদুনিকে কোলে করে মেডিসিন ওয়ার্ডে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করান হালিমুদ্দিনই। প্রায় ঘণ্টাদেড়েক ধরে এসবই চলেছে। কিন্তু একটা টাকাও ভাড়া নেননি হালিমুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘এই অবস্থায় কী টাকা চাইব। উনি আগে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুক। তারপরে দেখা যাবে।’’ এলাকায় ফিরে বৃদ্ধার ছেলেকে খবরও দেন তিনি।
দিল্লির হিংসা পরিস্থিতি নিয়ে দেশ জুড়ে হইচই চলছে। সেই আঁচ স্পর্শ করে না হালিমুদ্দিনকে। তিনি বলেন, ‘‘এক জনের বিপদে যদি পাশে না দাঁড়াই তাহলে চলবে কী করে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy