কোচবিহারের সেই আলতাফ মিঞার জীবনাবসান। তাঁর পূর্বপুরুষের হাত ধরেই কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী রাসচক্রের সূচনা হয়। বাবা আজিস মিঞার পর তাঁর কাঁধেই আসে রাসচক্রের দায়িত্ব। বছর দুই আগে পুত্রের হাতে দায়িত্ব ছাড়েন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তবে দীর্ঘ দিন শারীরিক অসুস্থতার কারণে কর্মক্ষমতা হারিয়েছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে কোচবিহারে। আলতাফের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সমাজমাধ্যমে এক পোস্টে তিনি লেখেন, “বাংলার যে ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য তার অন্যতম ধারক-বাহক ছিলেন তিনি (আলতাফ)। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারকে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই।” আলতাফের শেষকৃত্যে সব রকম সাহায্য করার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে আলতাফ রাসচক্র বানিয়ে আসছিলেন। তবে বার্ধক্যজনিত সমস্যার কারণে কাজ থেকে অবসর নিয়েছেন অনেক দিন। তবে বছর তিনেক আগেও তিনি কাজ সামলেছেন। তবে অসুস্থতার কারণে দিন কয়েক আগে কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। শনিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালেই মৃত্যু হয় আলতাফের। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মহকুমাশাসক কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন বয়সজনিত রোগে ভুগছিলেন। দিন কয়েক ধরে মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীনও ছিলেন। তবে চিকিৎসায় সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। রবিবার তাঁর দেহ কবর দেওয়া হবে। আমরা পরিবারের পাশে থাকব।’’
কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী মদনমোহনের রাস উৎসব। ১৮১২ সালে কোচবিহারের ভেটাগুড়িতে প্রথম রাসমেলার আয়োজন হয়। ওই বছর রাস পূর্ণিমা তিথিতে কোচবিহারের মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ ভেটাগুড়িতে নবনির্মিত রাজপ্রাসাদে যান। সেই উপলক্ষে সেখানে রাসমেলা বসে। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে কোচবিহারের এই উৎসব। রাজ আমল থেকেই বংশপরম্পরায় কোচবিহার রাস উৎসবের রাসচক্র তৈরি করে আসছে গ্রামেরই মিঞা পরিবার। প্রথম রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব পেয়েছিলেন মহম্মদ মিঞা। তার পর আজিস, আলতাফ হয়ে এখন রাসচক্র সামলাচ্ছেন আমিনুর হোসেন।