তুফানগঞ্জের কংগ্রেস প্রার্থী শ্যামল চৌধুরী ও নাটাবাড়ির সিপিএম প্রার্থী তমসের আলি মিছিলে।—নিজস্ব চিত্র
কখনও হাতে হাত মিলিয়ে পথে নামছেন। কখনও এক মঞ্চে বসে কর্মীদের জোটবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ে নামার আহ্বান করছেন। ভাল করে জানা না থাকলে বোঝা মুশকিল, কে কংগ্রেস, কে সিপিএম আর কে ফরওয়ার্ড ব্লক। অন্য জেলায় সম্পর্কে টানাপোড়েন থাকলেও কোচবিহারে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক নেতা অক্ষয় ঠাকুর, তমসের আলি, কেশব রায়দের জোট সম্পর্ক রীতিমতো পোক্ত। আর তাতে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়েছেন শাসক দলের দাপুটে নেতা উদয়ন গুহ-রবীন্দ্রনাথ ঘোষরা। পথে নেমে তাঁরাও জোটে ভাঙন ধরাতে চেষ্টার কোনও কমতি রাখছেন না। বাম আমলে কী ভাবে কংগ্রেস কর্মীদের উপরে অত্যাচার হয়েছে, তা তুলে ধরছেন তাঁরা। শুক্রবার এই ছবিই দেখা গেল দিনহাটা-তুফানগঞ্জে।
দিনহাটায় ফরওয়ার্ড ব্লক অফিসে বসে তিন দলের নেতারা উদয়নবাবুকে হারানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন। দিনহাটায় এ বারে শাসক দলের প্রার্থী উদয়ন গুহের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন জোট প্রার্থী ফরওয়ার্ড ব্লকের অক্ষয় ঠাকুর। পাশের কেন্দ্রে সিতাইয়ে দাঁড়িয়েছেন জোট প্রার্থী কংগ্রেসের কেশব রায়। ওই দুই আসনেই লড়াই এবারে হাড্ডাহাড্ডি। অক্ষয়বাবু বলেন, “এই আসনে গত বার আমাদের প্রার্থীকে জিতিয়েছলেন সাধারণ মানুষরা। এ বারে কংগ্রেস আমাদের সঙ্গে আছে। তা ছাড়া, শাসক দলের যিনি প্রার্থী হয়েছেন তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তাই এই কেন্দ্র এবং পাশের কেন্দ্র দু’টিতেই জয় হবে আমাদের।” তাঁর পাশে বসে থাকা কংগ্রেসের বিদায়ী বিধায়ক কেশববাবু দাবি করেন, গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল জেলার সব আসনে কংগ্রেসের সমর্থনেই জিতেছিল। তিনি বলেন, “হিসেব করলে দেখা যায় তৃণমূল প্রার্থীরা জেলার বিধানসভার আসনগুলিতে কোথাও চার হাজার, কোথাও পাঁচ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। দু’শো কয়েক ভোটে জিতেছিলেন, এমন কেন্দ্রও রয়েছে। আর এ টুকু বলতে পারি সব কেন্দ্রে আমাদের যা ভোট আছে, তাতে আর কোনও আসনেই জিততে পারবেন না তৃণমূল প্রার্থীরা।”
দিনহাটায় অবশ্য জোট নিয়ে যে সমস্যা ছিল, তা মিটে যাবে বলে আশা করছেন দলের অনেকেই। কংগ্রেস নেতা ফজলে হক দিনহাটায় দাঁড়াতে পারেন বলে ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছিলেন। দল তাঁকে প্রার্থী করেনি। তিনি বলেন, “আগামী শনি ও রবিবার দুইদিন কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। তাঁরা যদি মত দেন তাহলে নির্দল হিসেবে দাঁড়াতে পারি।” কংগ্রেস জেলা নেতারা অবশ্য দাবি করেছেন, ফজলে হক শেষ অবধি জোট স্বার্থে ভোটে দাঁড়াবেন না। উদয়নবাবু অবশ্য জোটের ওই হাল নিয়েই কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, “কোথায় জোট! সব তো ঘোঁট। আগে নিজেদের ঘর সামলাক, তারপর তো কাউকে হারানোর ভাবনা ভাববে। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। তাই ওই বিষয় নিয়ে ভাবছি না।”
নাটাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রে অবশ্য জোটের এমন কোনও কাঁটা নেই। ওই কেন্দ্রে শাসক দলের প্রার্থী তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে লড়াই হচ্ছে জোট তথা সিপিএম প্রার্থী তমসের আলির। ওই কেন্দ্রে কংগ্রেস জেলা সভাপতি লাগোয়া তুফানগঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী শ্যামল চৌধুরী নিজে কর্মীদের তমসেরের সঙ্গে রাস্তায় নামাতে আহ্বান করেছেন। মিটিং মিছিলেও সামিল হতে শুরু ওই বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা।
তমসের বলেন, “জোটবদ্ধ হতে শুরু করেছে মানুষ। এক সঙ্গে আমরা মিটিং মিছিল করছি। গত পাঁচ বছরে যা হয়েছে, তাতে তৃণমূলের হাত থেকে মুক্তি পেতে চাইছে। সে ইঙ্গিত স্পষ্ট।” রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য দাবি করেন, ওই জোট কিছু স্বার্থবাদী নেতার। তিনি বলেন, “বাম আমলে যা অত্যাচার হয়েছে, তা কেউ ভুলে যায়নি। কংগ্রেসকর্মীদের উপরে অকথ্য অত্যাচার চলেছে। কত কর্মী খুন হয়েছেন। কত জনের বাড়ি লুঠ হয়েছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। তাই কেউই ওই জোটে সামিল হননি। মানুষ আমাদের সঙ্গেই আছেন।” জেলার এক কংগ্রেস নেতা বলেন, “গত পাঁচ বছরে যা অত্যাচার ও দুর্নীতি হয়েছে, তাতে মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আগে মানুষের বেঁচে থাকাটা নিশ্চিত করতে হবে। এর পর অন্য লড়াই।”
তুফানগঞ্জে জোটের প্রথম নির্বাচনী প্রচার মিছিলে উৎসাহী সমর্থকদের ঢল নেমেছিল। কমিউনিটি হলে বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থনে কর্মিসভার পরেই শহরে মিছিল বের করেন জোট সমর্থকরা। ওই মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন কোচবিহার জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা তুফানগঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী শ্যামল চৌধুরী, নাটাবাড়ি কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী তমসের আলি ও কোচবিহার জেলা সিপিএম সম্পাদক তারিণী রায়। এছাড়াও বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপির নেতাকর্মীরাও মিছিলে সামিল হন। ওই মিছিলের ভিড় দেখে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত জোট নেতৃত্ব। শ্যামলবাবু বলেন, “ আমাদের যা ভাবনা ছিল তার থেকে অনেক বেশি মানুষ সামিল হয়েছেন।” তমসের আলির দাবি, “ দুই হাজারের বেশি সমর্থক ছিলেন।’’
শহরের তৃণমূল অফিসের সামনে দিয়েও ওই মিছিল যায়। সেসময় অবশ্য তৃণমূল অফিসের বাইরে সমর্থকদের দেখা যায়নি। তবে মিছিলের জেরে শহরের যান চলাচল সাময়িকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। থানা মোড়, রামহরি মোড় হয়ে ওই মিছিল পরে ফের তুফানগঞ্জ কমিউনিটি হলের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানেও দুই শিবিরের কর্মীসমর্থকদের অনেকে সৌজন্য বিনিময়ে মাতেন। যা দেখে একবাম নেতার বক্তব্য, জোটটা আন্তরিক হয়ে উঠছে।
দু’দলের নেতারাই জানাচ্ছেন, প্রথম নির্বাচনী মিছিলকে নজরকাড়া করতে দুই শিবিরের তরফেই তৎপরতা ছিল। সিপিএম তথা বাম নেতারা প্রতিটি ওয়ার্ড তো বটেই লাগোয়া একাধিক পঞ্চায়েত থেকে সমর্থকদের হাজির করাতে উদ্যোগী হন।
তৃণমূলের অবশ্য বক্তব্য, ওই জোট অনৈতিক, তাই মানুষ তাকে সমর্থন করবেন না। দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “রাজ্যের উন্নয়নের নিরিখেই মানুষ তৃণমূলকে সমর্থন করবেন। যে সিপিএমের হাতে একসময় রামপুরে কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছে, ফলিমারিতে চোখ উপড়ে নেওয়া হয়। কংগ্রেস কর্মীদের কাছে ওদের নেতারা কোন মুখে যাবেন। সেই সব কংগ্রেসের কর্মীরা ওই জোট মানবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy