Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Maynaguri

ছন্দে ফিরছে এলাকা, তবু থমথমে

এলাকায় সৎ ও নিষ্ঠাবান তৃণমূল নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন ভোম্বল ঘোষ। দুষ্কৃতীদের হাতে নৃশংস ভাবে তাঁর মৃত্যুর পর অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল এই এলাকা।

বিষণ্ণতা: নিহত তৃণমূল নেতা ভোম্বল ঘোষের মা।

বিষণ্ণতা: নিহত তৃণমূল নেতা ভোম্বল ঘোষের মা।

অর্জুন ভট্টাচার্য
ময়নাগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:০৯
Share: Save:

ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে ময়নাগুড়ির হুসলুরডাঙা। এলাকায় সৎ ও নিষ্ঠাবান তৃণমূল নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন ভোম্বল ঘোষ। দুষ্কৃতীদের হাতে নৃশংস ভাবে তাঁর মৃত্যুর পর অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল এই এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এর আগে কখনও এই ধরনের রাজনৈতিক হিংসা দেখেনি হুসলুরডাঙা। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান অভিযুক্ত ত্রিপুরা পুলিশের কর্মী বিকাশ রায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন স্থানীয়রা। অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রাও।

রবিবার রাতে রাজনৈতিক অশান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল এই এলাকায়। অভিযোগ, ময়নাগুড়ির চূড়াভাণ্ডার এলাকার ১৬/১৬৮ নম্বর বুথের তৃণমূল বুথ সভাপতি ভোম্বলকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে খুন করে বিজেপি কর্মীরা। স্থানীয়রা জানান, রবিবার ভোম্বলের মৃতদেহ এলাকায় নিয়ে আসার পর অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল এই এলাকা।

স্থানীয় প্রবীণ নাগরিক ঝন্টু কর গুপ্ত বলেন, ‘‘আমাদের এই এলাকায় আগে কখনও এই ধরনের রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেনি। বয়সে তরুণ ভোম্বল এলাকার বাসিন্দাদের কাছে অত্যন্ত সৎ ও নিষ্ঠাবান তৃণমূল কর্মী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কেন এই ধরনের নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটে গেল তা বোধগম্য হচ্ছে না আমাদের।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হুসলুরডাঙা বাজার, মল্লিকহাট, জোনাকুর বাড়ি-সহ এলাকার পাঁচটি বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। এই আগুন লাগানোর ঘটনায় বিজেপির অভিযোগের তির অবশ্য তৃণমূলের দিকে। যদিও তৃণমূলের দাবি, এই ঘটনায় দলের কেউই জড়িত নন।

আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ির লোকেরা জানান, পেট্রোল ঢেলে বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। জোনাকুর বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা উপেন রায় বলেন, ‘‘বাড়ির মধ্যে দু’টি গাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আগুনে পুড়ে যায় দু’টি গরুও।’’

মঙ্গলবার দুপুরে পোড়া বাড়িতে ফিরে এসেছে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র অনির্বাণ রায়। রবিবার রাতে অশান্তির আশঙ্কায় বাড়ির ছোট এই সদস্যকে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে জানান বাড়ির লোকেরা। এ দিন বাড়িতে ফিরেই অনির্বাণ আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরে ঢুকে ওর বই খাতার খোঁজ করছিল। অনির্বাণ বলে, ‘‘এই ঘরেই আমার বইখাতা ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল।’’ উপেন রায় বলেন, ‘‘আমরাও চাই দ্রুত এই এলাকায় শান্তি ফিরে আসুক। নতুন করে আর যেন কোনও অশান্তি না ছড়িয়ে পড়ে।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোম্বল-হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মূল অভিযুক্ত বিকাশ রায়। পেশায় ত্রিপুরা পুলিশের কর্মী বিকাশ রায়। রাজনৈতিক ভাবে এলাকায় বিজেপির সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত সে। ছুটি নিয়ে ত্রিপুরা থেকে বাড়িতে এলেই সে এলাকায় অশান্তি ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে মদত জোগায় বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। নিজেকে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে দাবি করে বলেও জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। এর আগেও এই এলাকায় রাজনৈতিক হিংসায় মদত দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

হুসলুরডাঙা বাজার-সহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় পুলিশি টহল চলছে বলে জানায় পুলিশ। জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ সুপার অভিষেক মোদী জানান, নতুন করে আর কোনও রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চলছে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Maynaguri Violence Murder TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE