Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Jal Jivan Mission

দত্তক নিয়েও কেন ‘পর’? সাংসদকে সামনে পেলে প্রশ্ন করবে চেংমারি

গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই কৃষিজীবী। প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান নিধি প্রকল্পে ভাতা পাওয়ার রাশি-রাশি আবেদন জমা পড়ে রয়েছে।

ময়নাগুড়ি ব্লকের রামসাইয়ের সংসদে দত্তক নেওয়া চ্যাংমারি গ্রাম রাস্তা নেই,

ময়নাগুড়ি ব্লকের রামসাইয়ের সংসদে দত্তক নেওয়া চ্যাংমারি গ্রাম রাস্তা নেই, পানীয় জল নেই কুয়ার জল ঘোলা অভিযোগ গ্রাম বাসীদের। ছবি দীপঙ্কর ঘটক।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৯:১০
Share: Save:

সাংসদকে সামনা-সামনি দেখেছেন? চা শ্রমিক সুশীল খেরিয়া বললেন, “করোনা হয়েছিল যখন তার আগে দেখেছিলাম।” প্রৌঢ়া মালতি রায়ের কথায়, “কয়েক বছর আগে মেলার মাঠে একটা অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম। সে দিন আমাদের গ্রামকে দত্তক নেওয়ার কথা বলেছিলেন। তার পরে আর দেখিনি।” গত কয়েক বছরে জলপাইগুড়ির বিজেপি সাংসদ জয়ন্ত রায়ের পা পড়েনি রামসাই গ্রাম পঞ্চায়েতের চেংমারি গ্রামে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। ২০১৯ সালে বিপুল ভোটে জয়লাভের পরে, এই গ্রামকে দত্তক নেওয়ার ঘোষণা করেন সাংসদ। দাবি করেছিলেন, ‘আদর্শ গ্রাম’ করা হবে। তার পরে, ফের লোকসভা ভোট এসে গিয়েছে। বুধবার ওই গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ দাবি করে, গত কয়েক বছরে সাংসদের পা-ই পড়েনি এই গ্রামে। দুপুর ১২টা। তিন মেয়েকে মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে কাজে বের হচ্ছিলেন চন্দনা রায় ওরাওঁ। দাবি, কখনও সাংসদকে দেখেননি। বললেন, “দেখা হলে বলতাম, আমাদের গ্রামে কল নেই। কুয়োর ঘোলা নোংরা জল খেতে হয়। আমাদের খাবার জল দিন।” চেংমারি এবং মা ভান্ডানি দু’টি বুথ নিয়ে একটি গ্রাম। বুথ দুটির নম্বর ৫ এবং ৬। এই গ্রামে অবশ্য বেশ কয়েকটি কল রয়েছে। জল পড়ে না। বাসিন্দাদের ভরসা কুয়ো। অভিযোগ, কেন্দ্রের ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্পের সুযোগও মেলেনি বিজেপি সাংসদের দত্তক নেওয়া গ্রামে।

গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই কৃষিজীবী। প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান নিধি প্রকল্পে ভাতা পাওয়ার রাশি-রাশি আবেদন জমা পড়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা দিলীপ রায় বলেন, “আমাদের আবেদনগুলির কথা সাংসদকে লোক পাঠিয়ে জানানো হয়েছিল। জবাব আসেনি।” গ্রামের একাধিক পরিবারের আবাসের তালিকায় নাম থাকলে বরাদ্দ নেই। গৃহবধূ অনিতা বড়ুয়া বলেন, “কবে থেকে সরকারি ঘর পাওয়ার তালিকায় নাম রয়েছে। টাকা আসেনি। সাংসদ এক বার গ্রামে এলে, তাঁকে বলতাম।”

সাংসদ গ্রাম দত্তক নেওয়ার পরে জানানো হয়েছিল, নানা প্রকল্পের সুযোগ তো মিলবেই সাংসদ উন্নয়ন তহবিল থেকে গ্রামের পরিকাঠামোর উন্নতিতে ব্যয় করা হবে। গ্রামে ঢোকার রাস্তা ভেঙে চৌচির হয়ে রয়েছে বছর কয়েক ধরে। পথের মাঝে ফুট তিন-চারেকের গর্ত। কালীপদ বাসুনিয়া বললেন, “সন্তানসম্ভবা মহিলাদের হাঁটিয়ে নিয়ে রাস্তা পার করাতে হয়। গাড়ি বা মোটরবাইকে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। এত ঝাঁকুনি হয়।”

বেহাল গ্রামটির এমন পরিস্থিতির কথা জয়ন্ত অবশ্য মেনে নিয়েছেন। তাঁর দাবি, “আমি কাজ করতে চেয়েছিলাম। আমার প্রতিনিধিরা গ্রামে গিয়ে সমীক্ষাও করেছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের পঞ্চায়েত থেকে প্রতিনিধিরা প্রতিটি উন্নয়নেই বাধা দিয়ে গিয়েছে। বলেছিলাম, দয়া করে উন্নয়নে রাজনীতিকে আনবেন না। তবু কিছুতেই কাজ করতে দেয়নি। সেটাই গ্রামবাসীদের বলেছি।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি মহুয়া গোপ পাল্টা বলেন, “কাজ করতে সদ্দিচ্ছা লাগে। তৃণমূলের কেউ বাধা দিলে, তিনি সঙ্গে সঙ্গে জানাননি কেন?”

একশো দিনের কাজে রাজ্যের পাঠানো বকেয়া মজুরি ঢুকতে শুরু করেছে গ্রামে। তা নিয়ে চর্চা চলছে। এরই মধ্যে জানতে চাওয়া গেল, এ বারেও যদি গ্রামে সাংসদ ভোট চাইতে আসেন কী বলবেন? সুশীল খেরিয়া থেকে চন্দনা রায়, মালতি রায়েরা একই সুরে বললেন, “দত্তক নিয়ে এ ভাবে কেউ গ্রামকে পর করে দেয়! তিনি (সাংসদ) গ্রামে আগে আসুন। তখন দেখা যাবে!”

অন্য বিষয়গুলি:

Jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy