সেই বল হাতে সৌম্যরাজ ও রিনাদেবী। নিজস্ব চিত্র
ঠিক এক যুগ আগের কথা।
ঘটনাটা ঘটেছিল বারো বছর আগের এক দুপুরে। এত দিন পর আজও সৌম্যরাজ সেনগুপ্তর কাছে সেই স্মৃতি একেবারে টাটকা।
আলিপুরদুয়ার জংশনের বাসিন্দা পেশায় রেলকর্মী সৌম্যরাজ তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। মারাদোনাকে দেখতে বাবা অসীম সেনগুপ্তর হাত ধরে সে দিন তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন মোহনবাগান মাঠে। সৌম্যরাজের কথায়, “বাবা গ্যালারির মাঝামাঝি জায়গায় বসেছিলেন। মারাদোনাকে ভাল করে দেখতে আমি গ্যালারি থেকে নেমে মাঠ ঘিরে থাকা নেটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মাঠে ঢুকে কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্যালারিতে দর্শকদের দিকে কয়েকটি ফুটবলে কিক মারতে শুরু করেছিলেন মারাদোনা। আচমকাই দেখলাম ওঁর মারা একটা বল আমার মাথার উপর দিয়ে গ্যালারিতে যাচ্ছে। তার পরেই দেখি, বাবা গ্যালারির মধ্যেই ঝাঁপিয়ে বলটাকে বুকে আঁকড়ে ধরলেন। সঙ্গে সঙ্গে বলটা কেড়ে নিতে বাবার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন ত্রিশ-চল্লিশ জন দর্শক। কিন্তু বাবা বলটা ছাড়েননি। বুকে আগলে রেখেছিলেন।’’
আট বছর আগে মারা যান রেলকর্মী অসীম সেনগুপ্ত। এলাকায় তিনি পরিচিত ছিলেন ফুটবলার হিসেবে। বালুদা বলেই তাঁকে চিনতেন মাঠের লোকেরা। অসীমবাবুর স্ত্রী রিনা সেনগুপ্ত বলেন, “কলকাতায় ছেলের পড়াশোনা ও ফুটবল খেলার সূত্রে ২০০৮ সালে আমি দমদমে থাকতাম। হঠাৎই উনি আলিপুরদুয়ার থেকে ফোন করে বললেন, মারাদোনাকে দেখতে কলকাতায় আসছেন। ছেলেকে নিয়েই মাঠে যান তিনি। ফেরার পর দেখি ওঁর গোটা পিঠে আঁচড়ের দাগ। সারা শরীর জ্বালা করছে। কিন্তু সে সব যেন তাঁর গায়েই লাগছে না। হাতে মারাদোনার শট করা ফুটবলটা উঁচিয়ে ধরে ঘরে ঢুকলেন বাচ্চাদের মতো হাসতে হাসতে। মনে হচ্ছিল, যেন বিশ্বকাপ জিতে ফিরেছেন।’’
সৌম্যরাজ জানান, ওই দিন মোহনবাগান মাঠেই ফুটবলের দাম এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। কিন্তু বেচার কোনও প্রশ্নই ওঠে না মাঠের বাইরে একটি দোকান থেকে কালো ক্যারিব্যাগ কিনে তার ভেতরে ফুটবলটা ঢুকিয়ে ফেলেছিলেন অসীম।
আলিপুরদুয়ার জংশন অরবিন্দ কলোনির ৬৬৬/সি রেল কোয়ার্টার্সেই সেনগুপ্ত পরিবারের বাস। পরিবার সূত্রের খবর, ফুটবলটি কলকাতা থেকে আলিপুরদুয়ারে নিয়ে আসার পর নিজের শোয়ার ঘরে মাথার দিকে মা-বাবার ছবির পাশে সাজিয়ে রেখে দিয়েছিলেন অসীমবাবু। প্রতিদিন স্নান করে ধুপ জ্বালিয়ে ফুটবলের পুজো করতেন তিনি। রিনাদেবী বলেন, “ফুটবল অন্ত প্রাণ ছিলেন আমার স্বামী। মারাদোনা ছিলেন তাঁর ঈশ্বর। তাই মারাদোনার শট নেওয়া ফুটবলকে কোনও দিন ছেলেকেও পা দিতে দেননি তিনি।” ২০১২ সালে মৃত্যু হয় অসীমবাবুর। আজও তাঁর শোওয়ার ঘরে খাটের পাশে একই জায়গায় ফুটবলটি রাখা। ফুটবলের পাশে রয়েছে অসীমবাবুর ছবি। স্বামীর মৃত্যুর পর রোজ বলটিকে পুজো করেন রিনাদেবী। তাঁর কথায়, “যত দিন বাঁচব, এ ভাবেই মারাদোনার ছোঁয়াকে আঁকড়ে থাকব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy