প্রতিমা গড়ছেন অর্পিতা। নিজস্ব চিত্র
স্বামী নামকরা মৃৎশিল্পী ছিলেন। বিয়ের পরে, প্রায় তিন দশক সংসার সামলানোর পাশাপাশি স্বামীকে বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমা তৈরির কাজে নিয়মিত সহযোগিতা করেছেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পরে গত সাত বছর ধরে স্বামীর দেখানো পথে প্রতিমা তৈরি করে সংসারের খরচ জোগাচ্ছেন স্ত্রী। অর্পিতা পাল। বছর সাতচল্লিশের অর্পিতার বাড়ি রায়গঞ্জের কাঞ্চনপল্লি এলাকায়। সারা বছর প্রতিমা তৈরির ফাঁকে অর্পিতা দাঁড়ান অসহায় মানুষের পাশেও। অর্পিতা বলেন, “স্বামীর মৃত্যুর পরে, প্রথম প্রথম প্রতিমা তৈরি কাজ করতে খুব অসুবিধা হত। ভাল করে প্রতিমা তৈরি করতে পারতাম না। ফলে, প্রতিমা বিক্রিও কম হত। এখন আর সমস্যা হয় না।”
অর্পিতার স্বামী গণেশ পাল দীর্ঘদিন কিডনির অসুখে ভুগে ২০১৫ সালে মারা যান। বংশ পরম্পরায় বাড়ির সামনের টিনের কারখানায় সারা বছর বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমা তৈরি করতেন গণেশ। প্রতিমা বিক্রির টাকায় চলত সংসার। সংসারে একমাত্র রোজগেরে গণেশের মৃত্যুর পরে, অর্পিতার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। অর্পিতার একমাত্র ছেলে বছর পঁচিশের জয়ন্ত কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন।
অর্পিতা বলেন, “বিয়ের পর থেকে সারা বছর স্বামীর প্রতিমা বানানো দেখতাম। ওঁকে প্রতিমা তৈরির কাজে হাতে হাতে সাহায্যও করতাম। কিন্তু, কোনও দিন ভাবিনি স্বামীর মৃত্যুর পরে আমাকে প্রতিমা তৈরি করে সংসার চালাতে হবে।” অর্পিতা জানিয়েছেন, গণেশের মৃত্যুর পরে, সারা বছর প্রতিমা তৈরির বরাত খুব কম আসত। করোনা আবহে প্রতিমা তৈরির বরাত প্রায় ছিল না বললেই চলে। ওই পরিস্থিতিতে ঘরে জমানো টাকায় কোনও মতে সংসার চালিয়ে ছেলেকে বি-টেক পাশ করিয়েছেন তিনি। তবে তার মধ্যেও যখন সময় পেয়েছেন, তখন বাপের বাড়ি সুভাষগঞ্জ এলাকায় মহিলা ও শিশুদের জন্য কাজ করেছেন।
সুভাষগঞ্জ এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, মূলত, সংসারে আর্থিক অনটনের অজুহাতে সুভাষগঞ্জের কোনও পরিবারের নাবালিকাদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে খবর পেলে, অর্পিতা ওই নাবালিকার বাড়িতে গিয়ে যাতে ১৮ বছর বয়সের আগে ওই নাবালিকার বিয়ে না দেওয়া হয়, সে ব্যাপারে পরিবারের লোকদের বোঝান। পাশাপাশি, কোনও পরিবারে গৃহবধূর উপরে নির্যাতনের অভিযোগ পেলে, তিনি ওই বাড়িতে গিয়ে নির্যাতিতা ও তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বুঝিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। সেই সঙ্গে দুঃস্থ পরিবারের অসুস্থ মহিলা ও প্রসূতিদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে করেন চিকিৎসার ব্যবস্থাও। সুভাষগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ বিথি চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘কিছু দিন আগে এলাকার এক দুঃস্থ শিশুকে অর্পিতাদি বিভিন্ন সহযোগিতা করেছেন। উনি সুযোগ পেলে সব সময় শিশু ও মহিলাদের পাশে দাঁড়ান। এটা আমাদের অনেক ভরসা।’’
অর্পিতা অবশ্য কৃতিত্ব নিতে নারাজ। বলেন, ‘‘বিপদে পাশে থাকা মানুষের ধর্ম। স্বামীর মৃত্যুর পরে, কারখানার দীর্ঘদিনের কর্মী মৃৎশিল্পী তুফান পাল ও মদন পালের সহযোগিতা ছাড়া, আমি প্রতিমা তৈরির কাজ ভাল ভাবে শিখতে পারতাম না। ওঁরা এখনও আমার কারখানায় কাজ করেন। ওঁরা যদি বিপদের দিনে আমার পাশে থাকতে পারেন, আমি কেন পারব না?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy