বন্ধুদের পাঠানো খাওয়াজের শেষ মেসেজ।
যেন সিনেমার মতো! করোনেশন সেতু থেকে তিস্তায় ঝাঁপ দেওয়ার আগে, বুধবার বিকেল ৪টে নাগাদ ফোনে কলেজের বন্ধুদের সামাজিক মাধ্যমের গ্রুপে মেসেজ করেছিলেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের প্রথম বর্ষের নিখোঁজ ছাত্র খাওয়াজ আহমেদ। সঙ্গে করোনেশন সেতুতে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে তোলা নিজস্বী। পিছনে, ভরা বর্ষার খরস্রোতা তিস্তা। শেষ মেসেজে লিখেছিলেন, ‘ফরগিভ মি বাডি, ইফ আই হার্ট ইউ ইন্টেশনালি অর বাই মিস্টেক’। দুপুরে হস্টেলের বন্ধুদের বলেছিলেন, ‘‘সেবকে যাচ্ছি।’’ তখনও কেউ কিছু না বুঝলেও, মেসেজ দেখে অনেকেরই খটকা লাগে। বন্ধুরা পাল্টা মেসেজ করেন, ‘এখন কোথায় তুই? হস্টেলে ফিরে আয়’।
বেগতিক বুঝে, এর পরে খাওয়াজের সন্ধানে দু’টি স্কুটার নিয়ে রওনা হন চার সহপাঠী। ফোনে ২৫ মিনিট ধরে তাঁরা লাগাতার ‘ভিডিও কল’ এবং ‘ভয়েস কল’ করে বোঝাতে থাকেন খাওয়াজকে। ওই ছাত্রের কাছে পৌঁছনো পর্যন্ত কথা বলে, তাঁকে ঠেকাতে হবে বলে ঠিক করে নিয়েছিলেন বন্ধুরা। তবে তা সম্ভব হয়নি। এক সময় খাওয়াজ জানান, তাঁর ফোনে এক শতাংশ চার্জ রয়েছে। এর পরেই ফোন কেটে যায়। খাওয়াজ তার পরে, সেতু থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন বলে দাবি পুলিশের। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তাঁর সন্ধান মেলেনি।
যে চার জন খাওয়াজের সন্ধানে বেরিয়েছিলেন তাঁরা তাঁর স্কুলজীবনের বন্ধু। এক সঙ্গে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। তাঁদের এক জন সাহিল আহমেদ (নাম পরিবর্তিত) ফোন করেছিলেন খাওয়াজকে। তাঁর কথায়, ‘‘ফোনে ও বলছিল, নদীতে ঝাঁপ দেবে। ডাক্তারি পড়ার চাপ নিতে পারছে না। আমরা বোঝাই, কোনও সমস্যা হবে না। তুই এ সব কেন ভাবছিস? সমস্যা হলে, আমরা এক সঙ্গে বসে আলোচনা করে মিটিয়ে নেব।’’ তাঁর দাবি, ‘‘খাওয়াজ মানসিক সমস্যায় ভুগছিল। ওকে বাঁচাতে হবে বুঝেই স্কুটার নিয়ে রওনা হয়েছিলাম। ফোনে ও কাঁদতে থাকে। আমরা সাহস দিই। বলি, ‘ভেঙে পড়িস না’। সেতুর উপর থেকে ওকে সরিয়ে আনতে চেষ্টা করি কথা বলে। ও বলে, ‘মোবাইলে এক শতাংশ চার্জ রয়েছে’। তার পরেই ফোন কেটে যায়। তখন পৌঁনে ৫টা বাজে।’’
তত ক্ষণে সেবক মোড় পার হয়ে গিয়েছিলেন চার বন্ধু। করোনেশন সেতুতে পৌঁছতে আরও ৪৫ মিনিট লাগে। সেখানে পৌঁছে তাঁরা পুলিশের কাছে শোনেন, এক বৃদ্ধ খাওয়াজকে নদীতে ঝাঁপ দিতে দেখে স্থানীয় সিভিক কর্মীকে জানিয়েছিলেন। সেতুর উপর থেকে তাঁর মোবাইল ফোন, আধার কার্ড এবং মানিব্যাগ উদ্ধার হয়েছে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে খাওয়াজকে ডেকেছিলেন বন্ধুরা। সাড়া পাননি।
মেডিক্যাল কলেজের সহকারী ডিন জগদীশ বিশ্বাস, অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহা এ দিন করোনেশন সেতুতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলেন। সহকারী ডিন বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের রামপুর থেকে ওই ছাত্রের বাড়ির লোকেরা রওনা হয়েছেন।’’
আফসোস যাচ্ছে না চার বন্ধুর। সাহিলরা বলছেন, ‘‘ফোনে কথা চালিয়ে যেতে পারলে, হয়তোওকে ঝাঁপ দেওয়া থেকে আটকাতে পারতাম!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy