রাজস্থানে নির্মীয়মাণ বিদ্যুতের টাওয়ার ভেঙে মৃত্যু হয়েছে দাদার। মঙ্গলবার দিনভর তাঁর নিথর দেহ ঘরে ফেরার অপেক্ষায় শোকের প্রহর গুনছে পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবার। তবুও দাদার স্বপ্নপূরণে মাধ্যমিকের ভূগোল পরীক্ষা দিল বোন। দুপুরে এমনই ছবি দেখা গেল মালদহের ইংরেজবাজারের মিল্কির মির্জাপুরে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজস্থানের পলসনায় নির্মীয়মাণ বিদ্যুতের টাওয়ার ভেঙে মারা যান মিল্কির মির্জাপুরের সামিউল শেখ (২২)। ঘটনায় জখম হন ইংরেজবাজারের মিল্কি এবং শোভানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের আরও পাঁচ শ্রমিক সফিকুল শেখ, মিঠুন খান, রাসেল শেখ, হেলু শেখ ও মনিরুল শেখ। তাঁরা রাজস্থানেরই একটি হাসপাতালে ভর্তি। মাসখানেক আগে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে তাঁরা টাওয়ারের কাজে রাজস্থানে যান। সোমবার দুপুরে আচমকাই নির্মীয়মাণ টাওয়ারটি ভেঙে পড়ে যায়। সে সময় টাওয়ারের উপরে ছিলেন সামিউল। ঘটনাস্থলেই সামিউলের মৃত্যু হয়।
মাত্র দু’মাস আগে ভিন্ রাজ্যে কাজে গিয়ে টাওয়ার থেকে পড়ে মিল্কি ও শোভানগরের বাসিন্দা তিন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। ভিন রাজ্যে কাজে গ্রামের যুবকদের মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত থাকায় উদ্বিগ্ন গ্রামবাসীরা। পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম বলেছেন, “টাওয়ারের কাজগুলিতে সুরক্ষাবিধি মানা হচ্ছে না। বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে। মৃত শ্রমিকের পাশে রাজ্য সরকার আছে।” মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, “পরিযায়ী শ্রমিক পোর্টালে সামিউলের নাম আছে কি না দেখা হচ্ছে। দেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হচ্ছে। জখম শ্রমিকদের পাশে প্রশাসন রয়েছে।” সামিউলের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পরিবার। তিন ভাই বোনের মধ্যে সামিউল মেজো। বোন মিল্কি হাই স্কুলের ছাত্রী। তার মাধ্যমিকের সিট পড়েছে ইংরেজবাজারের নিবেদিতা হাই স্কুলে।পরীক্ষা দিয়ে ফিরে বোন সবনম খাতুন বলে, ‘‘আমাকে পড়াতে দাদা রাজস্থানে কাজে গিয়েছিল। দাদা নেই। দাদার স্বপ্নপূরণে পরীক্ষা দেওয়া থামাইনি।” মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মালদহের আহ্বায়ক বিপ্লব গুপ্ত বলেন, “মেয়েটির পাশে পর্ষদ রয়েছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)