Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
সীমান্তের দিনরাত্রি
Dinhata

Identity proof: আধার কার্ডেও দরজা খোলে না সীমান্তের

এখানে কাঁটাতারের ও-পারে সীমান্তের ধারে জমিতে ধান পাকলে কেটে বাইরে নিয়ে যাওয়ার নাকি ‘হুকুম’ নেই, বলছেন স্থানীয় চাষিরা।

এই সেই কার্ড।

এই সেই কার্ড। নিজস্ব চিত্র।

সুমন মণ্ডল 
দিনহাটা শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২১ ০৮:৩৯
Share: Save:

এই মুলুকে আধার বা ভোটার কার্ডে কাজ হয় না। পকেটে রাখতে হয় বিএসএফের দেওয়া পরিচয়পত্র।

এখানে কাঁটাতারের ও-পারে সীমান্তের ধারে জমিতে ধান পাকলে কেটে বাইরে নিয়ে যাওয়ার নাকি ‘হুকুম’ নেই, বলছেন স্থানীয় চাষিরা।

এখানকার বাসিন্দা আমান আলি শেখ বলছিলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে বিয়ে হয়েছে আমার বোনেদের। তখন এত কড়াকড়ি ছিল না। আধার বা ভোটার কার্ড থাকলেই সহজে যাতায়াত করা যেত।’’ তাঁর দাবি, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে বিএসএফের ১৯২ ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা সীমান্তে কড়াকড়ি বাড়িয়েছেন। তাতে সাধারণ মানুষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’’

সমস্যার আরও রকমফের আছে, জানালেন অন্য বাসিন্দারাও। ইউনুস শেখ বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে আটিয়ালডাঙা গ্রামে কাঁটাতারের বেড়ার এ-পারে এক পাচারকারীকে ধাওয়া করে বিএসএফ। তাকে নাকি মাথায় আঘাত করেছিল তারা। কিন্তু ধরে নিয়ে যাওয়ার সময়ে সে বিএসএফের হাত ছেড়ে পালিয়ে যায় বলে শুনলাম। পরের দিন বিএসএফ জওয়ানরা গ্রামের সব পুরুষকে ডেকে পাঠায় ৪৮ নম্বর গেটের সামনে। সবাইকে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে মাথা পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু কারও মাথাতেই আঘাতের চিহ্ন ছিল না।’’ হাঁফ ছেড়ে ইউনুস বলেন, ‘‘যে পালিয়েছে, সে কি আর আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকবে?’’

এই গ্রাম, আটিয়ালডাঙা, দিনহাটা ২ নম্বর ব্লকের বামনহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের অংশ। এই দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহই বারবার সীমান্তে সাধারণ মানুষের হেনস্থার অভিযোগ তুলছেন। যা নিয়ে শোরগোলও হয়েছে বিধানসভায়। পাল্টা কটাক্ষ করেছে বিজেপি।

অন্য সব সীমান্তবর্তী এলাকার মতো এখানেও নিয়মের বেড়াজাল আছে। তাতে বাঁধাও পড়ে আছেন সাধারণ মানুষ। তাঁরাই বলছেন, সে সব সয়ে গিয়েছে এত দিনে। কিন্তু সম্প্রতি যে কড়াকড়ি শুরু হয়েছে, তাতে নতুন করে সমস্যা বেড়েছে, বলছেন তাঁরাই। আমান আলি বলেন, ‘‘শুধু আমার বোনেরা নয়, আমি নিজেও বিয়ে করেছি অন্যত্র। আমার শ্বশুর নুরবক্স মিয়াঁ কয়েক দিন আগে আমাদের বাড়িতে আসছিলেন। কিন্তু বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছতে পারলেন না।’’ কেন? আমান বলেন, ‘‘কাঁটাতারের দরজায় তিনি ভোটার কার্ড, আধার কার্ড এই সবই দেখান। কিন্তু বিএসএফ অনুমতি দেয়নি। আমরা অনুরোধ করেছিলাম, এক ঘণ্টার জন্য দরজা খোলা হোক। উনি তার মধ্যে খেয়ে দেয়ে চলে যাবেন। ততক্ষণ আমি বিএসএফ জওয়ানদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকব। কিন্তু কেউ কান দেয়নি আমার কথায়।’’ আমানের কথায়, ‘‘এত কড়াকড়ি তো আগে ছিল না।’’

বিএসএফের এক অফিসার বলেন, ‘‘ওই কার্ড অনেক দিন ধরেই চালু। গ্রামবাসীদের সুবিধের জন্যে আলোচনার মাধ্যমে তা তৈরি করা হয়েছে।’’ দিনহাটার মহকুমাশাসক হিমাদ্রী সরকার বলেন, ‘‘ওই কার্ড ছাড়া বাসিন্দাদের যাতায়াত করতে দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ পেয়েছি। বিএসএফের কমান্ড্যান্টের সঙ্গে কথাও হয়েছে। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।’’

হেমন্তের মরা বিকেলের রোদে কাঁটাতারের ও-পারে ধানি জমি পড়ে থাকে। উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন আমান আলি, ইউনুস শেখরা। (শেষ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dinhata BSF Aadhar card
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy