খুদেদের পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন মণীন্দ্রনাথ সরকার। নিজস্ব চিত্র
বয়স প্রায় ৯২ বছর। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে গৃহশিক্ষকতা করছেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থানার ত্রিমোহিনী এলাকার মনীন্দ্রনাথ সরকার বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েননি এখনও। গ্রামের কচিকাঁচাদের পড়িয়ে যা সামান্য টাকা পান, তা দিয়ে এই বয়সে পরিবার নিয়ে কষ্টেসৃষ্টে দিন চলে। কিন্তু শিক্ষকের মহৎ পেশা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চান না অশীতিপর মণীন্দ্রনাথ। ছাতা মাথায় গ্রামের রাস্তা ধরে রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে নিয়মিত ছাত্র পড়াতে যাওয়ায় ছেদ পড়েনি।
মণীন্দ্রনাথের হাত দিয়ে কত কচিকাঁচা আজ বড় হয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তবে তিনি যে রকম ছিলেন, এখনও তেমনই রয়েছেন। শুধু চোখে উঠেছে ভারী চশমা। শিক্ষক দিবসের মাহাত্ম্য অন্তর থেকে উপলব্ধি করেই কি প্রাতিষ্ঠানিক সম্মানের আশা না করে গৃহশিক্ষকতার পেশাকে বেছে নিয়েছিলেন যৌবন-কাল থেকেই?
রাস্তায় চলতে চলতে কোনও ছাত্র ধুপ করে নিচু হয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলে তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের ছেলেবেলার মুখাবয়ব চশমার কাচ ঘষে চেনার চেষ্টা করেন। চিনতে না পারলে সেই এককালের ছাত্র যখন তাঁকে নাম বলেন, তখন খুশিতে বুক ভরে ওঠে মণীন্দ্রনাথের। চোখের কোনে চিক চিক করে ওঠে স্নেহ মাখানো জল। ‘‘এটাই আমার কাছে শিক্ষক দিবসের বিশেষ সম্মান পাওয়ার চেয়েও বড় সম্মান’’, বলেন মনীন্দ্রনাথ। স্কুল ফাইনাল পাশ। তবে কোনও দিন সরকারি স্কুলে শিক্ষকের চাকরির জন্য আবেদন করেননি বলে জানান তিনি। অভিভাবকেরা জানান, সেই ধলপাড়া এলাকা থেকে হেঁটে গ্রামের ভেতরে পড়াতে আসেন ‘মনীন্দ্রবাবু’। কামাই করতে দেখেননি কেউ। বর্তমানে তিনি গ্রামের পাঁচ খুদে পড়ুয়াকে পড়ান। ভালই পড়ান বলে জানান, এক অভিভাবক আব্দুল হামিদ মণ্ডল।
কিন্তু কত দিন আর এই সামান্য অর্থে সংসার চলবে? প্রশ্ন শুনে খানিক চুপ করে থেকে তিনি বলেন, ‘‘কারও কাছে নিজে থেকে কোনও দিন সাহায্য চাইনি।’’ তবুও যদি কোনও সরকারি সুবিধা বা সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা হয়, তা নিতে তাঁর আপত্তি নেই। এতে তিনি উপকৃতই হবেন বলে জানান।
শিক্ষককে মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়। আর শিশুশিক্ষাই কচিকাঁচা পড়ুয়াদের ভিত গড়ে দেয় বলে শিক্ষাবিদরা মনে করেন। কোনও দিকে না তাকিয়ে নিঃস্বার্থ ভাবে মনীন্দ্রনাথ ধলপাড়া গ্রামে শিশুদের ওই ভিত শক্ত করার কাজ করে চলেছেন।
ফি বছর শিক্ষক দিবসে শিক্ষারত্ন, জাতীয় শিক্ষক সম্মানের আড়ম্বর-অনুষ্ঠানের আড়ালেই থেকে যান মনীন্দ্রনাথের মতো শিক্ষকেরা। কোনও সরকারি তকমার আশা না করেই গ্রাম বাংলার ঘরে জ্ঞানের আলো পৌঁছে দিতে দুঃস্থ ওই গৃহশিক্ষকের নিঃশব্দ লড়াই এখনও সম্মানিত এলাকাবাসীর কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy