‘চুপচাপ ফুলে ছাপে’র’ মতো চোরা স্রোত কী প্রায় চার দশকের পুরনো ‘লাল দুর্গ’কে খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে দিল! বিধানসভা উপনির্বাচনে ফলের পর ময়নাগুড়ির বামফ্রন্ট শিবিরে এই প্রশ্ন উঠেছে। কীভাবে তৃণমূল এলাকা দখল করে নিল, সেই প্রশ্নই খোঁজা শুরু করেছেন আরএসপি নেতৃত্ব।
কেন ধন্দে পড়বেন না বাম নেতারা? রাজ্যে ‘পরিবর্তনে’র ঝড় সত্ত্বেও মাত্র তিন বছর আগে ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে দলের যে প্রার্থী ১৬ হাজার ২৭৬ ভোটে তৃণমূলকে পরাজিত করেছিলেন, এ বার দলত্যাগের পরেও তাঁর কাছে হার মানতে হল ৩১ হাজার ৮৩৯ ভোটে। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে আরএসপি প্রার্থী অনন্তদেব অধিকারীর পান ৮৪ হাজার ৮৮৭টি ভোট। তৃণমূল প্রার্থী পেয়েছিলেন ৬৮ হাজার ৬১১টি ভোট। গত ২১ জানুয়ারি অনন্তদেববাবু দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দিয়ে এবার উপ নির্বাচনে আরএসপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তিনি পেয়েছেন ৯৮ হাজার ৯৯০ ভোট। আর আরএসপি-র ঝুলিতে পড়েছে মাত্র ৬৭ হাজার ১৫১টি ভোট। অনন্তবাবু দলত্যাগ করে প্রার্থী হওয়ায় আরএসপি নেতৃত্বের একাংশের দাবি ছিল, তাঁদের জয়ের পথ অনেকটাই মসৃণ। কিন্তু ভোটের ফল অন্য কথাই বলল।
আরএসপির জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দেবব্রত ঘোষ বলেন, “কেমন করে ওই ফলাফল হল, তা কিছুই বুঝতে পারছি না। মমতা ঝড় তো ছিল না। তবে চুপচাপ ফুলে ছাপের চোরাস্রোতের টানে আসন হাত ছাড়া হল কি না তা দেখতে হবে। আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে।” সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বিজয়বন্ধু মজুমদার বলেন, “ফল পর্যালোচনা না করে এখনই কিছু বলব না। বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তা শুরু করেছি।”
তৃণমূলের ময়নাগুড়ি ব্লক সভাপতি মনোজ রায় অবশ্য বলেন, “গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকে এলাকায় বামফ্রন্টের সংগঠন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। অনেক এলাকায় ওঁদের অস্তিত্ব নেই। প্রদেশ নেতৃত্বকে জানিয়ে রেখেছিলাম, উপ-নির্বাচনে কম করে হলেও ৩০ হাজার ভোটে জিতব। সেটাই হয়েছে।” সংগঠনের ভিতের এই অবস্থা তা বাম নেতৃত্বের কি নজরে আসেনি? আরএসপি-র ময়নাগুড়ি জোনাল সম্পাদক অতুল রায় বলেন, “আশা ছিল ভাল ভোটে জিতব। আমরা বুঝতে পারিনি।”
১৯৫১ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ময়নাগুড়ি বিধানসভা কংগ্রেসের দখলে ছিল। এর পরে ১৯৭৭ সালে রাজ্যের সঙ্গে ওই বিধানসভা আসনেও পালা বদল ঘটে। বামফ্রন্টের শরিক আরএসপি আসনটি দখল করে বিধায়ক নির্বাচিত হন তারকবন্ধু রায়। সেই শুরু। একের পর এক নির্বাচনে জয়লাভের সুবাদে ময়নাগুড়িও ‘লাল দুর্গে’র পরিচিতি লাভ করে। বিধানসভা আসন তো বটেই, এলাকার ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ৩টি জেলা পরিষদ আসন, পঞ্চায়েত সমিতি সবই ছিল বামেদের। ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনে প্রবল মমতা ঝড় প্রতিরোধ করেও আরএসপি বিধানসভা আসনটি দখলে রাখে।
তবে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আসতে ময়নাগুড়ির রাজনৈতিক ছবি দ্রুত পাল্টাতে শুরু করে। বাম নেতা ও কর্মীদের মধ্যে তৃণমূলে যোগদানে হিড়িক শুরু হয়। বাম শিবিরের সাংগঠনিক শক্তির ফাটল প্রকাশ্যে চলে আসে। চেষ্টা করেও বাম নেতৃত্ব যে সাংগঠনিক শক্তি ধরে রাখতে পারেনি, সেটা পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলে স্পষ্ট হয়ে যায়। ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৪টি এবং জেলা পরিষদের ৩টি আসনের ২টি তৃণমূল ছিনিয়ে নেয়। এই ধাক্কা সামলে না উঠতে আরএসপি বিধায়ক অনন্তবাবু তৃণমূলে যোগদানের কথা ঘোষণা করলে বাম সাংগঠনের ভাঙন আরও দ্রুত হয়। আরএসপির নিচু তলার নেতার একাংশের নালিশ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে নেতারা ঘরে বসে পড়েন। এলাকার প্রচুর কর্মী গোপনে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলা শুরু করেন। একথা উপর মহলে জানানোর পরেও তাঁরা ব্যবস্থা নেননি। ফল যা হওয়ার, তাই হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy