Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

সালিশি-নির্দেশে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে খুন বধূ, নালিশ ইংরেজবাজারে

পণের দাবিতে অত্যাচারের অভিযোগে বছরখানেক আগে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে এসেছিলেন বধূ। মঙ্গলবার রাতে গ্রামের মাতব্বরেরা সালিশি সভা ডেকে বধূকে জোর করে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সভার নির্দেশে ওই রাতেই বধূকে ছেলে-সহ বাড়ির পাশেই শ্বশুরবাড়িতে যেতে হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৪ ০৩:০২
Share: Save:

পণের দাবিতে অত্যাচারের অভিযোগে বছরখানেক আগে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে এসেছিলেন বধূ। মঙ্গলবার রাতে গ্রামের মাতব্বরেরা সালিশি সভা ডেকে বধূকে জোর করে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সভার নির্দেশে ওই রাতেই বধূকে ছেলে-সহ বাড়ির পাশেই শ্বশুরবাড়িতে যেতে হয়। বুধবার সকালে শ্বশুরবাড়ির আমগাছ থেকে ওই বধূর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে।

মালদহের ইংরেজবাজার থানার শোভানগর গ্রামে ওই সালিশি সভায় স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের সদস্যা, স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের স্বামী-সহ এলাকায় দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ। মৃতা বধূর পরিবারের তরফে পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে সালিশি সভার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, সালিশি সভায় মাতব্বরেরাই জোর করে বধূকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছে। শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা খুন করে বধূকে আমগাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। মৃতার পরিবারের দাবি সালিশি সভার নির্দেশের জেরেই বধূকে মরতে হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত বধূর নাম রিনা বিবি (২২)। বধূর বাবা চারু শেখ অভিযোগ করে বলেন, “শ্বশুরবাড়ি লোকেরা আমার মেয়েকে খুন করে আমগাছে ঝুলিয়ে দিয়েছে। কাল রাতে সালিশি সভার মাতব্বররা যদি জোর করে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি না পাঠাতো তবে ওকে মরতে হতো না। গতকাল রাতে মেয়ে কিছুতেই শ্বশুরবাড়িতে যেতে চাইছিল না।” শ্বশুরবাড়িতে গেলে যে তাঁকে মারধর করা হবে সে কথাও সালিশি সভায় একাধিকবার রিনা বিবি জানিয়েছিলেন বলে পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে। ঘটনার পরেই মৃত বধূর স্বামী শেখ আলাউদ্দিন এবং পরিবারের সবাই পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে বধূর শ্বশুর শেখ মুর্শিদকে পুলিশকে ধরছে। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে। ঘটনার পেছনে কারা রয়েছেন, কোনরকম প্ররোচণা রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।”

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন বছর আগে রিনা শেখের সঙ্গে পড়শি দিনমজুর শেখ আলাউদ্দিনের বিয়ে হয়। দম্পতির এক বছর চার মাসের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বধূর পরিবারের অভিযোগ, সন্তান জন্মের পর থেকেই জামাই ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পণের দাবিতে মারধর শুরু করে। বছর খানেক আগে রিনা বিবি সন্তানকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে আসে বলে জানা যায়। শ্বশুরবাড়ির থেকে রিনা বিবিকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ শুরু হলেও অত্যাচারের ভয়ে বধূ রাজি হননি বলে পুলিশ তদন্তে জেনেছে।

ছেলের বউকে ফিরিয়ে আনতে শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য হাসিবুন বিবি ও তাঁর স্বামী পিন্টু শেখ, তৃণমূল পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা নূর নেহারের দ্বারস্থ হয়েছিল বলে অভিযোগ। সালিশি সভায় হাজির ছিলেন স্থানীয় তৃণমূলের শোভানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হাসিবুন বিবি ও তাঁর স্বামী পিন্টু শেখ, ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্যা নূর নেহার ও তাঁর স্বামী একাধিক কর্মী সদস্য হাজির ছিলেন বলে বধূর পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন।

তৃণমূল নেতারা অবশ্য মেয়ের বাড়ির সদস্যরাই জোর করেছেন বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন। পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সদস্যা নূর নেহার বলেন, “রিনা বিবির বাবা মায়েরাই সালিশি সভা ডেকেছিল। মেয়ের বাবা সহ অনান্যরাই তাঁকে জোর করে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছেন।” স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য হাসিবুন বিবির স্বামী পিন্টু শেখ বলেন, “সালিশি সভায় আমার স্ত্রী ছিলেন না। আমি হাজির ছিলাম। কবে আমরা কেউ জোর করে বধূকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাইনি।”

দলের জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকায় অস্বস্তিতে পড়েছে দল। বিষয়টিকে রাজনৈতিক না বলে পারিবারিক বলেই দাবি করেছে দলের স্থানীয় নেতারা। ইংরেজবাজার পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সহকারি সভাপতি সাকিলা বিবি বলেন, “কাল রাতে ওই গ্রামে সালিশ সভা বসেছিল বলে শুনেছি। তবে এর মধ্যে রাজনীতি নেই। বিষয়টি পারিবারিক।” জোর করে যে মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো উচিত হয়নি তাও স্বীকার করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “শুনেছি ওই সালিশি সভায় ওই মেয়েটি শ্বশুরবাড়ি যেতে চাইছিল না। খুনের আশঙ্কাও নাকি করেছিল। তারপরে কেন এমন হল তা দেখা দরকার।”

ওই বধূর শ্বশুর ধৃত শেখ মুর্শিদের দাবি, “আমরা ওকে খুন করিনি। আমার ছেলের বউ আত্মহত্যা করেছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

murder woman rina bibi settlement rules
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy