Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

দুর্ঘটনা চলছেই মরা তোর্সার সেতুতে, প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিতর্ক

দীর্ঘদিন ধরে বেহাল হয়ে রয়েছে মরা তোর্সার কাঠের সেতু। তা সংস্কারের ব্যাপারে নানা মহলে দরবার করেও লাভ হয়নি। বরং দুর্ঘটনা দৈনন্দিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুর হাল ফেরাতে কেউ উদ্যোগী হননি। শনিবার বেহাল সেতুতে দুর্ঘটনায় জখম হন মঞ্জু দাস নামে এক মহিলা। সোমবারেও অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন এক স্কুটারচালক। এলাকার বিধায়ক বাম শিবিরের। সাংসদ তৃণমূলের। ভোটের আগে সকলেই সেতুর হাল ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন এমনই অভিযোগ বাসিন্দাদের।

এভাবেই চলছে নিত্য দিনের যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র।

এভাবেই চলছে নিত্য দিনের যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৯
Share: Save:

দীর্ঘদিন ধরে বেহাল হয়ে রয়েছে মরা তোর্সার কাঠের সেতু। তা সংস্কারের ব্যাপারে নানা মহলে দরবার করেও লাভ হয়নি। বরং দুর্ঘটনা দৈনন্দিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুর হাল ফেরাতে কেউ উদ্যোগী হননি। শনিবার বেহাল সেতুতে দুর্ঘটনায় জখম হন মঞ্জু দাস নামে এক মহিলা। সোমবারেও অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন এক স্কুটারচালক।

এলাকার বিধায়ক বাম শিবিরের। সাংসদ তৃণমূলের। ভোটের আগে সকলেই সেতুর হাল ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন এমনই অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাই এবার সই সংগ্রহ অভিযানে নামলেন কোচবিহারের টাকাগছ এলাকার বাসিন্দারা। সোমবার কোচবিহার শহর লাগোয়া ওই এলাকার বাসিন্দারা একজোট হয়ে এমন আন্দোলনে সামিল হয়েছেন।

তবে প্রতিশ্রুতি নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে শাসক ও বিরোধী শিবিরের মধ্যে।

কোচবিহার (উত্তর) কেন্দ্রের ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়ক নগেন্দ্রনাথ রায় সাফ বলেন, “আমি ওই সেতুর ব্যাপারে কোনও প্রতিশ্রুতি দিইনি। বিধায়ক উন্নয়ন তহবিল থেকে সেতুর মত বড় কাজ করা সম্ভব নয়। সাংসদ তহবিল থেকে কাজ করা যেতে পারে। জেলা পরিষদের সঙ্গেও কথা বলব।”

এলাকার জেলাপরিষদ সদস্য সিপিএমের মীরা দাস বলেন, “জেলা উন্নয়ন প্রকল্পে ওই কাজের প্রস্তাব দেব।” কোচবিহারের তৃণমূল সাংসদ রেণুকা সিংহ বলেন, “নির্বাচনের কিছুদিন পর ওই এলাকায় গিয়ে সেতুর সমস্যার কথা জানতে পেরেছি। তখন সাংসদ উন্নয়ন তহবিলে বরাদ্দ ছিল না। বিষয়টি জেলা পরিষদের কর্তাদের জানাতে বলেছিলাম। আমি নিজেও সভাধিপতির সঙ্গে কথা বলেছি। জেলা পরিষদ সংস্কার কাজ করবে। পরিস্থিতি বুঝে আমিও ব্যবস্থা নেব। বাম আমলে কোনও কাজ হয়নি।” তাঁর পারমর্শ, “ওই এলাকায় বামেদের বিধায়ক আছেন। সব কাজে শুধু সাংসদকে চাপ দিলে হবে না।”

ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জানান, কোচবিহার শহর লাগোয়া টাকাগছ ও সুঙসুঙি বাজার এলাকায় সরাসরি যাতায়াতের ভরসা মরা তোর্সার ওপর তৈরি ওই কাঠের সেতু। প্রায় দুই দশক আগে কোচবিহার জেলা পরিষদের উদ্যোগে সেতুটি তৈরি হয়। কিন্তু সেভাবে রক্ষনাবেক্ষণ করা হয়নি। বছর দুয়েক থেকে সেতুর কাঠের পাটাতন উঠতে শুরু করে। তার পরেও কোনও মহলের টনক নড়েনি। সম্প্রতি ওই সেতু দিয়ে যাতায়াত করা রীতিমতো ঝুঁকির ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। কিছুদিন আগে কোচবিহারের পিলখানা এলাকায় নদীতে পড়ে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

রেলিংবিহীন বেহাল সেতুর জন্য দুর্ঘটনায় ওই যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ তুলে জনতা ওই সেতুটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে তার পর অন্তত এই সেতুটির ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগী হবে বলেও তাঁদের অনেকে ভেবেছিলেন। কিন্তু আখেরে লাভ হয়নি।

টাকাগছের বাসিন্দা ভারতী দাস বলেন, “সেতুটির অবস্থা এতটাই খারাপ যে রিকশা পর্যন্ত দুলছে। বাধ্য হয়েই ঝুঁকির যাতায়াত এড়াতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে নামতে হয়েছে।”

রাজ্যের পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য বলেন, “গণসাক্ষর আন্দোলনের কোন দরকার নেই। কারা এ সব করছেন জানি না। ইতিমধ্যে জেলা পরিষদের অর্থ বিষয়ক কমিটিতে ওই সেতু সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। দ্রুত মেরামতের টেন্ডার ডাকা হবে।” কোচবিহার জেলা পরিষদের সভাধিপতি পুষ্পিতা ডাকুয়াও জানিয়েছেন, খুব তাড়াতাড়ি সেতুর সংস্কারের কাজ শুরু করার চেষ্টা হচ্ছে। টাকাগছ ও সুঙসুঙি বাজার এলাকার মাঝে তৈরি ওই সেতু পেরিয়ে কাড়িশাল, দামোদরপুর, মালতিগুড়ি, কামিনীরঘাট ও লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। তার উপর ওই এলাকা থেকে কোচবিহার শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজে ছাত্র-ছাত্রীরা যাতায়াত করেন। সেতুর জরাজীর্ণ অবস্থার জন্য চিকিত্‌সার জন্য অসুস্থ রোগীদের ভ্যান কিংবা গাড়িতে প্রায় চার কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে বিকল্প পথে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

গণস্বাক্ষর সংগ্রহের উদ্যোক্তা নাগরিক রক্ষা কমিটির কর্তা বাবলু রহমান বলেন, “ভোটের সময় সবাই সেতুর হাল ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দেন। তারপর ফিরে তাকান না। তাই সবাই একজোট হয়ে রাজনীতির বাইরে গিয়ে নাগরিক হিসাবে আমরা গণস্বাক্ষর সংগ্রহে নেমেছি। প্রশাসনের কর্তাদের তা দেওয়া হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

accident torsa bridge cooch behar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy