মালদহ মেডিক্যাল কলেজের মর্গের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহত মহিলার মেয়ে পূর্ণিমা। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়
মেয়েদের সামনে স্ত্রীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে সতীশ মাহাতো নামে এক ব্যক্তি ও তার দুই দাদা, দুই ভাইপো এবং এক বৌদির বিরুদ্ধে। সতীশের বড় মেয়ে পূর্ণিমা অনেক চেষ্টা করেও মা-র গায়ের আগুন নেভাতে পারেনি।
মালদহের হবিবপুরের পলাশবোনা গ্রামের বাসিন্দা রেণুকা মাহাতো (৩৫) নামে ওই মহিলার গায়ে ২৯ ডিসেম্বর সকালে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। চার দিন প্রচণ্ড যন্ত্রণা সহ্য করার পরে শুক্রবার ভোরে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গিয়েছেন তিনি। রেণুকাদেবীর বাবা নিত্য মাহাতো জামাই ছাড়াও সতীশের দুই দাদা সুদন ও প্রতিলাল এবং তার দুই ভাইপো কার্তিক ও নিখিল এবং মেয়ের এক জা রমা মাহাতোর বিরুদ্ধেও খুনের অভিযোগ করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরেই পুলিশ সতীশ ও কার্তিককে গ্রেফতার করে। তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গোটা ঘটনার সাক্ষী রেণুকাদেবীর ছোট মেয়ে বছর সাতেকের পম্পা। সে দিন সকাল সাতটা নাগাদ সে নিজেদের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল। তার মা কাজ করছিলেন কাছেই। হঠাত্ বাড়ির সদর দরজা খুলে বাবা, দুই জ্যাঠা, দুই জ্যাঠতুতো ভাই ও এক জ্যাঠাইমা ঢুকে মা-কে একরকম পাঁজাকোলা করে ঘরে নিয়ে যায়। তারপরে পম্পার চোখের সামনেই রেণুকাদেবীর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। মা-কে চিত্কার করে উঠতে দেখে পম্পা ছুটে গিয়ে খবর দেয় বড় দিদি দশম শ্রেণির ছাত্রী পূর্ণিমাকে। পূর্ণিমা ছুটে এসে ঘরে ঢুকে বিছানার চাদর দিয়ে মায়ের গায়ের আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। সতীশেরা তখন তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে তারপরেও পূর্ণিমা তাদের হাত ছাড়িয়ে বারান্দা থেকে বালতি করে জল এনে মায়ের গায়ে ঢালে। তবে ততক্ষণে রেণুকাদেবী গুরুতর আহত হয়ে পড়েছেন। পাড়া প্রতিবেশীরাও ছুটে এসেছিলেন। তাঁরাই রেণুকাদেবীকে প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালে থাকাকালীন রেণুকাদেবীর জবানবন্দি নিয়েছে পুলিশ। তাঁর তিন মেয়ে পূর্ণিমা, পূজা ও পম্পার সঙ্গেও পুলিশ কথা বলেছে। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী পূজা অবশ্য ঘটনার সময় বাড়িতে ছিল না।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর কুড়ি আগে দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারি থানার দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা নিত্যবাবুর মেয়ে রেণুকার সঙ্গে সতীশের বিয়ে হয়। হবিবপুরের কানতুর্কায় সতীশের একটি সারের দোকান রয়েছে। সতীশেরা তিন ভাই। পাশাপাশি বাড়ি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, গত ২৩ ডিসেম্বর জমি-জায়গা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সতীশ ও তার দুই দাদার বচসা হয়। অভিযোগ, সুদন ও প্রতিলাল সতীশের জমি নিজেদের নামে করে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। সেই সময় রেণুকা বাধা দেন। তখন তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। রেণুকা তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে হবিবপুর থানায় অভিযোগও করেন।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা, দাদাদের নামে হবিবপুর থানায় অভিযোগ করায় ক্ষুব্ধ সতীশ স্ত্রীকে খুনের ষড়যন্ত্রে যোগ দেয়। পূর্ণিমা বলে, “জ্যেঠুরা বাবাকে মদ খাইয়ে সব কিছু নিজেদের নামে করে নিতে চাইত। মা তাতে বাধা দেওয়ায় ওরা মা-কে মারধর করে। মা থানায় অভিযোগ জানালে ওরা মা-কে খুনের চেষ্টা করে।” পম্পার চোখেমুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ। তাদের নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছেন নিত্যবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy