Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

জোড়হাতে ভোট চাইলেন মমতা

প্রাক্তন সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্ত্রী দীপাদেবীর বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ আসনে তৃণমূল প্রিয়বাবুর ভাই সত্যরঞ্জন (পবিত্র) দাশমুন্সিকে প্রার্থী করেছেন। তাঁর সমর্থনেই শুক্রবার দুপুরে উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘি ব্লকের রসাখোয়া হাইস্কুল মাঠে একটি জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

করণদিঘির সভায়। শুক্রবার। ছবি: তরুণ দেবনাথ।

করণদিঘির সভায়। শুক্রবার। ছবি: তরুণ দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
করণদিঘি ও ইসলামপুর শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

প্রাক্তন সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির স্ত্রী দীপাদেবীর বিরুদ্ধে রায়গঞ্জ আসনে তৃণমূল প্রিয়বাবুর ভাই সত্যরঞ্জন (পবিত্র) দাশমুন্সিকে প্রার্থী করেছেন। তাঁর সমর্থনেই শুক্রবার দুপুরে উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘি ব্লকের রসাখোয়া হাইস্কুল মাঠে একটি জনসভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। দু’হাতের মাঝে কর্ডলেস মাইক্রোফোন ধরে হাত জোড় করার ভঙ্গিমায় মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি, “আপনারা তো বারবার কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। অতীতে সিপিএমকেও ভোট দিয়েছেন। গত ৩৪ বছরে সিপিএম রাজ্যের সর্বনাশ করেছে। কংগ্রেস মূল্যবৃদ্ধি ও দেশ বিক্রির চক্রান্ত করেছে। এ বারে আমরা রায়গঞ্জে প্রথম লড়ছি। এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বার বার কংগ্রেসকে জেতালেন। এবার আমাদের প্রার্থীকে সমর্থন করুন।”

(বাঁ দিকে) করণদিঘির মঞ্চে রায়গঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী সত্যরঞ্জন
দাশমুন্সির সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (ডান দিকে) চোপড়ার মঞ্চে
দার্জিলিং কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়ার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসকে নানা বিষয়ে আক্রমণ ছিল। সেই সঙ্গে একবারও নাম উচ্চারণ না করেই, করণদিঘির সভায় দীপাদেবীকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সকাল থেকে সেজেগুজে কুৎসা রটানো ও কয়েকটি টিভি চ্যানেলে বড় বড় কথা বলাই ওঁর প্রধান কাজ। মমতার নামে কুৎসা রটিয়ে লাভ নেই। মানুষের কাছে যাবেন না, উন্নয়ন করবেন না, শুধু নাটকই করবেন। এ বার মানুষ এ সব বরদাস্ত করবে না।” মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, গত ১৫ বছর ধরে কংগ্রেস রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রটি ধরে রাখলেও মানুষকে ভাঁওতাবাজি, ধোঁকা ও মিথ্যা কথা বলা ছাড়া কিছুই করেনি। সভাতে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পবিত্রবাবু সাংসদ নির্বাচিত হলে জেলার সার্বিক উন্নয়নের কাজ করতে অনেক সহজ হবে। তৃণমূলনেত্রীর কথায়, “পবিত্র প্রিয়দার ভাই। বর্তমানে রাজনীতিটা কে কলুষিত করছে, তা সবাই জানেন। আমি ওঁর নাম মুখে আনতে চাই না। ওঁরাই এতদিন সিপিএমকে তোল্লা দিয়েছেন।”

মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ এবং কটাক্ষ প্রসঙ্গে মন্তব্য এ দিন অড়িয়ে গিয়েছেন দীপাদেবী। তিনি বলেন, “আমি এখন প্রার্থী। এখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কাজিয়ায় গেলে, কাজ নষ্ট হবে। যা বলার দল বলবে। এটাই আমার সঙ্গে অন্যদের পার্থক্য।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “যে দলের নেতা কর্মীরা ধর্ষণ, তোলাবাজি, খুন ও বিভিন্ন সমাজবিরোধী কার্যকলাপে অভিযুক্ত হন, সেই দলের দলনেত্রী দীপাদেবীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করবেন, এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।”

করণদিঘির সভার পরে এ দিন ইসলামপুরের হাইস্কুল মাঠে দুপুর দেড়টায় আর একটি সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দু’টি সভাতেই কংগ্রেস, বিজেপি এবং সিপিএমের মধ্যে আঁতাতের অভিযোগ তোলেন তিনি। কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি ‘কানে কানে, ফোনে ফোনে কথা বলে এক হয়ে’ তৃণমূলকে হারানোর চেষ্টা করছে বলে তাঁর অভিযোগ। তাঁর দাবি, বাংলার মা, বোন ও বাংলাকে অসম্মানকারী বিজেপি রাজ্যে একটাও আসন পাবে না, কংগ্রেসের আসন সংখ্যাও কমে যাবে।

কংগ্রেস প্রার্থীর নাম মুখে না আনলেও সিপিএম প্রার্থী মহম্মদ সেলিমকে ‘বিপজ্জনক’ বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “উনি কোনদিনও কোনও কাজ করেননি। কলকাতা থেকে পালিয়ে এসে রায়গঞ্জে প্রার্থী হয়েছেন। আমি মরতে রাজি আছি, কিন্তু হিন্দু মুসলিম ভাগাভাগি হতে দেব না। রাজ্যের সবাইকে নিয়ে এক হয়ে থাকব। কেউ যদি মনে করেন সাম্প্রদায়িক ভোট করে বা কংগ্রেস ও তৃণমূলের ভোট কাটাকাটিতে জিতবেন, তাহলে ভুল করছেন।” যার পাল্টা সেলিমের জবাব, “সবাই জানেন, মমতা পালা করে কখনও কংগ্রেস বা কখনও বিজেপি-র ঘাড়ে চেপে মন্ত্রিত্ব করেন। তাই তিনি কতটা সততার প্রতীক, তা মানুষ জেনে গিয়েছেন। তথ্য বিকৃতি ও ব্যক্তিগত আক্রমণ মমতার নীতি আদর্শের মধ্যে পড়ে বলে আমার ধারণা।” এদিন করণদিঘির সভায়, পবিত্ররঞ্জনবাবু ছাড়াও কাটিহার কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হামিদ মোবারকও হাজির ছিলেন।

ইসলামপুরের সভাতে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তিনি কতবার উত্তরবঙ্গে এসেছেন তার পরিসংখ্যানও দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সভাতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সিপিএম ঘরকা না ঘাটকা। ওরা ৩৪ বছরে যা করেছে, তাতে সবাইকেই জেলে ঢোকানো যাবে।”

সংবাদমাধ্যমকেও কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এক বৃদ্ধা মাঠে ঢুকতে গেলে তাঁকে নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দেন। তখনই মুখ্যমন্ত্রী মাইকে বলেন, “বৃদ্ধার কথা শোন, কী হয়েছে কী বলতে চান তিনি, তা শুনে নাও।”

অন্য বিষয়গুলি:

mamata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy