বন্ধ বাগডোগরা চা বাগান। শনিবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।
ফের একটি চা বাগান বন্ধ হল উত্তরবঙ্গে।
শনিবার সকালে শিলিগুড়ি লাগোয়া বাগডোগরা চা বাগানে কাজে যোগ দিতে গিয়ে শ্রমিকেরা দেখেন, বাগানের গেটে ঝুলছে কাজ বন্ধের নোটিশ। সারা দিন দেখা মেলেনি বাগানের ম্যানেজার বা কর্তৃপক্ষের কাউকেই। শ্রমিকদের অভিযোগ, শুক্রবার রাতেই বাগান ছেড়েছেন তাঁরা।
কাজ বন্ধের নোটিশে জানানো হয়েছে, সারা দিনে ৮ ঘণ্টারও কম সময় কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। অথচ সারা দিনের মজুরি দাবি করছিলেন। এছাড়াও বকেয়া মজুরির দাবিতে শ্রমিকদের লাগাতার আন্দোলন এবং মালিককে হাজির করানোর দাবিতে বিক্ষোভ চলতে থাকায় বাগান বন্ধের নোটিশ লাগাতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন বলে জানিয়েছেন চা বাগান কর্তৃপক্ষ।
তবে শ্রমিকরা দাবি করছেন, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বাগান কর্তৃপক্ষের তরফে অর্ধেক মজুরি দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। গত ৯ ও ১২ ডিসেম্বর মালিকপক্ষের সঙ্গে তাঁরা বৈঠক করলেও বিষয়টি মেটেনি। তার জেরেই মালিকপক্ষ বাগান ছেড়ে গিয়েছেন।
শ্রম দফতরের উত্তরবঙ্গের যুগ্ম কমিশনার মহম্মদ রিজওয়ান বলেন, “বাগান বন্ধের খবর শুনেছি। তবে এখনও হাতে কোনও নোটিশ পাইনি। বাগান খোলার ব্যবস্থা করতে দ্রুত ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হবে।”
মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে বঞ্চনা এবং অসহিষ্ণু মনোভাবের অভিযোগে সরব শ্রমিক সংগঠনগুলি। বুধবার সকালে ডুয়ার্সের রহিমাবাদ চা বাগান বন্ধ হওয়ার চার দিনের মধ্যে ফের তরাইয়ের বাগডোগরা বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ার উদ্বিগ্ন চা শিল্প মহল।
স্বাধীনতার আগে গোড়াপত্তন হওয়া এই চা বাগানে ৫০০ শ্রমিক কাজ করেন। প্রায় ৬৫৮ একর এলাকা জুড়ে থাকা এই বাগানে বাগিচা রয়েছে প্রায় ৬১৪ একরে। প্রতি বছর সেখান থেকে অন্তত ৩০ লক্ষ কিলো চা পাতা তৈরি হয়। ওই বাগানের চা পাতার যথেষ্ট কদরও রয়েছে বলে জানিয়েছে চা বিপণনকারী সংস্থাগুলি। এমন চা শিল্পের পক্ষে মোটেই সুলক্ষণ নেই বলে শ্রমিক মালিক দুই সংগঠনের তরফেই দাবি করা হয়েছে।
বাগান সূত্রের খবর, চলতি মাসের শুরু থেকেই বাগানে শ্রমিক-মালিক মতানৈক্য শুরু হয়। বাগারে তৃণমূল এবং আদিবাসী বিকাশ পরিষদের শ্রমিক সংগঠন রয়েছে। দুই সংগঠনেরই দাবি, সম্প্রতি মালিকপক্ষ জানায়, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি শীতের যে তিন মাস পাতা তোলা বন্ধ থাকে, সে সময় দিন পিছু অর্ধেক মজুরি মিলবে। এই তিন মাস বাগানে পাতা তোলার পরিবর্তে গাছ ছাটার কাজ চলে। একজন শ্রমিককে দিনে যে পরিমাণ গাছ কাটতে হয়, এ বছর মালিকপক্ষ তার দ্বিগুণ গাছ কাটতে হবে বলে দাবি করেন। শ্রমিক সংগঠনগুলি রাজি না হওয়ায় গত ৯ এবং ১২ ডিসেম্বর দু’পক্ষের বৈঠকও হয়। যদিও সমাধান সূত্র মেলেনি।
যদিও এই সব অভিযোগ অস্বীকার করে বাগান পরিচালনা সংস্থার গ্রুপ সুপার বিশ্বদীপক দুয়া বলেন, “শ্রমিকদের একাংশ দিনে ৪ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে চাইতেন না। তাই অর্ধেক মজুরি দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়টি জানানো হয়েছিল। শীতের সময়ে দিনপিছু গাছ কাটার সংখ্যাও কমিয়ে দিতে চাওয়া হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে বাগান বন্ধ করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।”
শাসক দল তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন বাগডোগরায় যথেষ্ট প্রভাবশালী। এ দিন বাগানে গিয়েছিলেন তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠনের নেতা অলক চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “মালিকপক্ষ অযৌক্তিক দাবি করেছে। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হলে আন্দোলনের পথে যাব।” আদিবাসী বিকাশ পরিষদের চা শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক শম্ভু কাওয়ারও একই কথা বলেন। এর আগে নভেম্বরের শেষের দিকে সোনালি চা বাগানের মালিককে শ্রমিকদের কয়েকজন পিটিয়ে খুন করেন। তার জেরে বন্ধ হয় বাগান। বন্ধ পাটকাপাড়া চা বাগানও।
চা শ্রমিকের মৃত্যু
ফের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হল আলিপুরদুয়ারের বন্ধ পাটকাপাড়া চা বাগানে। এই নিয়ে এক মাসে মোট তিন জনের মৃত্যু হল। মৃত শ্রমিক সহরাই ওঁরাও (৬৯) অবসরের পরে তাঁর প্রাপ্য পাননি। তিনি চা বাগানের বলরাম লাইনে থাকতেন। ১৬ নভেম্বর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাগান ছেড়ে চলে যান ম্যানেজাররা। তার পর থেকেই বাগান বন্ধ। ইউটিইউসি নেতা নির্মল দাস বলেন, “সহদেব ওঁরাও অবসরের পর প্রাপ্য গ্র্যাচুইটি পাননি। এর আগেও দু’জন অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক মারা গিয়েছেন। তাঁরাও কোনও টাকা পাননি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy