Advertisement
E-Paper

অনুপমকে চোখের জলে চিরবিদায় জলপাইগুড়ির

প্রয়াত চিকিৎসক ও নেতাকে চোখের জলে বিদায় জানাল জলপাইগুড়ি। প্রাক্তন বিধায়ক অনুপম সেনের মৃত্যুর খবর সোমবার গভীর রাতেই শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল। রাতেই ভিড় জমতে শুরু করে শহরের বাবুপাড়ার নার্সিংহোমের সামনে। মঙ্গলবার সকাল থেকে মানুষ ভিড় জমান অনুপমবাবুর বাড়ির সামনে।

শেষযাত্রায় প্রয়াত অনুপম সেনকে শ্রদ্ধা শহরবাসীর। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

শেষযাত্রায় প্রয়াত অনুপম সেনকে শ্রদ্ধা শহরবাসীর। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৫০
Share
Save

প্রয়াত চিকিৎসক ও নেতাকে চোখের জলে বিদায় জানাল জলপাইগুড়ি। প্রাক্তন বিধায়ক অনুপম সেনের মৃত্যুর খবর সোমবার গভীর রাতেই শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল। রাতেই ভিড় জমতে শুরু করে শহরের বাবুপাড়ার নার্সিংহোমের সামনে। মঙ্গলবার সকাল থেকে মানুষ ভিড় জমান অনুপমবাবুর বাড়ির সামনে। প্রয়াত নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে ডান-বাম সব দলের নেতা-নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। শেষ যাত্রাতেও পা মিলিয়েছেন তাঁদের অনেকেই।

এ দিন সকালে শিল্পসমিতি পাড়ার বাড়িতে অনুপমবাবুর দেহ পৌঁছয়। বাড়ির সামনে তখন থিকথিক করছে ভিড়। দিনমজুর, রিকশা চালক থেকে অধ্যাপক, আইনজীবীরা সমাজের সব স্তরের মানুষ সেখানে যান শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। বেগুনটারি মোড় থেকে শান্তিপাড়া পর্যন্ত সড়কের দুপাশের দোকান এ দিন সকালেই বন্ধ হয়ে যায়। সকালে অনুপমবাবুর বাড়িতে পৌঁছে যান প্রাক্তন সাংসদ প্রবীণ সিপিএম নেতা মানিক সান্যাল এবং মিনতি সেন। তাঁরা চলে যেতে আসেন আরএসপির জেলা সম্পাদিকা ছায়া রায় এবং বিজেপির যুব নেতা জয়ন্ত চক্রবর্তী। মানিকবাবু বলেন, “রাজনৈতিক দূরত্ব থাকলেও অনুপমবাবু বড় মাপের মানুষ ছিলেন। তাঁর সমাজসেবার মনোভাব দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।” বিজেপির যুব নেতা বলেন, “অনুপমবাবুর মৃত্যুতে একটি যুগের অবসান হল।”

তৃণমূল সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মন প্রয়াত চিকিৎসকের নিথর দেহ দলীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেন। একসময়ে কংগ্রেসের বিধায়ক পরবর্তীতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। প্রবীণ তৃণমূল নেতা কল্যাণ চক্রবর্তী বলেন, “অনুপমবাবু ছিলেন জলপাইগুড়ির মানুষের। কে কোন দল করে সেটা কোনওদিন তিনি বিচার করেননি। তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে আপনজন হারানো শোকের ছায়া নেমেছে।” রাত থেকে প্রয়াত চিকিৎসকের পরিবারের সঙ্গে ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদার। তাঁর কথায়, “আমরা সবাই অভিভাবক হারালাম।” বেলা যত বেড়েছে প্রিয়জন হারানো শোকের ছায়া তত গভীর হয়েছে। পৌঁছে যান সরকারি আইনজীবী গৌতম দাস, বার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।


চিকিৎসককে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় শ্মশানে

রাজ্য সরকার তাঁকে ‘বঙ্গরত্ন’ উপাধি দিয়েছেন। চিকিৎসক হিসেবেও তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল জলপাইগুড়ির বাইরেও। সেই সঙ্গে দুঃস্থদের কখনও মাত্র ১ টাকার বিনিময়ে কখনও বা পারিশ্রমিক ছাড়াই চিকিৎসা করতেন। এ দিন শেষ যাত্রায় সামিল হয়েছিলেন এমন অনেকেই, যাঁদের সঙ্গে অনুপমবাবুর ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা ছিল না, কিন্তু কোনও একসময়ে তিনি চিকিৎসার জন্য অনুপমবাবুর কাছে গিয়েছিলেন। পান্ডাপাড়ার বাসিন্দা সবজি বিক্রেতা বিমল ঘোষের কথায়, ‘‘সব্জি বিক্রি করি শুনে আমার থেকে ভিজিট নেন নি ডাক্তারবাবু। সে অনেক বছর আগের কথা। কিন্তু ভুলতে পারিনি। তাই খবর শুনেই চলে এসেছি।’’ সমাজকর্মী তথা প্রয়াত চিকিৎসকের এক সময়ের ছায়া সঙ্গী সুব্রত সরকার বলেন, “ডাক্তারবাবু রাজনৈতিক বিশ্বাস যাই হোক না কেন, তিনি সকলের কাছেই নিজের লোক ছিলেন।’’ অনুপমবাবুর একমাত্র ছেলে অর্ঘ্য সেন জানান, অনুপমবাবু ১৯৫৫ সাল থেকে শহরে চিকিৎসা শুরু করেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি প্রথম দিকে সাইকেলে ঘুরে রোগী দেখতে যেতেন। পুরসভার চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “পরের দিকে রিকশায় চড়ে রোগী দেখতেন।” প্রতিবেশী স্বপ্না মজুমদার জানান, শুধু কি সমাজসেবা, প্রয়াত চিকিৎসক খেলাপাগল মানুষ ছিলেন। শেষ যাত্রার শুরুতে তাই দেহ নিয়ে যাওয়া হয় প্রয়াত চিকিৎসকের প্রিয় ক্লাব মিলন সঙ্ঘেও।

সেই শেষযাত্রায় চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি কেউই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}