বাগুইআটিতে এক সরকারি বাসে উপচে পড়ছে ভিড়। (ডান দিকে) বিমানবন্দরের কাছে মাঝরাস্তায় বাসে ওঠার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন যাত্রীরা। সোমবার। ছবি: সুমন বল্লভ
যত আসন তত যাত্রী, তবে কেউ দাঁড়াতে পারবেন না— এই বিধি মেনে শহরে সোমবার থেকে বাস চলার কথা ছিল। জানা গিয়েছিল, সরকারি বাসের সঙ্গে পথে নামতে পারে কিছু বেসরকারি বাসও। কিন্তু এ দিন কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণে অফিসের সময়ে বেসরকারি বাস প্রায় চোখে পড়েনি। সরকারি বাস ছিল অবশ্য। ফলে আনলক-ওয়ানের প্রথম দিনে, যে সব বাস বেরিয়েছে, অফিসের সময়ে সেগুলিতে যাত্রীরা দাঁড়িয়েই গিয়েছেন। অফিসমুখো ভিড়ের দাপটে বাসের মধ্যে দূরত্ববিধি উঠেছে শিকেয়। আশঙ্কা বেড়েছে সংক্রমণের।
পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই সমস্যার ধীরে ধীরে সমাধান হবে। তবে মেট্রো ও লোকাল ট্রেন না চললে পুরো সমাধান হয়তো হবে না। সোমবার বৃহত্তর কলকাতায় ৩৬০টি সরকারি বাস চালিয়েছি। বুধবারের মধ্যে ৬০০টি বাস চালাব। ৮ জুনের মধ্যে ১২০০ বাস রাস্তায় নামাব। ১৭টি রুটের বেসরকারি বাসও এ দিন রাস্তায় নেমেছে।’’
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় ভিআইপি রোডের এক নম্বর গেট বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেল, অফিসযাত্রীদের ভিড়। কিন্তু বাস নেই। অফিসযাত্রীরা জানালেন, কেউ দাঁড়িয়ে আছেন এক ঘণ্টা, কেউ দাঁড়িয়ে রয়েছেন তারও বেশি সময় ধরে। তাঁদের অভিযোগ, একটি কি দু’টি বাসের দেখা মিললেও সেগুলিতে আসন ভর্তি হয়ে যাওয়ায় বাস স্টপে দাঁড়াচ্ছে না। ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল ১০টা নাগাদ। অফিসযাত্রীরা জানিয়ে দিলেন, এ বার তাঁরা রাস্তা অবরোধ করে বাস আটকাবেন। ১০টা ১০মিনিট নাগাদ বারাসত থেকে উল্টোডাঙাগামী বাস আসতেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন অফিসযাত্রীরা। কন্ডাক্টর বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেন ঠিকই, কিন্তু সে তো নিতান্ত বালির বাঁধ। হুড়মুড় করে যাত্রীরা উঠে পড়লেন বাসে। অগত্যা! যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থাকলেও বাস রওনা হল উল্টোডাঙার দিকে।
আরও পড়ুন: ‘করোনা-আতঙ্কের শিকার হল আমার কোভিড-নেগেটিভ ছেলেটা’
আবার অফিসের সময়ে বারাসত থেকে গড়িয়াগামী বাসে উঠে দেখা গেল, দাঁড়িয়ে রয়েছেন বেশ কয়েক জন যাত্রী। বাগুইআটি আসতেই আরও যাত্রীরা হুড়মুড় করে বাসে উঠতে শুরু করলেন। ভিতরে তখন ঠাসাঠাসি ভিড়। চালক বাস থামিয়ে জানিয়ে দিলেন, এত লোক নিয়ে বাস যাবে না। বাসের যাত্রীরাও অনড়। সাফ জানালেন, তাঁরা বাস থেকে নামবেন না। তাঁরা দাঁড়িয়েই যাবেন। প্রসেনজিৎ বসু নামে এক যাত্রীর কথায়, ‘‘এক ঘণ্টা দাঁড়ানোর পরে বাস পেয়েছি।
দূরত্ববিধির কথা মাথায় রাখলে অফিসেই পৌঁছতে পারব না। তাই ভিড় থাকলেও বাধ্য হচ্ছি বাসে উঠতে।’’ কর্তব্যরত পুলিশ যাত্রীদের বোঝাতে এলেও কোনও লাভ হয়নি। কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে অগত্যা যাত্রা বাসের, দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী নিয়েই। মানিকতলা মোড়, শ্যামবাজার, হাতিবাগান— উত্তরে এ দিন মূলত সরকারি বাসই চোখে পড়েছে। বেলা বাড়লেও পথে নামা যাত্রীদের হয়রানি কমেনি।
আরও পড়ুন: রাজ্যে এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যায় শীর্ষে হাওড়া
বেলা ১টা নাগাদ রাসবিহারী মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ২০-২৫ জন যাত্রী। কোনও বাস নেই। কিছু ক্ষণ পরে পর পর চারটে বাস এল ঠিকই, কিন্তু আসন ভর্তি থাকায় কোনও বাসই দাঁড়াল না। কিছু ক্ষণ পরে আর একটি বাস। নামলেন এক জন যাত্রী। আর ওঠার চেষ্টা করলেন সাত জন। তবে এখানে সফল হলেন কন্ডাক্টর। ছ’জনকে নামিয়ে দিয়ে বাস ছাড়লেন।
অফিসের সময়ে একই অবস্থা ছিল গড়িয়া এইট-বি বাস স্ট্যান্ডেও। সেখানে বাসের জন্য লম্বা লাইন। অভিষেক দাস নামে এক যাত্রী বলেন, ‘‘দু’টি বাসে বসার জায়গা পাইনি। পরের বাসের জন্য দাঁড়িয়ে রয়েছি। কখন কাজের জায়গায় পৌঁছব জানি না।’’ এ দিন যে সব ডিপো থেকে বাস ছেড়েছে, সেখানে পুলিশ যাত্রী নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাস ছেড়েছে শুধু বসে থাকা যাত্রীদের নিয়েই। অফিসযাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন, তা হলে কি কেউ মাঝপথ থেকে বাসে উঠতে পারবেন না? অফিস খুলে গিয়েছে, বাধ্য হয়ে কাজের জায়গায় যেতে হচ্ছে, কেন সোমবার থেকে পর্যাপ্ত বাস রাস্তায় নামল না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy