ঘূর্ণিঝড় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেও আশার আলো নেই। রোয়ানু বাংলাদেশে ঢুকে মিলিয়ে গিয়েছে শনিবারেই। কিন্তু কেরলে বর্ষা ঢোকার মতো অনুকূল পরিস্থিতি রবিবারেও দেখা দিল না। উল্টে আশঙ্কা জেগেছে, রোয়ানুর দৌলতে ভারতভূমিতে কি বর্ষা আগমনের দফারফা হয়ে গেল?
আবহবিদেরা জানিয়েছিলেন, তামিলনাড়ু উপকূলে তৈরি ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু যত দিন সক্রিয় থাকবে, তত দিন আরবসাগরে মৌসুমি বায়ু তেজালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই মৌসম ভবন দেখতে চাইছিল, কত তাড়াতাড়ি রোয়ানু ডাঙায় ঢুকে শক্তি হারিয়ে ফেলে। তা ফেলেওছে। তবু কাজের কাজ কিছু হয়নি। ‘‘রোয়ানু দুর্বল হয়ে মিলিয়ে গিয়েছে চব্বিশ ঘণ্টা আগে। তার পরেও আরবসাগরে বর্ষার বায়ুপ্রবাহ অনুকূল হওয়ার কোনও লক্ষণ চোখে পড়ছে না। এটা ভাল লক্ষণ নয়।’’— এ দিন বলেন মৌসম ভবনের এক আবহবিদ।
এমতাবস্থায় কেরলে কবে বর্ষা ঢুকবে, তার চূড়ান্ত পূর্বাভাস দেওয়া যাচ্ছে না। বস্তুত মরসুমি নির্ঘণ্ট মানলে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে কেরলে প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি শুরু হওয়ার কথা। বাতাসে জোলো ভাব বাড়ার কথা। কোথায় কী! দিন কয়েক আগে নিম্নচাপের প্রভাবে ঝেঁপে বৃষ্টি হলেও কেরলের সিংহভাগ এখন শুখা। তামিলনাড়ুও তা-ই।
পরিস্থিতিতে চিন্তার ভাঁজ গভীর হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের আবহবিদদের কপালে। ওঁরা বলছেন, মূল ভারতীয় ভূখণ্ডে সাধারণত ১ জুন বর্ষা ঢোকে, কেরল দিয়ে। ৭ দিনের মাথায় পৌঁছয় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু প্রকৃতির হাল-চাল এমন থাকলে বাংলার বরাতে বর্ষা দূর অস্ত্। এক আবহবিজ্ঞানী বলেন, ‘‘পিনারাই বিজয়নের বর্ষা-ভাগ্য না খুললে দিদির রাজ্যে চাষির মুখে হাসি ফোটা কঠিন।’’
ঘটনা হল, আরবসাগর-বঙ্গোপসাগরে তাপমাত্রা ও বায়ুচাপের ভারসাম্যের প্রেক্ষাপটে কেরলে বর্ষা আগমনের পরিবেশ তৈরি হয়। সেই ভারসাম্য যে এ বার বজায় থাকবে না, মে মাসের মাঝামাঝি তার আভাস দিয়ে মৌসম ভবন জানিয়েছিল, কেরলে বর্ষার ট্রেন এ বছর অন্তত সাত দিন লেটে ঢুকবে। ক’দিন বাদে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় দানা বেঁধে ভারসাম্যের অঙ্কটা আরও গুলিয়ে দিয়েছে। আবহবিদদের বিশ্লেষণ— ঘূর্ণিঝড়ে বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়া এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। যার প্রভাব ভূখণ্ড টপকে পশ্চিম পাড়ের আরবসাগরে পড়েছে। বিগড়েছে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু। ‘‘ভাইরাসটা সদ্য দূর হয়েছে। কিন্তু চাঙ্গা হতে বর্ষার সময় লাগবেই!’’— পর্যবেক্ষণ এক আবহবিদের।
কেরলে পা রাখা মৌসুমি বায়ু যাতে আস্তে আস্তে সারা দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়তে পারে, সে জন্য প্রকৃতির নিয়মে পূর্ব ও উত্তর-পূ্র্ব ভারতে ছোট ছোট ঘূর্ণাবর্ত দানা বাঁধে। সেগুলোর টানে মৌসুমি বায়ু উপরে উঠে এসে দেশ জুড়ে শাখা বিস্তার করে। টান যতো জোরালো হয়, বর্ষার গতি তত বাড়ে। আবহবিদদের দাবি: কেরলে বর্ষা ঢুকে যাওয়ার পরে যদি রোয়ানু হাজির হতো, তা হলে পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা পূর্ব ভারতে বর্ষা পৌঁছে যেত ‘বিফোর টাইমে।’
কার্যক্ষেত্রে অবশ্য হয়েছে উল্টো। আরবসাগরে বর্ষা পরিস্থিতি হওয়ার আগেই উপস্থিত হয়ে ঘূর্ণিঝড় সব জলীয় বাষ্প টেনে পরিমণ্ডল খটখটে করে দিয়েছে। কপাল পুড়েছে বর্ষার। প্রসঙ্গত, এ বারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম দিয়েছিল মলদ্বীপ। সে দেশের দিভেহি ভাষায় ‘রোয়ানু’ বলতে বোঝায়, নারকেলের ছোবড়ার দড়ি। এক আবহবিদের মন্তব্য, ‘‘এই ছোবড়ার দড়িতেই না বর্ষা বাঁধা পড়ে যায়!’’
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া মন্ত্রকের পূর্বাঞ্চলীয় ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, কেরলে বর্ষা ঢোকার পরে পূর্ব ভারত জুড়ে আবহাওয়া কিছুটা বদলায়। সেগুলোই ঠিক করে, কেরল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু কী ভাবে, কখন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঢুকবে। কেরলে বর্ষা না-আসা ইস্তক আবহাওয়ায় পরিস্থিতিগুলো তৈরি হবে না।
কাজেই গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বর্ষা প্রবেশের দিনক্ষণ নিয়ে হাওয়া অফিস বিলকুল অন্ধকারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy