সীতারাম ইয়েচুরি (বাঁ দিকে), প্রকাশ কারাট (ডান দিকে) —ফাইল চিত্র।
দলের রাজ্য নেতৃত্ব বলেছেন আগেই। সর্বভারতীয় স্তরে ‘ইন্ডিয়া’ জোটে একসঙ্গে থাকলেও বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের বোঝাপড়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না বলে এ বার এক সুরে স্পষ্ট করে দিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি ও পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাট। তাঁদের যুক্তি, কিছু কিছু রাজ্যে অ-বিজেপি দলগুলির নিজেদের মধ্যে সার্বিক সমঝোতার বাস্তবতা নেই। কেরল ও বাংলা সেই তালিকায় পড়ে। জাতীয় স্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বসে ইয়েচুরিরা বাংলায় বাম কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ করেছেন বলে অভিযোগ করে তাঁদের সিপিএম ছেড়ে মমতা-বিরোধী মঞ্চে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতারা। গেরুয়া শিবিরের ওই প্রচার মোকাবিলা করতেই সিপিএমের বর্তমান ও প্রাক্তন দুই সাধারণ সম্পাদক এ বার পুজোর মরসুমে দলের রাজনৈতিক লাইন ফের ব্যাখ্যা করার পথে গিয়েছেন বলে রাজনৈতিক শিবিরের মত।
দলীয় একটি পত্রিকার শারদ-সংখ্যায় এ বার ‘পার্টির রাজনৈতিক-রণকৌশলগত লাইন এবং আগামী লোকসভা নির্বাচনে আমাদের ভূমিকা’র বিযয়ে লিখেছেন ইয়েচুরি। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সেখানে স্পষ্টই বলেছেন, ‘কেরলে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফ এবং কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউডিএফের মধ্যে। বর্তমানে ‘ইন্ডিয়া’ গোষ্ঠীভুক্ত দলগুলি এলডিএফ এবং ইউডিএফের মধ্যে বিভক্ত। স্বাভাবিক ভাবেই, ‘ইন্ডিয়া’র সমস্ত দলের মধ্যে নির্বাচনী বোঝাপড়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না’। এই সূত্রেই তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, ‘অন্যান্য রাজ্যেও বিশেষ করে, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী কৌশল কেন্দ্রীভূত করতে হবে বিজেপি এবং তৃণমূল (যারা সন্ত্রাস ও হিংসার রাজনীতির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে চলেছে এবং জনগণের উপরে ক্রমবর্ধমান আক্রমণ নামিয়ে আনছে)— এই দুই দলের বিরুদ্ধে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে একত্রিত করার কাজে’।
একই ভাবে সিপিএমের ‘রাজনৈতিক লাইনের প্রাসঙ্গিকতা’ বোঝাতে গিয়ে দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কারাট লিখেছেন, ‘কর্মসূচির ভিত্তিতে একটিই জোট করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যভিত্তিক নির্বাচনী রণকৌশল স্থির হবে। সে ক্ষেত্রে সিপিএম পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস উভয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কেরলে প্রধান লড়াই হবে এলডিএফের সঙ্গে ইউডিএফের’।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, সিপিএম নেতৃত্ব যখন রাজ্যে রাজ্যে পরিস্থিতি আলাদা বলে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তা হলে সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধী জোটে তাঁরা গেলেন কেন? তাঁরা অবশ্য ‘ইন্ডিয়া’কে জোট না বলে গোষ্ঠী আখ্যা দিচ্ছেন। সর্বভারতীয় স্তরে বিরোধী ঐক্যের প্রশ্নে ইয়েচুরির যুক্তি, ‘অনেক রাজ্যে (বাংলা-সহ) ‘ইন্ডিয়া’ গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য দলগুলির মধ্যে এমন কিছু দ্বন্দ্ব থাকবে, যার নিরসন সম্ভব নয়। তা সত্ত্বেও বিরোধী ভোটের ভাগাভাগির সুযোগ বিজেপি যেন না নিতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্যই চেষ্টা করা হচ্ছে বিজেপি-বিরোধী ভোটের বিভাজন কমিয়ে আনার’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy