Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bankura Murder case

বাঁকুড়ায় বৃদ্ধ খুনে রাজনীতি নেই, নেপথ্যে জমি বিবাদ! দাবি করল পুলিশ, মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাও

সত্তর ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধ বঙ্কুবিহারী মাহাতোর খুনের ঘটনায় বুধবার গোটা দিন সরগরম ছিল বাঁকুড়ার খাতড়া থানা এলাকা। পরিবার অভিযোগ তোলে, বিজেপি করার কারণেই খুন হতে হয়েছে বঙ্কুকে।

—প্রতীকী চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪ ১৮:২৮
Share: Save:

বাঁকুড়ায় বৃদ্ধের মৃত্যু নিয়ে ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। খুনের ঘটনায় রাজনীতি নেই, নেপথ্যে রয়েছে জমি বিবাদ। শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে আঙুল তুলে বিজেপির অভিযোগের প্রেক্ষিতে এমনটাই দাবি করল বাঁকুড়া পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর ছেলে অনন্তের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার মুম্বই যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘‘বাঁকুড়ার রানিবাঁধের একটা ঘটনা নিয়ে বিজেপি ময়দানে নেমেছে। আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম, ওখানে যা ঘটেছে তা পুরোটাই পারিবারিক বিবাদের কারণে। পুলিশ ব্যবস্থাও নিয়েছে।’’

সত্তর ছুঁই ছুঁই বৃদ্ধ বঙ্কুবিহারী মাহাতোর খুনের ঘটনায় বুধবার গোটা দিন সরগরম ছিল বাঁকুড়ার খাতড়া থানা এলাকা। পরিবার অভিযোগ তোলে, বিজেপি করার কারণেই খুন হতে হয়েছে বঙ্কুকে। বিজেপির দাবি, বঙ্কু দলের বুথ সভাপতি। সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুন করেছে। এই অভিযোগে মঙ্গলবার রাতে থা়তড়া থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছিল পদ্মশিবির। সেখানে ছিলেন বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুনীলরুদ্র মন্ডল ও বাঁকুড়ার বিধায়ক নিলাদ্রীশেখর দানা। বুধবার বঙ্কুর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানো হলে সেখানে গিয়েছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার। মর্গে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “তৃণমূল সারা রাজ্য জুড়ে যে ভাবে অত্যাচার চালাচ্ছে, এই ঘটনা তারই নমুনা। আমাদের দলের একনিষ্ঠ কর্মী বঙ্কু মাহাতোকে তৃণমূলের লোকজন মারধর করে মেরে ফেলেছে। আমরা চাই, বঙ্কু মাহাতোর দেহের ময়নাতদন্তের সম্পূর্ণ ভিডিওগ্রাফি করা হোক। পাশাপাশি অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের ব্যবস্থা করুক পুলিশ।”

তৃণমূল অবশ্য প্রথম থেকেই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বুধবারই বাঁকুড়ার সাংসদ তথা তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অরুপ চক্রবর্তী বলেছিলেন, ‘‘শুনেছি মৃতের শরীরে কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই। তাই কী কারণে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে পরিষ্কার হবে। এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।” এর পর বৃহস্পতিবার সকালে বাঁকুড়া জেলা পুলিশের তরফে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করা হয়। সেখানে দাবি করা হয়, ‘‘একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভুয়ো তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ওই গ্রামের তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

মঙ্গলবার দুপুরে গুরুতর আহত অবস্থায় বাঁকুড়ার খাতড়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বঙ্কুকে। সেখানেই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রথমে পরিবার জানিয়েছিল, মঙ্গলবার সকালে বঙ্কুর উপর হামলা হয়। জমি সংক্রান্ত বিবাদের কারণে হামলা বলে দাবি করেছিল নিহতের পরিবার। পরে রাতে থানায় অভিযোগ দায়ের করার সময় জমি বিতর্কের কথা বাদ দিয়ে শুধু রাজনৈতিক কারণে খুন বলে দাবি করা হয়। নিহতের দুই ছেলের বয়ানেও অসঙ্গতি ধরা পড়েছিল। নিহতের বড় ছেলে জনার্দন মাহাতো মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেছিলেন, পড়শিরা তাঁদের জমির আলের একটি গাছ কেটে নেয়। তাঁর বাবা প্রতিবাদ করলে ওরা মারধর করে। দুপুরে গ্রামের অদূরে তাঁর বাবাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে ছোট ছেলে সনাতন মাহাতো থানায় অভিযোগ করেন, তাঁদের পরিবার বিজেপি করে। তাই লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে গ্রামের তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতকারীরা তাঁদের খুনের হুমকি দিচ্ছিল। মঙ্গলবার সকালে কয়েকজন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী লাঠি, রড দিয়ে তাঁর বাবাকে পিটিয়ে খুন করে।

পরিবারের অভিযোগ পাওয়ার পরেই পড়শি বাদল মাহাতো, হারু ওরফে হারাধন মাহাতো ও তারাপদ পালকে গ্রেফতার করে। ধৃতেরা প্রত্যেকেই দেদুয়ার বাসিন্দা। তাঁরা এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। বুধবার খাতড়া আদালতে ধৃতদের হাজির করানো হলে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত হয়। বাঁকুড়া পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত তদন্ত যত দূর এগিয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, নিহত ও অভিযুক্ত পরিবারের মধ্যে জমি নিয়ে বিবাদ ছিল। একটি গাছ কাটা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে গন্ডগোল। সেই সময় জখম হয়েছিলেন বৃদ্ধ।

অন্য বিষয়গুলি:

bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy