ছবি পিটিআই।
বেসরকারি বাসমালিকদের দাবি ছিল, ভাড়া বাড়াতে হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার নবান্নে জানিয়ে দিলেন, ‘সাধারণ মানুষের স্বার্থে’ ভাড়া বাড়ানো হবে না। বরং ১ জুলাই থেকে ৬ হাজার বেসরকারি বাস ও মিনিবাসকে রাস্তায় নামার অনুরোধ জানিয়ে তিনি ঘোষণা করলেন, ওই সব বাসকে পর পর তিন মাস ১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে। অর্থাৎ এই খাতে ২৭ কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে রাজ্য। পাশাপাশি বাসের চালক ও কন্ডাক্টরদের স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় এনে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা-বিমার সুযোগ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। ১ জুলাই থেকে আরও ৫০০ সরকারি বাস রাস্তায় নামবে বলেও তিনি জানান।
শুক্রবার নবান্নে অল বেঙ্গল বাস ও মিনিবাস সমন্বয় সমিতি, বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট ও মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ, স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা এবং একাধিক আধিকারিক। বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পেট্রলের থেকে ডিজেলের দাম বেশি হয়ে গিয়েছে। যাঁরা বাস চালান তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। তা-ও আমরা মানুষের কথা ভেবে বৃহত্তর স্বার্থে ভাড়া বাড়াতে পারছি না।’’ এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, লকডাউন ওঠার পর থেকে এখনও পর্যন্ত আড়াই হাজার বেসরকারি বাস ও মিনিবাস চলছে। তা বাড়িয়ে ৬ হাজার করার অনুরোধ জানান মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, বেসরকারি বাসমালিকদের বিভিন্ন সংগঠন ন্যূনতম ভাড়া ৭ টাকার বদলে ১০থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত করার দাবি জানিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল, মুখ্যমন্ত্রীর প্যাকেজের ঘোষণার পরে সোমবার থেকে কি রাস্তায় ৬ হাজার বাস নামাবেন মালিকেরা? জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রবিবার বৈঠক করে তাঁদের সংগঠন সিদ্ধান্ত নেবে। এ দিনের বৈঠকে অবশ্য তাঁরা ছিলেন না। আর এ দিন নবান্নে বৈঠকে থাকা বাস সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলছেন, ‘‘২৭ মে থেকেই বেসরকারি বাস ও মিনিবাস চলছে। তেমনই চলবে। তার পরে দেখা যাক কী হয়।’’
আরও পড়ুন: সংক্রমণ রোধে মেট্রোয় টোকেন বন্ধের ভাবনা
তবে এই আর্থিক প্যাকেজে তাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হল না বলেই দাবি বাস মালিক সংগঠনগুলির। তাদের মতে, এই ১৫ হাজার টাকা মালিকদের কাছে ‘উৎসাহ-ভাতা’। মালিকেরা জানাচ্ছেন, যদি ধরে নেওয়া যায়, একটি বাসে প্রতি দিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা ঘাটতি থাকছে, সেখানে মাসে ১৫ হাজার টাকার অর্থ দৈনিক ৫০০টাকা। তাতে কখনওই আয়-খরচের ঘাটতি মিটবে না বলেই দাবি মালিকদের। বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সহ সভাপতি টিটু সাহা বলেন, ‘‘আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে উৎসাহ দিতে এই প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এটা স্থায়ী সমাধান নয়। আশা করি, পরবর্তী সময়ে ফের আলোচনার অবকাশ রয়েছে।’’ এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ১৫ হাজার টাকা কী ভাবে ব্যবহার করবেন, তা ঠিক করতে হবে মালিকদেরই।
আরও পড়ুন: বাকি পরীক্ষা বাতিল উচ্চ মাধ্যমিকে, ফল ৩১শে জুলাইয়ের মধ্যে
কিন্তু রাস্তায় কোন ৬ হাজার বাস নামবে? সেগুলি চিহ্নিত হবে কী করে? তা নিয়েও সংশয় রয়েছে মালিকদের মধ্যে। অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাস চিহ্নিত করার বিষয়ে আগামী সপ্তাহে পরিবহণ মন্ত্রী, সচিব ও কর্তারা আলোচনা করবেন বলে শুনেছি। কিন্তু শহর ও শহরতলিতে ২৭ হাজার বেসরকারি বাস ও মিনিবাস চলে। ৬ হাজার বাদ দিলে বাকি ২১ হাজার বাসের ক্ষেত্রে কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।’’ মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক স্বপন ঘোষ জানান, ওই টাকা কী ভাবে বণ্টন করা হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তেমনই সরকারি এই প্যাকেজের মধ্যে শুধু শহর ও শহরতলি, না গোটা রাজ্য রয়েছে, তা নিয়েও ধন্দে মালিকেরা।
তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘যে কোনও প্যাকেজেই জেলা ও শহরের জন্য একই নোটিফিকেশন করতে হবে। কারণ, সারা রাজ্যের সব বাসমালিক একটা পরিবার। সেখানে এক জন পাবেন, আর এক জন পাবেন না, সেটা দুর্ভাগ্যের। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে গেলে ভাড়া বাড়ানো ছাড়া গতি নেই।’’ প্রশাসনের একাংশের ধারণা, ১ জুলাইয়ের আগেই পরিবহণ দফতর, পুলিশ এবং বাসমালিকদের সংগঠনগুলি আলোচনা করে বাস চিহ্নিত করা–সহ সংশয় মিটিয়ে ফেলবেন। এ দিকে রাস্তায় বাসের ঘাটতি মেটাতে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন পরিবহণ দফতর এবং বাসমালিক সংগঠনগুলির মধ্যে সমন্বয়ে গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘‘অ্যাপ তৈরি করুন। যাতে যাত্রীরা বাস পাচ্ছেন না জানালে দ্রুত বাস পৌঁছে দেওয়া যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy