Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

ডেসিবেল বিতর্কে বাজি আটক তিমিরেই

একশো-দু’শো কেজি নয়, একেবারে দেড় হাজার কেজি! দিন কয়েক আগে ওই পরিমাণ শব্দবাজি অবৈধ বলে আলিপুর এলাকায় আটক করেছিল পুলিশ। কারণ, ওই সব বাজির শব্দসীমা ১২৫ ডেসিবেল। তবে বাজি আটক করতে গিয়ে পুলিশ বিরোধিতার মুখে পড়ে।

শিবাজী দে সরকার, কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ১৬:৫২
Share: Save:

একশো-দু’শো কেজি নয়, একেবারে দেড় হাজার কেজি! দিন কয়েক আগে ওই পরিমাণ শব্দবাজি অবৈধ বলে আলিপুর এলাকায় আটক করেছিল পুলিশ। কারণ, ওই সব বাজির শব্দসীমা ১২৫ ডেসিবেল। তবে বাজি আটক করতে গিয়ে পুলিশ বিরোধিতার মুখে পড়ে।

বাজি নিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীরা জানান, বাজির শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেল রাখতে চেয়ে রাজ্য সরকারের আবেদন আদালতে খারিজ হয়ে গিয়েছে। কাজেই, অন্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বাজির শব্দসীমা ১২৫ ডেসিবেল আর সেই জন্য ওই সব বাজি বৈধ। আর পুলিশের যুক্তি ছিল, বাজির শব্দসীমা ১২৫ ডেসিবেল বলে জানিয়ে কোনও সরকারি বিজ্ঞপ্তি এখনও পর্যন্ত জারি করা হয়নি। সরকারি বিজ্ঞপ্তির বাইরে তাঁরা যাবেন কী করে?

তা হলে এখন কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গে বাজির শব্দমাত্রা কত? ৯০ ডেসিবেল নাকি ১২৫ ডেসিবেল? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ধন্দে পুলিশও।

প্রসঙ্গত, বাজির শব্দসীমা ৯০ ডেসিবেল থাকার অর্থ শব্দবাজির নিষিদ্ধ হওয়া। কারণ, ওই শব্দসীমার মধ্যে খেলনা পিস্তলে ফাটানোর ক্যাপ ছাড়া অন্য কোনও শব্দবাজি তৈরি সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞদের মত।

অথচ এই ব্যাপারে অবস্থান পরিষ্কার করে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ বা রাজ্য পরিবেশ দফতর, কেউই বিজ্ঞপ্তি জারি করছে না। কেন? পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র দাবি করেন, ‘‘বিষয়টি এখনও বিচারাধীন বলে মন্তব্য করব না।’’ তবে তাঁর দাবি, যত ক্ষণ না বাজির শব্দমাত্রা ১২৫ ডেসিবেল বলে উল্লেখ করে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হচ্ছে, তত ক্ষণ ৯০ ডেসিবেল শব্দমাত্রাই বহাল থাকবে। কল্যাণবাবুর দাবি, ‘‘এখন ৯০ ডেসিবেলের চেয়ে বেশি শব্দমাত্রার বাজি বেআইনি।’’

কল্যাণবাবু এমন দাবি করলেও প্রথমে পর্ষদের আবেদন খারিজ করে গত ১৯ মে জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় ডি‌ভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, দেশের অন্য জায়গার মতো পশ্চিমবঙ্গেও বাজির শব্দমাত্রা ১২৫ ডেসিবেল ধার্য করে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হবে। কিন্তু বিজ্ঞপ্তি জারি না করে পরিবেশ আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। ২১ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আর্জি খারিজ করে দিয়ে জানায়, তাদের কিছু বলার বা বোঝানোর থাকলে নতুন করে পরিবেশ আদালতেরই দ্বারস্থ হতে হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়নি তারা।

পুলিশের বক্তব্য, আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ীই তাদের পদক্ষেপ করতে হয়। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘একে নতুন কোনও সরকারি বিজ্ঞপ্তি নেই, তার উপরে পুরনো বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কাজ করতে গেলে বাজি ব্যবসায়ীরা আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।’’

সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায় বলছেন, ‘৯০ ডেসিবেল খারিজ হয়ে যাওয়ায় ১২৫ ডেসিবেলই এখন বৈধ। কিন্তু সে সব নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি না করে পুলিশ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আমাদের হেনস্থা করছে। এই নিয়ে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।’’

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, পরিবেশ আদালতে যাওয়া নিয়ে টালবাহানা করে আসলে সময় নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে। শুক্রবারও যেমন হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ২১ অগস্টের নির্দেশে একটি তথ্যগত বিভ্রান্তি নিয়ে ওই দিন ফের শীর্ষ আদালতে আর্জি জানায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

ওই দিন শীর্ষ আদালতে ওই তারিখ সংক্রান্ত বিভ্রান্তি সংশোধন করা হয়। বাজি প্রস্তুতকারকদের আইনজীবী শুভাশিস ভৌমিক বলেন, ‘‘ওই তারিখ সংক্রান্ত বিভ্রান্তি সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু ডেসিবেল মাত্রার জন্য কলকাতার পরিবেশ আদালতেই যেতে হবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে।’’

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একাংশের অভিযোগ, বিজ্ঞপ্তি জারি না করে বার বার আদালতের দ্বারস্থ হয়ে সময় নষ্ট করে বাজি ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার শীর্ষ আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল নেই বলে সময় চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে তারাই সমস্যায় পড়ছে বলে পুলিশের অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, অনেক সময় চোখের সামনে দিয়ে শব্দবাজি বোঝাই গাড়ি চলে গেলেও কিছু করা যাচ্ছে না বলে আক্ষেপ করছেন একাধিক অফিসার। এবং তাঁদের আশঙ্কা, শব্দমাত্রা নিয়ে এই বিভ্রান্তির ফলে শহরে প্রচুর শব্দবাজি মজুত করা হবে এবং উৎসবের সময়ে তার ফল ভুগবেন সাধারণ মানুষ। শহরে যে শব্দবাজি মজুত হচ্ছে, পুলিশের এই দাবিতে সিলমোহর দিয়েছেন বাজি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারাও।

লালবাজার সূত্রের খবর, ২০১৩ সালেও এমনই পরিস্থিতিতে পড়েছিল পুলিশ। সে বারও ৯০ ডেসিবেলের বিজ্ঞপ্তি জারি করতে দেরি হওয়ায় শহরে আটকানো যায়নি নিষিদ্ধ বাজির অনুপ্রবেশ। যার ফল ভুগতে হয়েছিল বাসিন্দাদের। কালীপুজোর রাতে তাণ্ডব চালিয়েছিল শব্দদৈত্য।

এ বারেও সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি হবে বলে মনে করছে পুলিশ।

আলিপুরে সেই দেড় হাজার কেজি শব্দবাজি আটক করার পর শহরে আর শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়নি!

অন্য বিষয়গুলি:

police fire crackers lalbazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy