মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বঞ্চনার অভিযোগ ওঁদের দীর্ঘদিনের। কারও এলাকায় টাকার অভাবে রাস্তার কাজ এগোয়নি, কোথাও জলপ্রকল্পে অনুদানের টাকা বকেয়া রেখে দিয়েছে নবান্ন। কারও এলাকায় আবার সাংসদ তহবিলের প্রকল্প নিয়ে জেলাশাসক ঢিলেমি করছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু ওঁরা এখন আর বিরোধী নন! পুরনো দল ছেড়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। শাসক দলে থেকে তো আর সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ মানায় না! তাই আগামী মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদ সফরে যাওয়ার আগেই স্থানীয় জেলা পরিষদ ও জেলায় তৃণমূলের দখল করা পুরসভাগুলির চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যানদের ডেকে পাঠানো হল কলকাতায়। তৃণমূল ভবনে বসিয়ে তাঁদের স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হল, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময় তাঁকে এই সব বঞ্চনার উপাখ্যান শুনিয়ে অস্বস্তিতে ফেলা যাবে না! সবুর করলে তাঁদের সব আবদারই রাখা হবে। তবে দফায় দফায়, এক সঙ্গে নয়।
মুর্শিদাবাদের পঞ্চায়েত ও পুরসভার ওই নেতাদের শনিবার বৈঠকে ডেকেছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং দলের দুই যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারী। সূত্রের মতে, পুরপ্রধানদের বলে দেওয়া হয়েছে, ‘‘অভাব অভিযোগের কথা ভুলে যান। বরং ভাল ভাবে চলুন। ভাল করে কাজ করুন।’’ নবাগতদের এ-ও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, জেলার পুরনো তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তাঁরা যেন সমন্বয় করে চলেন।
এ বার বিধানসভা ভোটে প্রায় সব জেলাতেই বিপুল জয় পেলেও মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের সাফল্য ছিল সীমিত। ভোটের পর রাজ্যের প্রায় সব জেলায় মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকের জন্য গেলেও এত দিন তাই মুর্শিদাবাদে যাননি। দলেরই একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, মুখ্যমন্ত্রী কার্যত পণ করেছিলেন যে রাজনৈতিক ভাবে মুর্শিদাবাদ দখলে না এলে সেখানে প্রশাসনিক বৈঠকে যাবেন না। গত চার মাসে তৃণমূলের নেতাদের আপ্রাণ চেষ্টায় এখন গোটা মুর্শিদাবাদই তৃণমূলের দখলে। গত পঞ্চায়েত ভোটে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে তৃণমূল মাত্র একটি আসনে জিতলেও বাম-কংগ্রেস থেকে রাতারাতি ৪২ জনকে ভাঙিয়ে এনে গোটা জেলা পরিষদই দলের দখলে এনেছেন শুভেন্দু। একই ভাবে একটি ওয়ার্ডে না জিতেও বাম-কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের ভাঙিয়ে এনে জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ, বেলডাঙা এবং বহরমপুর পুরসভা দখল করেছেন অভিষেক-শুভেন্দুরা। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় কান্দি এবং মুর্শিদাবাদ পুরসভাও দখলে আনার চেষ্টা হচ্ছে।
তৃণমূলের সমস্যা হল, কংগ্রেস-সিপিএম থেকে ভাঙিয়ে আনা জেলা পরিষদ ও পুরসভার এই সদস্যরা এত দিন ধরে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলতেই অভ্যস্ত ছিলেন। সেই অভিযোগের সত্যতা যে রয়েছে, তা ঘরোয়া আলোচনায় তৃণমূলের নেতারাও স্বীকার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে ওঁরা যদি বলে বসেন, গত পাঁচ বছর ধরে রাজ্যের থেকে কোনও আর্থিক সাহায্য মেলেনি, তা হলে অস্বস্তিতে পড়তে হবে। সেটা এড়াতেই এ দিন পুরপ্রধানদের পাখি পড়ানোর মতো বোঝানো হয়েছে! এক পুরপ্রধানের কথায়, ‘‘ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, রাজ্যের আর্থিক অবস্থা তো জানেন। তাই এক সঙ্গে সব চেয়ে বসবেন না। প্রতি মাসে একটা করে প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দেবেন। চেষ্টা করব সবই পুষিয়ে দিতে।’’
মুর্শিদাবাদের পাঁচ পুরপ্রধানকে পুরমন্ত্রী এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, পুজোর আগেই তাঁদের এলাকায় জল কর বন্ধ করে দিতে হবে। কারণ, মমতা ভোট প্রচারেই ঘোষণা করেছিলেন যে, পয়সা দিয়ে জল কেনার দিন শেষ। তৃণমূলে ক্ষমতায় এলে জলকর নেওয়া হবে না।
প্রশাসনিক বৈঠক করতে মুখ্যমন্ত্রী মুর্শিদাবাদ সফরে গেলে কংগ্রেস বা বামেদের বিরোধ-বিক্ষোভের মুখে পড়বেন না তো? প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রের খবর, কোনও রকম বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি নেবেন না তাঁরা। বিরোধীরা জানেন, ভোটের পর প্রথম বার মুর্শিদাবাদ সফরে এসে প্রকল্প ঘোষণায় কল্পতরু হয়ে উঠতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই মুর্শিদাবাদের উন্নয়নের জন্য কয়েক প্রস্ত দাবি নিয়ে রবিবারই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখতে চলেছে জেলা কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী কোনও ঘোষণা করার আগেই তাঁর ওপর চাপ তৈরির জন্যই এমন কৌশল নিতে চলেছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy