Advertisement
E-Paper

চমকহীন কমিটিতেও প্রশ্ন, দুই চব্বিশের জন্য কমিশন

রাজ্য সম্পাদক পদে ফিরেছেন মহম্মদ সেলিমই। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগের বছরে সিপিএমের এই চমকহীন রাজ্য কমিটির তালিকার গভীরে থেকে গেল সমস্যার চোরাস্রোত!

সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে ফের সম্পাদক নির্বাচিত মহম্মদ সেলিম। ডানকুনিতে।

সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে ফের সম্পাদক নির্বাচিত মহম্মদ সেলিম। ডানকুনিতে। —নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৪:৪৯
Share
Save

আপাতদৃষ্টিতে তেমন কোনও চমক নেই। বয়স-নীতি মেনে এবং অন্যান্য কারণে নাম নেই এক ঝাঁক পুরনো নেতার। তাঁদের জায়গায় নতুন এসেছেন অন্য এক দল। রাজ্য সম্পাদক পদে ফিরেছেন মহম্মদ সেলিমই। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগের বছরে সিপিএমের এই চমকহীন রাজ্য কমিটির তালিকার গভীরে থেকে গেল সমস্যার চোরাস্রোত!

হুগলি জেলার ডানকুনিতে সিপিএমের ২৭তম রাজ্য সম্মেলনের শেষ দিনে তৈরি হয়েছে ৮০ জনের রাজ্য কমিটি। দলের মধ্যে ভোটাভুটিতে পরাজিত হয়ে সম্প্রতি যিনি উত্তর ২৪ পরগনার জেলা কমিটিতে জায়গা পাননি, সেই মৃণাল চক্রবর্তীকে রেখে দেওয়া হয়েছে রাজ্য কমিটিতে! ‘পরাজিত ও প্রাক্তন’ জেলা সম্পাদককে রাজ্য কমিটিতে রেখে দিয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট যেমন গোটা ঘটনাপর্বে নির্দিষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছে, তারই পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার অভ্যন্তরীণ বিবাদে ‘উচ্চ পর্যায়ের কমিশন’ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোটে এবং সংগঠনে দল যখন বেহাল, সেই সময়ে জেলার বিরোধ নিয়ে এমন কমিশন বসানো সিপিএমের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চর্চার রসদ জোগাচ্ছে। সূত্রের খবর, নতুন রাজ্য কমিটি থেকে নতুন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হলে সেখান থেকেই কমিশনের সদস্যদের বেছে নেওয়া হবে। তবে দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত, কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে শ্রীদীপ ভট্টাচার্যকে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তরুণ, সর্বক্ষণের কর্মী চার জনকে কমিটিতে না-রাখায় ‘বিদ্রোহ’ করে জেলা কমিটি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন ১৭ জন। সেই বিবাদের ফয়সালা এখনও হয়নি। আর উত্তর ২৪ পরগনায় জেলা নেতৃত্বের পেশ করা গোটা প্যানেল ভোটাভুটিতে জিতে এলেও একমাত্র তৎকাকীন জেলা সম্পাদক মৃণাল যে ভাবে হেরে গিয়েছেন, তার নেপথ্যে ‘ষড়যন্ত্রে’র তত্ত্ব ঘুরছে দলের একাংশে। এই প্রেক্ষিতেই কমিশন করে গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সিপিএম।

রাজ্য কমিটি থেকে এ বার বাদ গিয়েছেন অমিয় পাত্র, অমল হালদার, সুশান্ত ঘোষ, জীবেশ সরকার, তমসের আলি, বদরুদ্দোজা খান, সুখেন্দু পানিগ্রাহীরা। দলের মধ্যে আচরণ সংক্রান্ত কিছু অভিযোগ ওঠায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছিল প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্তকে। এ বার রাজ্য কমিটি থেকে ছেঁটে ফেলার পাশাপাশি তাঁকে পার্টি কংগ্রেসের জন্য প্রতিনিধির তালিকাতেও রাখা হয়নি। প্রাক্তন সাংসদ বদরুদ্দোজা, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে রাজ্য দফতরের সম্পাদকের দায়িত্ব সামলে আসা সুখেন্দু স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিয়েছেন। কমিটি থেকে বাদ গিয়েও কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে পদাধিকার বলে রাজ্য কমিটিতে থাকতে পারছেন অঞ্জু কর। বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য করে রাখা হয়েছে বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, রবীন দেব, অমিয় ও জীবেশকে। একই ভাবে রাজ্যের একমাত্র বাম সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য ও উত্তরবঙ্গে সিপিএমের সব চেয়ে পরিচিত মুখ অশোক ভট্টাচার্যকে বিশেষ আমন্ত্রিত তালিকায় রাখা হল না কেন, সেই প্রশ্ন তুলছে দলের একাংশই।

সব মিলিয়ে ১১ জনের অন্তর্ভুক্তি হয়েছে রাজ্য কমিটিতে। তাঁদের মধ্যে মহিলা সমিতির জাহানারা খান, সিটুর ইন্দ্রজিৎ ঘোষেরা অমন্ত্রিত থেকে পূর্ণ সদস্যে উন্নীত হয়েছেন, নতুন জেলা সম্পাদক তিন জন ঢুকেছেন পদাধিকারে। তার বাইরে একেবারে নতুন জায়গা পেয়েছেন তীর্থঙ্কর রায়, শুকুল সিকদার, কেনিজ রবিউল ফতিমা (আলেয়া), গৌতম ঘোষ ও শান্তনু দে। কিন্তু দল যখন তরুণ প্রজন্মে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছে, সেই সময়ে যুব ও ছাত্র ফ্রন্টের নতুন কেউ রাজ্য কমিটিতে জায়গা পেলেন না কেন, সেই প্রশ্নে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। সিপিএমের একটি সূত্রে দাবি, পরে ছাত্র ও যুবদের কয়েক জনকে আমন্ত্রিত সদস্য করা হতে পারে।

দ্বিতীয় বার রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ার পরে সেলিম অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমাদের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করতে চেয়েছি, বাইরের লড়াইয়ের আগে ঘর সাজাতে চেয়েছি। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আমরা ভবিষ্যতের দল গড়তে চাইছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

CPIM Left Mohammed Salim

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}