রাজ্যে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ‘টাকা চাওয়া’ নিয়ে দলের নেতাদের প্রকাশ্য বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমন অভিযোগ পেলে নিজে ব্যবস্থা নেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্ন সভাঘরে শিল্প সংক্রান্ত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, রাজ্যে শিল্প-সম্ভাবনার সামনে কোনও বাধা বরদাস্ত করা হবে না। স্থানীয় স্তরে কোনও নেতা বাধা দিলে সরাসরি তাঁকেই জানাতে বললেন। সরকারি দফতরে যাঁরা ‘টাকা চান’, তাঁদের উদ্দেশেও দিলেন সতর্কবার্তা। এই পরিপ্রেক্ষিতেই দলের শ্রমিক সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্ব থেকে শীঘ্রই কয়েক জনকে সরিয়ে দিচ্ছেন বলেও ঘোষণা করলেন।
প্রায় সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব সহযোগে শেষ হয়েছে ‘বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন-২০২৫’ (বিজিবিএস)। তার পরে এক মাসও কাটেনি। শিল্প নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রশাসনিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবারের সেই বৈঠক থেকেই সতর্ক করলেন ‘টাকা তোলা’ নিয়ে।
আরও পড়ুন:
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে বলব, অযথা বাড়াবাড়ি করবেন না। দরকারি কোনও বিষয় হলে সরাসরি কথা বলে বিষয়টা মেটাতে হবে। কারও ব্যক্তিগত চাহিদার জন্য কিছু করা যাবে না।’’ এটুকু বলেই মুখ্যমন্ত্রী থামেননি। এর পরে আরও বলেন, ‘‘স্থানীয় কোনও নেতা বলল, না না হবে না, (সে ক্ষেত্রে) আমাদের কাছে অভিযোগ করুন। আমরা দেখে নেব।’’ তবে একই সঙ্গে, বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার কথাও বলেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, যাঁদের নিয়োগ করা হচ্ছে, সংস্থা তাঁদের আচমকা ছাঁটাই যেন না-করে। শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে বা শ্রমিকদের আস্থা অর্জন করে যা করার করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের বিভিন্ন শিল্পনগরীতে নিজের দলের শ্রমিক সংগঠনের কার্যকলাপে যে তিনি খুশি নন, তারও প্রতিফলন সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর কথায় পাওয়া গিয়েছে। নবান্ন সভাঘরের বৈঠকে হাজির শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে সম্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দুর্গাপুরের আইএনটিটিইউসি সভাপতিকে আমি বদলাব। হলদিয়াতেও বদলাব। আর আপাতত গ্রাফাইটের প্রেসিডেন্ট আমি ঋতব্রতকে করতে বলেছি।’’ পরে আরও বেশ কিছু জায়গায় শ্রমিক সংগঠনে কিছু বদল তিনি আনবেন বলে মলয়কে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন।
তবে দলের শ্রমিক সংগঠনকে শুধু নয়, প্রশাসনের একাংশকেও ‘টাকা চাওয়া’ বন্ধ করার বার্তা মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন। জমির নামপত্তন এবং চরিত্র বদল যে বিভাগ থেকে হয়, সেখানে ‘‘টাকা ছাড়া কাজ এক পা এগোয় না’’ বলে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘টাকা চাওয়া আগের চেয়ে কমেছে। কিন্তু এখনও হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে।’’ কোনও স্বাধীন সংস্থাকে দিয়ে এই সব সরকারি দফতরের উপরে নজরদারি চালাতে হবে বলে মুখ্যসচিব-সহ অন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘পুলিশের অন্য অনেক কাজ থাকে। আর আমাদের যে সব এজেন্সি রয়েছে, তারা খুব একটা কাজের বলে আমি মনে করি না। তাই স্বাধীন সংস্থা চাই। তারা মাঝেমধ্যেই পরিদর্শন চালাবে।’’