Advertisement
০৯ জানুয়ারি ২০২৫

অশান্ত ত্রিপুরা, শ্বশুরবাড়ি যাত্রা বাতিল খড়দহের বধূর

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)-এর প্রতিবাদে জ্বলছে অসম। অস্থির পরিস্থিতি ত্রিপুরাতেও। সেখানে একের পর এক রাস্তা বন্‌ধের পাশাপাশি নেমেছে সেনা, চলছে কার্ফু।

নবদম্পতি: বিয়ের পরে জগজ্জ্যোতি গোস্বামী এবং রিম ভট্টাচার্য।

নবদম্পতি: বিয়ের পরে জগজ্জ্যোতি গোস্বামী এবং রিম ভট্টাচার্য।

শান্তনু ঘোষ
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২১
Share: Save:

‘শুনেছিলাম পাহাড়ি এলাকায় শ্বশুরবাড়ি। খুব উৎসাহ ছিল সেই শৈল শহর দেখার। যা গোলমাল চলছে তাতে জানি না কবে যাব?’—সদ্য বিবাহিত তরুণীর মনে এটাই এখন একমাত্র চিন্তা!

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)-এর প্রতিবাদে জ্বলছে অসম। অস্থির পরিস্থিতি ত্রিপুরাতেও। রণক্ষেত্রের এই পরিস্থিতিতে খড়দহের বাসিন্দা ওই তরুণী কবে ত্রিপুরার ঊনকোটির শ্বশুরবাড়ি যেতে পারবেন, তা ঘিরেই তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।

গত বুধবার খড়দহের বাসিন্দা রিম ভট্টাচার্যের বিয়ে হয় ত্রিপুরার উনকোটি কৈলাশহরের জগজ্জ্যোতি গোস্বামীর সঙ্গে। ছেলের বিয়ে উপলক্ষে গত ৯ ডিসেম্বর রাতেই কয়েক জন আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে কলকাতায় চলে এসেছিলেন মা চন্দনাদেবী। পরের দিন ১০ ডিসেম্বর এসেছেন আরও কয়েক জন আত্মীয়। সব মিলিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী জগজ্জ্যোতির বিয়েতে ত্রিপুরা থেকে কলকাতায় এসেছেন জনা ১৫ আত্মীয়। পরিকল্পনা ছিল, ১৪ ডিসেম্বর অর্থাৎ শনিবার খড়দহেই ছোটখাটো একটি বৌভাতের অনুষ্ঠান করে নতুন বৌমা আর ছেলেকে নিয়ে শৈল শহরের পথে পাড়ি জমাবেন সরকারি চাকুরে চন্দনাদেবী।

তবে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি দেখে এখন চন্দনাদেবী বলছেন, ‘‘না, দরকার নেই। ছেলে-বৌমাকে এমন অবস্থার মধ্যে নিয়ে যাব না। ওরা কলকাতাতেই থাক। পরে সব শান্ত হলে তখন যাবে।’’ কিন্তু মন মানছে না রিম ও জগজ্জ্যোতির। তরুণীর দু’চোখে নতুন শহর, নতুন পরিবেশ দেখার স্বপ্ন। আর জগজ্জ্যোতি চাইছেন, ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে রিমের পরিচয় করিয়ে দিতে। ‘‘বন্ধুরা তো বিয়েতে আসতে পারেননি। ওঁদের কথা দিয়েছিলাম বিয়ে মিটতেই লম্বা ছুটি নিয়ে ত্রিপুরা যাব। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় বিয়ের ছবিও ওঁদের পাঠাতে পারছি না’’— বলছেন জগজ্জ্যোতি।

বছর কয়েক আগে বেঙ্গালুরু থেকে ফিরে এখন কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকেন জগজ্জ্যোতি। খড়দহ এলাকাতেই রয়েছে তাঁর ছোট্ট ফ্ল্যাট। বিয়ের পরে নতুন বৌ আর পরিবারের সকলকে নিয়ে সেখানেই রয়েছেন ওই যুবক। শুক্রবার দুপুরে আবাসনের ছাদে আত্মীয়-পরিজনদের ঘরোয়া আড্ডাতেও বারবার করে ঘুরে ফিরে আসছিল নতুন দম্পতির ত্রিপুরা যেতে না পারার কথা। ছেলে আর বৌমাকে নিয়ে ফিরতে পারছেন না বলে, ঊনকোটিতে বৌভাতের অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছেন চন্দনাদেবী। তিনি বলছেন, ‘‘একমাত্র ছেলের বিয়ে উপলক্ষে আত্মীয়, পরিচিত, সহকর্মীদের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু কী আর করা যাবে। সদ্য বিয়ে হওয়া মেয়েটা নতুন জায়গায় গিয়েই সেনার টহল, আগুন জ্বলা দেখলে তো ভয় পাবে।’’

কৈলাশহরের যে পাড়ায় জগজ্জ্যোতিদের বাড়ি, সেখানকার কয়েক জন যুবকেরও দিন দু’য়েকের মধ্যে বিয়ে হয়েছে। যুবকের বড় মেসোমশাই পৃথ্বীশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ফোনে খবর পেলাম, পুলিশি নিরাপত্তায় ওই যুবকেরা বিয়ে করে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। সত্যি খুব আতঙ্কের বিষয়। আমিও কিছু দিন টালিগঞ্জে মেয়ের বাড়িতে থেকে পরে ত্রিপুরা ফিরব।’’

কিন্তু বাকি আত্মীয়েরা?

চন্দনাদেবী জানান, পরিকল্পনা ছিল আগামী ১৬ ডিসেম্বর তাঁরা পাড়ি দেবেন ত্রিপুরা। বিমানে আগরতলা নেমে সেখান থেকে ধর্মনগরের ট্রেন ধরে গিয়ে নামবেন কুমারঘাট। সেখান থেকে সড়ক পথে ২৩ কিমি দূরের ঊনকোটি কৈলাশহরে পৌঁছবেন। গত বুধবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের হস্তক্ষেপে ত্রিপুরা-আগরতলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সেই ভরসায় চন্দনাদেবীরা আপাতত ফিরবেন বলেই ঠিক করেছেন। যদিও তাঁর আশঙ্কা, ‘‘জানি না, কাল আবার কী হবে! তাই ছেলে-বৌমা থাক।’’

অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতে শাশুড়ি ফিরে যান, চান না রিম। তাঁর কথায়, ‘‘মা তো ওখানে একা থাকেন। এই অবস্থায় একা গিয়ে কী করবেন, সেই ভেবেই দুশ্চিন্তা হচ্ছে!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Citizenship Amendment Bill Marriage Tripura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy