চন্দ্রকেতুগড় থেকে মেলা নিদর্শন। সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
সেই আলেকজান্ডারের সময়ে বিদ্যাধরী নদীর ধারে রাজত্ব করতেন এক রাজা। যাঁর রাজধানী ছিল গমগমে এক নগরী। বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবেও সে নগরীর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। অনেকে বলেন, সেই রাজার নামই চন্দ্রকেতু। তার রাজধানীর নাম ছিল চন্দ্রকেতুগড়।
কিন্তু চন্দ্রকেতু ও তাঁর রাজত্বের পাথুরে প্রমাণ এখনও মেলেনি। কলকাতা থেকে যশোর রোড ধরে বারাসত হয়ে টাকি রোড ধরে যেতে হয় দেগঙ্গা। সেখানেই বেড়াচাঁপা মোড় থেকে বাঁ দিকে পৃথীবা রোডের পাশে খনা মিহিরের ঢিপি। বেড়াচাঁপা মোড় থেকে ডান দিকে হাড়োয়া রোড ধরে কিছুটা গেলেই চন্দ্রকেতুগড়। ইতিহাসবিদদের অনুমান, সেখানেই মাটির নীচে চাপা পড়ে রয়েছে আড়াই হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস। চন্দ্রকেতুগড়ে ঢোকার মুখের জায়গাটির নামও সিং দরজা। ইতিহাসবিদের ধারণা, এখানেই ছিল গড়ে ঢোকার সিংহ দরজাটি। সেখানে এখন একটি কাঠ চেরাইয়ের কারখানা হয়ে গিয়েছে। সেটা পার হলেই ছোট টিলার মতো উঁচু ঢিপি। পাশে বেশ কিছু বাড়ি আর আগাছা। এলাকার মানুষ জানালেন, সেই বাড়ি তৈরি বা পুকুর কাটতে গিয়েই বেরিয়ে পড়ে অনেক মূর্তি। খোঁজ নেই সে সবের। কিছু ভেঙেচুরে গিয়েছে। ২০১২ সালে অমর্ত্য সেন চন্দ্রকেতুগড়ে গিয়ে বলেছিলেন, এর ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। অবিলম্বে এখানে খনন কার্য প্রয়োজন।
এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাঁদের পাশে এ বার দাঁড়াতে চলেছে রাজ্য সরকার। চন্দ্রকেতুগড়ের রক্ষণাবেক্ষণের দাবি, যথাযথ খনন, সেই ইতিহাস উদ্ধারের দাবি জানিয়ে সম্প্রতি সংসদে সরব হন বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার। তিনি বলেন, ‘‘এমন ঐতিহ্যবাহী জায়গা শুধু দেখভালের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। অথচ বিশ্বের মানুষ এ সব নির্দশন দেখতে এখানে আসতে পারতেন। এলাকার অর্থনীতিও বদলে যেত।’’ গত বছর অগস্টে ওই এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র ও সংগ্রহশালা তৈরির প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানান কাকলিদেবী। এর পরে সম্প্রতি রাজ্য পর্যটন দফতর ও জেলা প্রশাসনের একটি দল চন্দ্রকেতুগড় ঘুরে দেখেন। সমস্ত কাজ দেখভালের জন্য উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গড়া হচ্ছে। জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘সমস্তটাই পর্যটন দফতর দেখছে। ইতিহাসবিদ, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ওই কমিটি গড়া হবে।’’
এলাকার কিছু বাসিন্দা এখান থেকে পাওয়া প্রত্নসামগ্রী আগলে রেখেছেন। তাঁরা ওই ব্যক্তিগত সংগ্রহ সংগ্রহশালার হাতে তুলে দিতে রাজি। যেমন অশীতিপর বৃদ্ধ দিলীপকুমার মৈতে বিভিন্ন আকারের অসংখ্য টেরাকোটার গণেশ মূর্তি, ধাতব মুদ্রা, পাত্র, সিলমোহর, প্রাণির জীবাশ্ম সংগ্রহ করেছেন দীর্ঘ কাল ধরে। তাঁর ছেলে দীপন মৈতে বলেন, ‘‘অনেক কষ্টে সংগ্রহ করে এ সব বাঁচিয়ে রেখেছেন বাবা। আশা, এখানে সরকারের সংগ্রহশালা হবে। দেখা যাক, এ বার সে আশা পূর্ণ হয় কি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy