ফাইল চিত্র।
পাল্টানো গ্রাম বা মফসসল জীবনের পটভূমিতে এমন একটি ব্যবস্থা হতেও পারে মুশকিল আসান। হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরিষেবা, ঘরে ঘরে বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রকল্প নিয়ে সচেতনতায় যুক্ত কর্মীরা তো আছেনই। তা সত্ত্বেও স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনে নানা রোগ বা সঙ্কটে পরিচর্যা নিয়ে বিস্তর ‘ফাঁক’-ও রয়ে গিয়েছে। এই ফাঁক ভরাট করার চেষ্টা থেকেই গ্রামে মেয়েদের কর্মসংস্থানের একটা দরজাও খুলতে পারে বলে মনে করছেন সরকারি কর্তারা। সেই ভাবনা থেকেই বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় গ্রামীণ জীবিকা মিশন প্রকল্পে মহিলাদের মধ্যে এক শ্রেণির নতুন কর্মচারী গড়ে তোলায় হাত দিয়েছেন সরকারি কর্তারা।
রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণ দফতরের সচিব স্মিতা পান্ডে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নামাঙ্কিত আনন্দধারা (গ্রামীণ কর্মসংস্থান কর্মসূচি) প্রকল্পে সেবাসখী বলে এক নতুন ধরনের ক্যাডার তৈরি করতে চাইছি! তাঁরা বাড়ি, বাড়ি গিয়ে বয়স্ক বা অশক্ত রোগীদের সাহচর্য দেবে, যত্ন করবে। নবজাতক ও মায়েদের দেখভাল কিংবা হাসপাতাল ফেরত কাঁচা শরীরের রোগীদেরও চাঙ্গা করতে চেষ্টা করবে।” আপাতত বারুইপুর এবং রাজারহাট, দুই ২৪ পরগনার দু’টি ব্লকে সেবাসখী প্রকল্পের প্রাথমিক পর্ব (পাইলট) শুরু হয়েছে। এক বছরের মধ্যে প্রকল্পটি গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে বলে জানাচ্ছেন স্মিতা।
রাজ্য গ্রামীণ জীবিকা মিশনের উপদেষ্টা নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, রাজ্যে ৩৩৪৩টি পঞ্চায়েতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সমবায় সমিতি বা সঙ্ঘ সেবাসখীদের নিয়োগ করবে বা বেতন ঠিক করবে। সাধারণত এক একটি সমিতির নিয়ন্ত্রণে ২০০-২৫০টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী থাকে। রাজ্য জুড়ে কম-বেশি ১০ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। তাদের আওতায় প্রায় এক কোটি মহিলা রয়েছেন। বছর খানেকের মধ্যে রাজ্যের অন্তত ১০০টি ব্লকে সেবাসখীদের নিয়োগের জন্য আটঘাট বেঁধে এগোচ্ছে গ্রামোন্নয়ণ ও পঞ্চায়েত দফতর। নীলাঞ্জন বলেন, “সরকারি আধিকারিকদের নজরদারিতেই প্রকল্পটি চলবে। গ্রামেও একান্নবর্তী পরিবারে ভাঙন বা কোভিড-কালের ক্ষতের জেরে পরিচর্যাকারীদের প্রয়োজন বেড়েছে।”
সরকারি সূত্রের খবর, এই প্রকল্পে তিনটি সংস্থা রাজ্যকে সহায়তা করছে। চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী, বার্ধক্য বিজ্ঞান বিশারদ ইন্দ্রাণী চক্রবর্তী এবং তাঁদের দু'টি সংস্থার সঙ্গে শিশুকল্যাণের কাজে যুক্ত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিশেষজ্ঞরাও সেবাসখীদের প্রশিক্ষণের পাঠ্যক্রম তৈরি করেছেন। পাঁচ সপ্তাহ ধরে তালিম পর্ব চলছে। ইন্দ্রাণী বলছিলেন, “আমরা যোগব্যায়াম, ফিজিয়োথেরাপি শিখিয়ে বয়স্কদের জীবনের মান উন্নয়ণ, সাহচর্য দেওয়ার শিক্ষা ছাড়াও শয্যাশায়ী অবস্থায় রোগীকে সাফসুতরো বেডসোরমুক্ত রাখা, এক কথায় রোগীর ডিগনিটি বা মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার দিকটাই শেখাচ্ছি।”
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ণ দফতরের সচিবের ব্যাখ্যা, “হাসপাতালের নার্স, আয়া বা স্বাস্থ্য দফতরের আশাকর্মীদের সঙ্গে সেবাসখীদের তফাৎ থাকবে। আমরা স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেই। সেবাসখীদের সমাজের মধ্যে থেকে উঠে আসা পরিচর্যাকারী (কমিউনিটি কেয়ারগিভার) হিসাবে দেখা হোক। ব্যবসায়িক মানসিকতায় জোর না-দিয়ে সেবা হিসেবেই তাঁরা কাজ করবেন।” স্মিতা বলেন, “সেবাসখীরা তালিম নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার শংসাপত্র পাচ্ছেন। স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। স্বাস্থ্য দফতরের থেকেও সেবাসখীদের শংসাপত্র দিলে তাঁদের মর্যাদা আর একটু বাড়বে। বিষয়টি নিয়ে এখন আলোচনা চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy