ভিড়ে ঠাসা হাওড়া স্টেশন। নিজস্ব চিত্র।
বালিতে থাকি। মেচেদার রামতারকের একটি স্কুলে পড়াই। ট্রেনে যাতায়াত করি। ক্লাস বন্ধ হলেও আর পাঁচটা কাজের জন্য স্কুল খোলা। সোমবার স্কুলে গিয়েছিলাম বাসে। স্কুল থেকে বেরোই বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ। প্রথমে মেচেদা স্টেশন থেকে ডাউন মেদিনীপুর লোকাল ধরে হাওড়ায় আসি। এই ট্রেনটায় বিশেষ ভিড় হয় না। আজও ছিল না। হাওড়া স্টেশনে পৌঁছই ৫টা ৪০ মিনিট নাগাদ। ট্রেনটা ঢুকেছিল ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে।
এ বার মেন লাইনের ট্রেনে বালিতে পৌঁছতে হবে। মেন লাইনের ট্রেন মোটামুটি ভাবে ১ থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মধ্যে দেয়। হাওড়া স্টেশনে এমনিতেই যাত্রী সমাগম থাকে। ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত মোটামুটি ভাবে অন্য দিনের মতোই আসা গেল। তার পরেই আসল পরিস্থিতি মালুম হল। ৫টা ৪৭ মিনিটের ব্যান্ডেল লোকাল ধরব ভেবেছিলাম। ৩ অথবা ৪ নম্বর প্ল্যাঠফর্মে ওই ট্রেনটা দিয়েছিল। সেটা ধরার জন্য এগোতে গিয়ে কার্যত জনস্রোতে পড়লাম। এত দিনের চেনা স্টেশনটা কেমন অচেনা লাগতে শুরু করল।
এত গিজগিজে ভিড়, এক কদমও এগোতে পারছি না। ভিড়ের ঠেলায় উল্টে পিছিয়ে পড়ছি। পড়ে যাওয়ার উপক্রম। সামনে বয়স্ক এক মহিলা পড়ে যাচ্ছিলেন। এক জন কোনওক্রমে ধরলেন। পড়ে গেলে নির্ঘাৎ পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি। প্রবল উৎকণ্ঠা হচ্ছিল। যে দিকে ট্রেন দাঁড়িয়ে, আমি সে দিকে বেঁকতেই পারিনি। ভিড় ধাক্কা দিতে দিতে আমাকে সোজা ঠেলে নিয়ে গেল ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে। ব্যাগটা কোনও রকমে চেপে ধরেছিলাম। চিৎকার, বিশৃঙ্খলায় ট্রেনের ঘোষণা শোনার উপায় ছিল না। ইলেকট্রনিক বোর্ডেও গন্তব্য স্টেশন লেখা ছিল না। করোনার বিধিনিষেধ তখন মাথায় উঠেছে। সবারই চিন্তা শুধু বাড়ি ফেরার। পাছে শেষ ট্রেন বেরিয়ে যায়! বলাবলি চলছে, আজ ‘গ্যালপিং’ হবে না কোনও ট্রেন। সব স্টেশনে দাঁড়াবে। এই বিশ্বাসে কোনও রকমে প্ল্যাটফর্মে ঢোকার চেষ্টা করছেন অনেকে। পরিস্থিতি দেখে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে দাঁড়ালাম। এই প্ল্যাটফর্মে একটা ট্রেন দাঁড়িয়েছিল। কোথায় যাবে ঘোষণা হয়নি।
খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। ভাবছিলাম, ট্যাক্সি ভাড়া করে বাড়ি ফিরব। এমন সময় দু’এক জন বললেন, ট্রেনটা বর্ধমান লোকাল। শুনেই মহিলা কামরায় উঠে পড়লাম। বসার জায়গাও পেলাম। তার পরে
হু হু করে লোক উঠতে থাকল স্রোতের মতো। দৌড়ঝাঁপ করে আসায় অনেকে রীতিমতো অসুস্থ, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। গিজগিজে ভিড় হয়ে গেল। রীতিমতো অস্বস্তি হচ্ছিল। শীতের সন্ধ্যাতেও ঘেমেনেয়ে একসা অবস্থা।
দু’জন পুরুষও উঠে পড়লেন আমাদের কামরায়। পরিস্থিতি দেখে কেউ কিছু বলেননি। ভিড়ের চোটে যাত্রীদের কারও চাদর হারিয়ে গিয়েছে, কারও ব্যাগ। বালিতে নেমে হাঁফ ছাড়লাম। তখনও রাত ১০টা পর্যন্ত ট্রেন চলার ঘোষণার কথা সম্ভবত অনেকে জানেন না। দেখলাম, বালি স্টেশনে প্রচুর লোক ঠেলাঠেলি করে ট্রেনটা ধরার চেষ্টা করছেন। বাদুড়ঝোলা ট্রেন আবার চলতে শুরু করল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy