অপরাধ এবং অপরাধীর প্রশ্নে ফের ভারতের নজর যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশ নেপালে। পঞ্জাবের গায়ক সিধু মুসেওয়ালার খুনের মামলার অভিযুক্তদের পশ্চিমবঙ্গের ভারত-নেপাল সীমান্ত থেকে গ্রেফতারের পরে, দু’দেশের সীমান্তে নতুন করে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে। দুই দেশের ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’-এর সাম্প্রতিক বৈঠকে নেওয়া নিরাপত্তা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই শনিবার কালিম্পং থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে সন্দেহভাজন আইএসআই জঙ্গি পির মহম্মদকে। তদন্তকারীদের দাবি, তারও নেপাল যোগ থাকতে পারে।
সরকারি সূত্রের খবর, করোনা পরবর্তীকালে, দুই দেশের সীমান্তকে কেন্দ্র করে অপরাধী বা বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যেরা নতুন ভাবে আত্মগোপনের ঘাঁটি তৈরির চেষ্টা করছে বলে বিভিন্ন সরকারি স্তরে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের জেরে, নেপালের দরজা বিদেশিদের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। গত বছরের শেষ দিকে তা খুলতে, নতুন করে নেপালে ‘ঘাঁটি’ বানাতে দুষ্কৃতীদের একাংশ সক্রিয় হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত ১৫-১৬ জুন দিল্লিতে দুই দেশের ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’-এর বৈঠক হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সচিব স্তরের অফিসারেরা তাতে যোগ দেন। তার আগে, মে মাসে নেপালের লুম্বিনিতে নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে সরকারি স্তরে বৈঠকে আইনি প্রক্রিয়া, বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি, সীমান্ত অপরাধ কমানো, সীমান্ত পরিকাঠামো বৃদ্ধির প্রসঙ্গ গুরুত্ব পাচ্ছে।
ভারতের সঙ্গে নেপালের ১,৭৫১ কিমি দীর্ঘ সীমান্তে নজর রাখে ‘সশস্ত্র সীমা বল’ (এসএসবি)। পশ্চিমবঙ্গের ভারত-নেপাল সীমান্ত এলাকায় কেএলও-র সক্রিয়তা বৃদ্ধি, বিভিন্ন পথে পাচারের অভিযোগ উঠতে থাকায় সরকারি আধিকারিকদের একাংশ মনে করছেন, অপরাধীরা ফের দুই দেশের সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় ‘ঘাঁটি’ গড়তে শুরু করেছে। রাজ্য পুলিশের উত্তরবঙ্গের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘দুষ্কৃতী, বিশেষ করে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কাছে নেপাল ‘ঘাঁটি’ হিসাবে বরাবর পছন্দের। গত কয়েক বছরে তা কমে গিয়েছিল। নতুন করে তা আবার তৈরি হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।’’
কেএলও, আলফা, আইএসআই, সর্বোপরি দাউদ ইব্রাহিমের ‘নেপাল নেটওয়ার্ক’-এর হদিস ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলির হাতে রয়েছে। ২০১৩ সালে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের ইয়াসিন ভাটকল গ্রেফতার হওয়ার পরে, নেপালে জঙ্গিদের গতিবিধি সংক্রান্ত বহু তথ্য সামনে আসে। নেপালের ঝাপা, ইলাম জেলায় কেএলও-প্রধান জীবন সিংহের স্ত্রী, মেয়েরা বছরের পরে বছর ছিলেন বলে শোনা যায়। গোয়েন্দাদের দাবি, সম্প্রতি সিধু মুসেওয়ালা খুনে অভিযুক্তেরা পোখরার একটি হোটেলেও গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে মূলত পূর্ব নেপাল জুড়ে ভারতীয় সন্দেহভাজন, পলাতকদের একাংশের ঘাঁটির খোঁজখবর করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।