রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার এবং রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকের সঙ্গে আলোচনা করতে চায় জাতীয় মহিলা কমিশন। —ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালিকাণ্ডে জাতীয় মহিলা কমিশনের রিপোর্টকে ‘হাতিয়ার’ করে বিরোধীদের পাল্টা বিঁধতে শুরু করেছে তৃণমূল। ঘটনাচক্রে, শাসকদলের বুধবারের বিবৃতির পরেই বৃহস্পতিবার জাতীয় মহিলা কমিশন আবার সন্দেশখালি যাওয়ার কথা জানাল। আগামী সপ্তাহেই কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সেখানে যাবে বলে জানানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার এবং রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিকের সঙ্গেও কথা বলতে চায় তারা।
গত সপ্তাহে দফায় দফায় অশান্তির ঘটনা ঘটেছিল সন্দেশখালিতে। সেই সময়েই স্থানীয় মহিলাদের একাংশ দাবি করেছিলেন, দিনের পর দিন তাঁদের উপর যৌন নির্যাতন হয়েছে। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতেই গত সোমবার সন্দেশখালি গিয়েছিল রাজ্যের মহিলা কমিশন। স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে রাজ্যের কমিশনের প্রতিনিধিরা জানিয়েছিলেন, এমন কোনও মহিলাকে পাওয়া যায়নি যিনি প্রকাশ্যে শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন। এর পরেই সন্দেশখালিতে ওঠা যৌন নিগ্রহের অভিযোগের তদন্ত করতে রাজ্য পুলিশের তরফে ১০ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়। মঙ্গলবার দিনভর গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রাথমিক ভাবে ‘ধর্ষিতা’ কারও দেখা পাননি না পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের সদস্যেরা। এর পরেই মঙ্গলবার দুপুরে সন্দেশখালি যান জাতীয় মহিলা কমিশনের দু’জন প্রতিনিধি। সন্দেশখালির হালদারপাড়া, পুকুরপাড়া ও লস্করপাড়ার মহিলাদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন।
সন্দেশখালি নিয়ে জাতীয় মহিলা কমিশনের ‘রিপোর্ট’ প্রকাশ্যে না এলেও তৃণমূল দাবি করেছে, তারাও এলাকা ঘুরে ধর্ষণ বা মহিলাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনও অভিযোগ পাননি। ঘটনাচক্রে, এর পরেই বৃহস্পতিবার জাতীয় মহিলা কমিশনের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলের পোস্টে বলা হল, সন্দেশখালি থেকে যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে মহিলাদের উপর অত্যাচারের একটি ভয়ঙ্কর প্রবণতা প্রকাশ্যে এসেছে। নির্যাতিতাদের যাতে দ্রুত নিরাপত্তা দেওয়া হয়, তার দাবিও জানিয়েছে জাতীয় কমিশন। কমিশনের কথায়, ‘‘সন্দেশখালি নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের চুপ থাকাই অনেক কিছু বলে দিচ্ছে। কমিশন এ ব্যাপারে আরও গভীরে যেতে চায়। কমিশন পূর্ণ তদন্ত এবং দোষীদের কড়া শাস্তি চায়।’’
সোমবার রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় সন্দেশখালিতে নির্যাতিতাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। মহিলাদের অভিযোগ শুনে তদন্ত হবে ও পুলিশের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হবে বলে জানান তিনি। গ্রামের মহিলারা তাঁর হাতে একটি গণস্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র তুলে দেন। সন্দেশখালি মাঝেরপাড়া, পুকুরপাড়ার মহিলাদের অভিযোগ গভীর রাতে শিবপ্রসাদ হাজরা তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ডাকত এবং দীর্ঘ ক্ষণ বসিয়ে রাখত বলে অভিযোগ। না গেলে স্বামী, সন্তানের উপরে অত্যাচার চলত বলে দাবি। পুলিশের কাছে সুবিচার মিলত না বলেও অভিযোগ। শিবপ্রসাদের বিরুদ্ধে ইচ্ছে মতো জমি জায়গা দখল করার অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু প্রত্যক্ষ ভাবে নির্যাতিতার বয়ান তিনিও পাননি বলে জানান লীনা।
রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন ফিরে যাওয়ার পরে ডিআইজি (বারাসত রেঞ্জ) সুমিত কুমার সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, মহিলা পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে ১০ সদস্যর একটি তদন্তকারী দল তৈরি হবে। তদন্তকারী দলে ছিলেন ডিআইজি (সিআইডি) সোমা দাস মিত্র, ডিআইজি (এসটিএফ) দেবস্মিতা দাস, সুন্দরবন পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (সদর) চারু শর্মা-সহ দশ জন। সন্দেশখালির বিভিন্ন পাড়ায় গিয়ে মহিলাদের অভিযোগ শোনেন তাঁরা। মঙ্গলবার দুপুরে ৮ নম্বর পুকুর পাড়ায় মহিলা তদন্তকারীরা যৌন নিগ্রহের বিষয়ে প্রশ্ন করার সময় এক মহিলা বলেন, ‘‘শিবপ্রসাদ মেয়েদের গভীর রাতে ডেকে নিয়ে যেত দলীয় কার্যালয়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখত। না যেতে চাইলে স্বামী, সন্তানদের মারধর করত। এটাও তো নির্যাতন!’’ মহিলা পুলিশ কর্তারা আশ্বাস দিলেও নির্দিষ্ট করে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন— এমন কথা কেউ বলেননি বলে দাবি প্রশাসনের।
কিন্তু বিষয়টি নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে শোরগোল অব্যাহত। বুধবার রাজ্য পুলিশের তরফেও বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে যে, সন্দেশখালিকাণ্ডে অসত্য তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। স্থানীয় মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতনের কোনও অভিযোগ এখনও পর্যন্ত জমা পড়েনি। তবে এখনও পর্যন্ত যে সব অভিযোগ মিলেছে, তার যথাযথ তদন্ত এবং তার ভিত্তিতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে বলে জানানো হয়েছে রাজ্য পুলিশের তরফে। জাতীয় মহিলা কমিশন জানিয়েছে, তারা এ ব্যাপারে রাজ্য পুলিশের ডিজির সঙ্গেও কথা বলতে চায়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করতে চায় মুখ্যসচিবের সঙ্গেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy