(বাঁ দিকে) পুরুলিয়ার কাশীপুরে হুদুড় দুর্গার আরাধনা এবং (ডান দিকে) মেরিভিউ চা বাগানের এই মণ্ডপেই হবে পুজো। —নিজস্ব চিত্র।
দুই জায়গার সঙ্গেই যোগ রয়েছে অসুরদের। তবে এই বছর দুর্গাপুজোর ক্ষেত্রে পুরুলিয়া থেকে একটু আলাদা নকশালবাড়ি।
পুরাণ মতে, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন দেবী দুর্গা। পুরুলিয়ার কাশীপুরের ‘শিকার দিশম খেরোয়াল বীর লাকচার গাঁওতা’-র কিন্তু বিশ্বাস, আর্য-অনার্যের লড়াইয়ে ছলনার আশ্রয়ে দুর্গা তাঁদের আদিপুরুষ হুদুড় দুর্গা অর্থাৎ মহিষাসুরকে হত্যা করেছিলেন। তাই তাঁরা গত ১২ বছর ধরে নবমীর দিনে কাশীপুরের ভালাগোড়া ময়দানে হুদুড় দুর্গার মূর্তি তৈরি করে, তাঁর পায়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছেন। ঝাড়খণ্ড থেকে অসুর সম্প্রদায়ের মানুষজন এসেও কয়েক বার সেখানে যোগ দিয়েছেন।
‘শিকার দিশম খেরোয়াল বীর লাকচার গাঁওতা’র মুখপাত্র অজিত হেমব্রমের মতে, ‘‘অনার্য সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষ বা আদিপুরুষ হচ্ছেন মহিষাসুর বা হুদুড় দুর্গা। দুর্গাপুজোয় অশুভ শক্তি হিসেবে তাঁকে কল্পনা করা হয়। কিন্তু এক জন আর্য নারীর ছলনার আশ্রয়ে তাঁকে হত্যা করার বিষয়টি আজও অনার্যরা মেনে নিতে পারেননি। অনার্যরা তো নারীকে আক্রমণ করে না।’’ তিনি জানান, পুরুলিয়া মফস্সল থানার মাকড়াবেড়া ফুটবল ময়দানেও ‘রাকাব পরগনা মূলনিবাসী সংস্কৃতি সংহতি’র উদ্যোগে গত কয়েক বছর ধরে হুদুড় দুর্গার স্মরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে।
কথিত রয়েছে, হুদুড় দুর্গার মৃত্যুর পরে নারীর ছদ্মবেশে অনার্য সম্প্রদায়ের মানুষজন পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেই প্রথা মেনে এখনও জনজাতি সম্প্রদায়ের পুরুষরা পুজোর দিনগুলিতে নারীর পোশাকে হায় হায় করতে করতে এলাকা ঘোরেন। যা দাঁশাই নাচ নামে পরিচিত।
শিলিগুড়ি মহকুমার নকশালবাড়িতে মেরিভিউ চা বাগানে ছবিটা এ বারে অন্যরকম। সেখানেও বাস করেন অসুর সমাজের অনেকে। প্রবীণদের মধ্যে এখনও দুর্গাপুজো নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। শারদোৎসবে চারপাশ যখন আনন্দে মেতে থাকে, এই চা বাগানের ছোটরা মনখারাপ করে বসে থাকত। তাদের আনন্দ দিতেই এ বার প্রথম মেরিভিউ চা বাগানে দুর্গাপুজো হচ্ছে। সে পুজোর উদ্যোক্তাদের একাংশ অসুর সমাজেরই লোকজন।
প্রবীণেরা এখনও শোক ধরে রাখতে চান বলে, তাঁদের এড়িয়ে দুর্গাপুজোর অনুষ্ঠানে নাচার জন্য গোপনে তালিম নিচ্ছে অসুর সমাজেরই কয়েকটি মেয়ে। সেটাই এই পুজোর চমক বলে জানাচ্ছেন নাচের প্রশিক্ষক ‘অসুর’ সমাজের সুমো। তাঁর কথায়, ‘‘অসুর সমাজের একাংশ দুর্গাকে মহিষাসুরের হত্যাকারী হিসাবেই দেখে। অসুরের জন্য রয়েছে বিশেষ শ্রদ্ধা। তবে এখন নতুন প্রজন্ম বন্ধুদের সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে প্রতিমা দেখতে চায়। তাই এলাকায় দুর্গাপুজোর আয়োজন।’’
পুজো কমিটির সম্পাদক অসুর সমাজের প্রবীণ সদস্য পেয়ারা বেন জানালেন, পুজোর বাজেট প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রবীণ চা শ্রমিক উদ্বোধন করবেন। পেয়ারা বলেন, ‘‘পাড়ায় এত দিন ঢাকের আওয়াজ দূর থেকেই ভেসে আসত। মনখারাপ করে বসে থাকত ছেলেমেয়েরা। এ বার তারাই পুজোয় নাচবে, গাইবে।’’ পুজো কমিটির সভাপতি বাগান ম্যানেজার কৌশিক দাস বলেন, ‘‘আদিবাসী সমাজের সংস্কৃতিই প্রাধান্য পাবে অনুষ্ঠানে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy