ফাইল চিত্র।
পরের পর ঘূর্ণিঝড় কেন ইদানীং বাংলার উপকূলে হানা দিচ্ছে, তা নিয়ে বিস্তর কাটাছেঁড়া চলছে। জলবায়ু বদলের চক্করে পশ্চিমবঙ্গ কী ভাবে ভুগতে পারে, তা নিয়েও আছে হাজারো মতামত। এ বার কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ‘হ্যাজ়ার্ড অ্যাটলাস’ বা দুর্বিপাক-মানচিত্রেও তার প্রতিফলন ঘটল। ওই রিপোর্ট বা অ্যাটলাস অনুযায়ী বঙ্গে জলবায়ু বদলের জোরালো ইঙ্গিত তো আছেই, সেই সঙ্গে বাড়ছে ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, অতিবর্ষণ, বজ্রপাত এবং খরার বিপদও। এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন রকমের বিপদের কথা শুনিয়েছে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগ।
পুণেতে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের জলবায়ু গবেষণা শাখার তৈরি করা ওই রিপোর্টে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে বিপন্ন তালিকায় যেমন রাজ্যের তিনটি উপকূলবর্তী জেলা রয়েছে, তেমনই গাঙ্গেয় বঙ্গের দুটি জেলায় খরার প্রকোপের আশঙ্কাও রয়েছে। রিপোর্টে উঠে এসেছে বর্ষায় রাজ্যের বেশির ভাগ জেলায় অতিবর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। তাতে হচ্ছে বন্যাও।
জলবায়ু গবেষণা শাখার প্রধান পুলক গুহঠাকুরতার নেতৃত্বে এক দল আবহবিজ্ঞানী দেশের হ্যাজ়ার্ড অ্যাটলাস তৈরি করেছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ১৪৭তম প্রতিষ্ঠা দিবসে তা প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। অ্যাটলাসে প্রকাশিত ১৯৬১ থেকে ২০২০ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করলে ঘূর্ণিঝড়ের বিপদের তালিকায় রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর। ওই তিন জেলায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কাও প্রবল। ১২ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে ওই তিনটি জেলায়।
২০১৯ সালের বুলবুল, ২০২০ সালের আমপান, ২০২১ সালের ফণী— পরের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছে বাংলায়। ক্ষয়ক্ষতিও প্রচুর হয়েছে। শুধু ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস নয়, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে যে-প্রবল বৃষ্টি হয়েছে, তাতেও ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। অ্যাটলাসের তথ্য দেখাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে, এমন এলাকা হিসেবে তিনটি জেলাকে চিহ্নিত করা হলেও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রবল বর্ষণের কবলে পড়ার তালিকায় আছে গাঙ্গেয় বঙ্গের প্রায় সব জেলা।
খরাও বঙ্গের পিছু ছাড়ছে না। খরা বললে সাধারণত রুক্ষ, শুষ্ক এলাকার কথাই মনে পড়ে। কিন্তু গাঙ্গেয় ভূমিতে অবস্থিত নদিয়াতেও যে খরা হতে পারে, তা মনে করিয়ে দিয়েছে অ্যাটলাস। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের তালিকায় খরার ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রায় বিপদগ্রস্তের তালিকায় রয়েছে নদিয়া ও বীরভূম জেলা। পুলকবাবু জানান, ২০১৩ থেকে তাঁরা খরার উপরে নজর রাখছেন। আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত একটি সূচকের মাধ্যমে ১০০ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে তাঁরা যে-মানচিত্র তৈরি করেছেন, তাতেই ওই দুই জেলা ঢুকে পড়েছে।
আবহবিদেরা বলছেন, খরার পিছনে বৃষ্টির আকালের ভূমিকা রয়েছে। তবে অতিবৃষ্টিও যে বিপদ ডাকতে পারে, তার প্রমাণ মিলেছে গত বছরেই। বর্ষায় দফায় দফায় অতিবৃষ্টি হয়েছে এবং তার জেরে নদী উপচে বানভাসি হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, হাওড়ার মতো জেলা। আবার শহরাঞ্চলেও আচমকা প্রবল বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। অতিবৃষ্টির কথাও তুলে ধরেছে অ্যাটলাস। ১৯০১ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও মুর্শিদাবাদ বাদে রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই বর্ষার চার মাসে গড়ে ১৭ থেকে ৩৪ দিন ভারী, অতিভারী কিংবা প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে।
পুলকবাবু জানান, আশির দশকের আগে বর্ষাকালে এত দিন ধরে ভারী বা অতিভারী বৃষ্টি হত না। আশির দশক থেকে ধীরে ধীরে এই বৃষ্টির প্রকোপ বাড়তে দেখা গিয়েছে। জলবায়ু বদলের ক্ষেত্রে পরিবেশবিজ্ঞানী এবং আবহবিদেরা বারে বারেই বৃষ্টির চরিত্র বদলের কথা বলেছেন। তাঁরা জানান, বৃষ্টির স্বাভাবিক ছন্দ বদলে যাবে। বাড়বে অল্প সময়ে অতিবৃষ্টির প্রকোপ। মৌসম ভবনের রিপোর্টেও সেই ইঙ্গিতই স্পষ্ট।
ঝড়, বৃষ্টি, খরাতেই বঙ্গের বিপদ কাটছে না। বাংলার মাথায় বজ্রাঘাতের হিসেবও কষেছেন পুণের আবহবিজ্ঞানীরা। বজ্রপাতের ক্ষেত্রে উপরের দিকে রয়েছে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার। দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং উত্তর দিনাজপুরে বছরে গড়ে ৩৫ থেকে ৫০ দিন ‘থান্ডারস্টর্ম’ বা বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতের কথাও ধরা পড়েছে তাঁদের গবেষণায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy