অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শনে বেরিয়ে কোনও অসুস্থ শিশু চোখে পড়লেই দাঁড়িয়ে পড়েন। খোঁজ নেন, চিকিৎসার জন্য কিছু প্রয়োজন কি না। দুঃস্থ পরিবারের শিশুদের জন্য ওষুধের দোকানে ‘খাতা’ রয়েছে তাঁর। একই রকম খাতা রয়েছে মুদির দোকানেও। পূর্ব বর্ধমানের রায়না ২ ব্লকের বহু শিশুকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে বর্ধমান, কলকাতা তো বটেই, বেঙ্গালুরু, ভেলোরেও ছুটেছেন। অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের সুপারভাইজ়ার নন্দিতা পালচৌধুরী স্থানীয় বহু শিশুর পরিবারের কাছে ‘মুশকিল আসান’।
আড়াই দশক আগে, নদিয়ার কৃষ্ণনগর থেকে কর্মসূত্রে মাধবডিহি আসেন নন্দিতা। কয়েক বছর পরে বিয়ে হয় স্থানীয় স্কুলশিক্ষকের সঙ্গে। বছর ষোলো আগে তাঁদের ছেলে হয়। ছেলে যখন বছর দুয়েকের, যকৃতের সমস্যা ধরা পড়ে। নন্দিতা জানান, ভুল চিকিৎসায় সেই সমস্যা জটিল হলে, ভেলোরে নিয়ে যান। তখন থেকে সেখানে চিকিৎসা চলছে তার। ছেলেকে সেখানেই রেখেছেন। নন্দিতা বলেন, “সে সময়ে অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে মা-বাবার অসহায়তা টের পাই।”
তার পরে গত কয়েক বছরে মাধবডিহির বহু শিশুর চিকিৎসা করিয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব নন্দিতা। অমর বন্ধু নামে এক অভিভাবকের কথায়, “আমার দশ বছরের ছেলে জন্মের পর থেকে কিডনির সমস্যায় ভুগছে। আমার পক্ষে বেঙ্গালুরু গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব ছিল না। উনি আমাকে নিয়ে যান। ট্রেনের টিকিটের টাকাও নেননি।” মাধবডিহির আলমপুরের গিয়াসুদ্দিন শেখ বলেন, “আমার এক আত্মীয়ের থেকে ছেলের অসুস্থতার কথা শুনেছিলেন। নিজের খরচেই দু’বার আমার ছেলেকে বেঙ্গালুরু নিয়ে গিয়েছেন। এখন ছেলে সুস্থ আছে।”
আলমপুরের মুদির দোকানদার শেখ মিরাজ বলেন, “অসুস্থ শিশুদের জন্য ওষুধের দোকানে ওঁর খাতা রয়েছে। আমার কাছ থেকেও কয়েকটি দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েরা প্রতিদিন নানা খাবার নিয়ে যায়। পরে উনি টাকা মেটান।” নন্দিতা জানান, ভেলোরে সারা বছরের জন্য একটি ঘর ভাড়া নিয়ে রেখেছেন তিনি। চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক শিশু ও তাদের পরিবার সেখানে থাকে।
নন্দিতার স্বামী উদয়কুমার নায়েক জানান, স্ত্রীর বেতনের অধিকাংশই এই কাজে খরচ হয়। তিনি বলেন, “দু’জনে আয় করি। এক জনের বেতন সামাজিক কাজে ব্যবহার করতে চাই।” বিডিও (রায়না ২) অনিশা যশের কুর্নিশ, “ওঁর কাজ দেখে আমরাও অনুপ্রাণিত হই।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)