E-Paper

কুন্তলের বিরুদ্ধে ইডির চার্জশিটে নাম মণীশের, রয়েছে পার্থের প্রাক্তন ওএসডি সুকান্তের নামও

মণীশের সঙ্গে আছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর দফতরে নিযুক্ত ডব্লিউবিসিএস অফিসার সুকান্ত আচার্যের নামও। তবে মণীশের দাবি, তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। আর সুকান্তের দাবি, এ-সবই ‘গুজব’।

Bureaucrats

আইএএস মণীশ জৈন, কুন্তল ঘোষ এবং ডব্লিউবিসিএস অফিসার সুকান্ত আচার্য । ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৫৬
Share
Save

রাজ্য জুড়ে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির সময় থেকেই তাঁর দফতরের বিভিন্ন স্তরের আমলাদের নামে কানাঘুষো চলছিল। আদালত সূত্রের খবর, দুর্নীতির মামলায় তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুব নেতা কুন্তল ঘোষের বিরুদ্ধে সম্প্রতি ইডি-র পেশ করা চার্জশিটে নাম রয়েছে শিক্ষাসচিব, আইএএস মণীশ জৈনের। সেই সঙ্গে আছে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর দফতরে নিযুক্ত ডব্লিউবিসিএস অফিসার সুকান্ত আচার্যের নামও। তবে শিক্ষাসচিবের দাবি, তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। আর সুকান্তের দাবি, এ-সবই ‘গুজব’।

বাঁকা পথে নিয়োগ কাণ্ডে পার্থ ছাড়াও শিক্ষাকর্তা, তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ী মিলিয়ে ইতিমধ্যে আধ ডজনেরও বেশি অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছেন। তবে বিভিন্ন সরকারি উচ্চপদস্থ আধিকারিককে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে এর আগে কখনও সরাসরি অভিযোগ ওঠেনি। আগে মণীশকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। কলকাতা হাই কোর্টের গড়ে দেওয়া তদন্ত কমিটির প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগেরও মুখোমুখি হয়েছিলেন মণীশ। তিনি লিখিত বয়ান দিয়েছিলেন বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর। এই মামলায় ইডি-র মতো কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার কোনও চার্জশিটে শিক্ষাসচিবের নাম এই প্রথম উল্লেখ করা হল।

কুন্তলের বিরুদ্ধে বিচার ভবনে সিবিআই (পিএমএলএ) বিশেষ আদালতে সম্প্রতি ১০৪ পাতার সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট পেশ করেছে ইডি। সেই চার্জশিটের ৭৫ নম্বর পাতায় ইডি সরাসরি অভিযোগ করেছে, শিক্ষা ক্ষেত্রে পাকা চাকরির আশ্বাস দিয়ে আলাদা ভাবে ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করা হত। আর সেটা করা হত শুধু টাকা নেওয়ার অছিলায়। সেই ইন্টারভিউয়ের আয়োজন করা হত পার্থ, মণীশ, সুকান্ত, অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে। অভিযোগ, মূলত তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থের নির্দেশেই অযোগ্য প্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করা হত।

চার্জশিটে তাঁর নামোল্লেখের প্রসঙ্গে শিক্ষাসচিব মণীশ সোমবার বলেন, ‘‘আমার কাছে এমন খবর খুবই শকিং (বেদনাবহ)। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না।’’

নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ তুলে ‘গ্রুপ সি’ বা তৃতীয় শ্রেণির স্কুলকর্মী নিয়োগ কাণ্ডে পার্থের ওএসডি প্রবীরের নাম আগেই উল্লেখ করা হয়েছে সিবিআইয়ের চার্জশিটে। প্রবীরকে একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। ইডি ও সিবিআই দুই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার তরফেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বিসিএস অফিসার সুকান্তকে। সেই পর্বে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেছিলেন সুকান্ত। এ দিন যোগাযোগ করা হলে সুকান্ত বলেন, ‘‘চার্জশিটের কপি আপনি পড়েছেন? আমাকে ইডি থেকে কখনও এমন কিছু জিজ্ঞাসাই করা হয়নি। গত এক বছরে অনেক গুজব ঘুরে বেড়াতে দেখেছি।’’

তদন্তকারীদের দাবি, হেফাজতে থাকাকালীন জেরার মুখে কুন্তল জানান, টাকার বিনিময়ে বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজের অনুমোদন দেওয়ার দুর্নীতিতেও পার্থ ও মণীশ জড়িত। পার্থের নির্দেশেই মণীশ সব ব্যবস্থা করতেন। শুধু শিক্ষা দফতরের অফিসে নয়, তদন্ত সংস্থা সূত্রের দাবি, নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সুকান্ত, প্রবীর ও কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর পার্থ সরকার ওরফে ভজার মাধ্যমে পার্থের কাছে পাঠানো হত বলে লিখিত বয়ানে দাবি করেছেন কুন্তল। বার বার চেষ্টা করেও এ দিন পার্থ সরকারের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।

ইডি-র কাছে কুন্তলের আরও দাবি, ৩২৫ জন অযোগ্য প্রার্থীর চাকরি বাবদ বেসরকারি কলেজ সংগঠনের তৎকালীন সভাপতি তাপস মণ্ডলের কাছ থেকে নেওয়া তিন কোটি ২৫ লক্ষ টাকার মধ্যে কমিশন বাবদ ২৫ লক্ষ টাকা নিজের কাছে রেখেছিলেন কুন্তল। বাকি তিন কোটি টাকা তাপস-ঘনিষ্ঠ গোপাল দলপতি মারফত মন্ত্রী পার্থের কাছে পৌঁছে দেন তিনি। গোপাল তাঁকে জানিয়েছিলেন,সুকান্ত, ভজা ও মানিক সরকার নামে পার্থের নাকতলার অফিসের এক ব্যক্তির মাধ্যমে টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

চার্জশিটে তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৭-১৮ সালে সিটি সেন্টার২-এ একটি রেস্তরাঁয় প্রবীরের হাতে নগদ ৪৫ লক্ষ টাকা তুলে দেওয়া হয়েছিল বলে বয়ানে জানান কুন্তল। মানিককে নগদ দেড় কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। তদন্তকারীদের জেরার মুখে কুন্তলের আরও দাবি, প্রবীর ও মানিকের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের সময় গোপাল তাঁর সঙ্গে ছিলেন। মানিকের সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। গোপালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি নিয়োগ দুর্নীতিতে কোনও আর্থিক লেনদেনের সময়ে ছিলাম না। কুন্তল মিথ্যা বয়ান দিচ্ছেন।’’

এক পদস্থ ইডি-কর্তা জানান, টাকা লেনদেনের সূত্রে মন্ত্রী থেকে কিছু অফিসার যে নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন, বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণেক্রমশ সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কুন্তল শিক্ষায় ব্যাপক নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থের অন্যতম ‘মিডলম্যান’ বা দালাল ছিলেন বলে তদন্তে জানা গিয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Recruitment Scam Manish Jain Partha Chatterjee Enforcement Directorate

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।